পোস্টগুলি

মে, ২০২১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মেঘালয় সফরনামা

ছবি
মেঘালয় সফরনামা প্রারম্ভিকাঃ  মেঘালয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম ২০১৮ সালের ১৪ আগস্টে । গিয়েছিলাম তিন বন্ধু মিলে । ঢাকা থেকে ৬ দিন ৭ রাতের এই সফরে আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৮,৮৭০ বাংলাদেশী টাকা । যারা খুব কম খরচে মেঘালয় সফরে আগ্রহী, তাদের কথা মাথায় রেখে আজকের ব্লগে সেই ট্যুরের আদ্যোপান্ত তুলে ধরাই আমার উদ্দেশ্য ।  সেই সাথে আপনারাও পেয়ে যাবেন বাজেট মেইনটেন করে পার্ফেক্ট ট্রিপের একটা ডায়াগ্রাম । আমি নিজে অসংখ্য জায়গায় ঘাঁটাঘাঁটি করে যত তথ্য পেয়েছি, প্রাসঙ্গিক যত মানুষের সাথে কথা বলেছি, সেই সাথে নিজে ঘুরে এসে যে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছি, তার একটা সমন্বিত ফসল হলো আজকের এই লেখা । সুতরাং একটু দীর্ঘ হলেও কষ্ট করে পুরো ট্রিপের গল্পটা পড়ুন । আমি আশাবাদী এই একটা লেখাই মেঘালয় ট্রিপ নিয়ে আপনার জ্ঞানের পূর্ণতা এনে দেবে । মেঘালয়(Meghalaya):   মেঘ+আলয়= মেঘালয় । এখানে আলয় শব্দের অর্থ হলো আবাস । সুতরাং সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত সম্পূর্ণ এই শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় "মেঘের আবাস" । কি দারুণ একটা নাম তাইনা ? নামের মধ্য দিয়েই যেনো ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যটা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । ব্রিটিশরা মেঘালয়ের রু...

মেঘালয় সফরনামাঃ প্রথম পর্ব (ডাউকি)

ছবি
  উমগট রিভার সাসপেনশান ব্রীজ ট্রাভেলিং টু মেঘালয়ঃ (১৪/০৮/১৮) আমাদের এই ট্যুরের যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটগামী রাত সাড়ে নয়টার উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে । ট্রেনের টিকিট তিনদিন আগেই কেটে রাখা হয়েছিলো । শোভন চেয়ারের মূল্য পড়েছিলো জনপ্রতি ৩২০ টাকা । ট্রেনে চেপেই তিনজন আড্ডা দেয়া শুরু করে দিলাম । ঘুম-আড্ডা মিলিয়েই ট্রেন জার্নি শেষ হয়ে গেলো । ট্রেন যখন সিলেটে পৌঁছায় তখন ভোর সোয়া পাঁচটা বাজে ।  সিলেট রেলওয়ে স্টেশন  এই ট্রিপের প্রথম ভুলটা করলাম সিলেট স্টেশনে পৌঁছেই । ভাবলাম মাত্র ৫ টা বাজে, এতো তাড়াতাড়ি তামাবিল গিয়ে কি করবো । বর্ডার খুলবে ৯ টার সময় । সুতরাং অনেক সময় আছে ভেবে তিন বন্ধু স্টেশনের বেঞ্চে শুয়েই ল্যাটালাম কিছুক্ষণ । এরপরে ধীরে সুস্থে স্টেশন থেকে বের হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম । এরপরে জাফলং এর বাসে চেপে বসলাম । বাসভাড়া গেলো জনপ্রতি ৬০ টাকা । সিলেট - জাফলং রুটের ভেতরেই তামাবিল পয়েন্ট এর অবস্থান । বাস জার্নিতেই আমাদের আড়াই ঘণ্টার বেশি চলে গেলো ।  বর্ডার ক্রসঃ (১৫/০৮/১৮) বাস যখন তামাবিল পৌঁছায় তখন ঘড়িতে বাজে সকাল ৯ টা ৪৫ । টাইম দেখেই মেজাজ খ...

মেঘালয় সফরনামাঃ দ্বিতীয় পর্ব (ডাউকি)

ছবি
  স্নোনেংপেডেং এর সকাল সাসপেনশান ব্রীজে দাঁড়িয়ে স্নোনেংপেডেং এর ভোর দেখাঃ  (১৬/০৮/২০১৮) পরদিন একদম কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম । উঠে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না । গতরাতে যেখানে ক্যাম্পিং করতে দেখেছি, ভোরে উঠে দেখি সারারাতের প্রবল বর্ষণে সেখানে পানি উঠে গেছে আর সেই সাথে তাঁবুগুলোও উধাও । এই প্রথম ফিল করলাম যত্রতত্র ''ক্যাম্পিং করা যে দারুণ একটা আইডিয়া" এই কথাটা পুরোটা সত্য না । যারা নদীর তীরে ক্যাম্পিং করেছিলো, গতরাতে তাদের কতটা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে সেসব ভেবেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম আমি ।  তখনও টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছিলো । ছাতা মাথায় দিয়ে আমি একাই নেমে গেলাম নদীর তীরে । নদীর জলে পা ভিজিয়ে অদূরের পাহাড়গুলো দেখছিলাম । পাহাড়ের খাঁজে-খাঁজে মেঘেরা ভেসে বেড়াচ্ছে আর এই পাশে সাসপেনশন ব্রীজটা বাতাসে হালকা দুলছে । আমার দেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ সকাল ছিলো এটা । দেখে মনে হচ্ছিলো যেনো চারিদিকে সৌন্দর্যের আধার । মেঘালয় ট্রিপের অংশ হিসেবে এক রাত স্নোনেংপেডেং থাকাটা একদম অবশ্য কর্তব্য হিসেবে আমি রায় ঘোষণা করলাম সাথে সাথেই ।  সবাই মিলে সাসপেনশন ব্রীজের উপরে চলে গেল...

মেঘালয় সফরনামাঃ তৃতীয় পর্ব (চেরাপুঞ্জি)

ছবি
  ডাবল ডেকার লিভিং রুট ব্রীজ চেরাপুঞ্জি(Cherrapunji): চেরাপুঞ্জির আসল নাম হলো ''Sohra". বৃটিশরা এই শব্দটাকে উচ্চারণ করতো "Cherra". আর এভাবেই ধীরে ধীরে সোহরা হয়ে গেলো চেরাপুঞ্জি । চেরাপুঞ্জি শব্দের অর্থ হলো "ল্যাণ্ড অব অরেঞ্জ" । তবে চেরাপুঞ্জি নামটাকে আবার পরিবর্তিত করে সোহরা করা হয়েছে । আপনি ওখানে বেড়াতে গেলে ম্যাক্সিমাম জায়গাতেই দেখবেন লেখা রয়েছে সোহরা । যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এটা চেরাপুঞ্জি নামেই সমাধিক পরিচিত ।  অদ্যবধি চেরাপুঞ্জি ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে আর্দ্রতম স্থান । বর্তমানে এই তকমাটা দখল করে নিয়েছে মেঘালয়ের অন্তর্গত Mawsynram নামের একটা স্থান । তবুও মাসিক বা বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণের দিকে গোটা পৃথিবীতে চেরাপুঞ্জি এখনো সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে । বাট এজ এ ম্যাটার অব ফ্যাক্ট, এতদসত্ত্বেও এখানে মানুষের অন্যতম প্রধান কষ্টের একটা বিষয় হলো খাবার পানি সংগ্রহ করা । অনেক সময় একটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তাদের খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় । চেরাপুঞ্জিতে দেখার মতো যতোগুলো স্থান রয়েছে তার সবগুলোকে গুগল ম্যাপে বসিয়ে এডিট করে এখানে এটাচ করলাম । এতে করে জায়গাগুলোর মাঝে সা...

মেঘালয় সফরনামাঃ চতুর্থ পর্ব (চেরাপুঞ্জি)

ছবি
  মাউকডক ভ্যালী ভিউ পয়েন্ট  সকাল সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হোটেল থেকে বাইরে চলে এলাম । স্ট্রিট ফুড দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারলাম তিনজন মিলে । লুচি জাতীয় কি যেনো খেয়েছিলাম । বেশ ভালোই লেগেছিলো খেতে । খেয়ে দেয়ে সেখানে থেকে আমাদের ট্যুরিস্ট বাসে গিয়ে উঠলাম । বাস আট টার দিকে মুভ করা শুরু করলো চেরাপুঞ্জি অভিমুখে । গত পর্বে এড করা চেরাপুঞ্জির ম্যাপটা আরেকবার দেখুন । ওই ম্যাপে উল্লেখ করা ৮ থেকে ১৪ নম্বরের স্থানগুলো দেখবো আজকে ।  আমাদের ট্যুরিস্ট বাস মাউকডক ভ্যালী ভিউ পয়েন্ট (Mawkdok Dympep Valley View Point): (১৮/০৮/১৮) বাস চলা শুরু করলো । বাসে নানান বয়সী,পেশার মানুষ ছিলো । আমাদের পাশে একটা নেপালি পরিবার যাচ্ছিলো । পরিবারের কর্তা ব্যক্তিটি ইণ্ডিয়ান পুলিশে জব করার সুবাদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেঘালয়ে স্থায়ী হয়ে গেছেন । ভদ্রলোকের পিচ্চি একটা মেয়ে ছিলো । মেয়েটা এতো মিষ্টি যে খাতির না জমিয়ে পারলাম না । মেয়েটার নাম ছিলো Samvabie. কিছুক্ষণ লেগেছিলো আমার এই নাম উচ্চারণ শিখতেই । অল্পতেই বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো গোটা পরিবারের সাথেই । ট্রিপ শেষে পুলিশ ভদ্রলোক আমাদের নেপালে আমন্ত্রণ জানাল...