চতুর্থ পর্ব (সিমলা থেকে মানালির পথে)
সিমলা শহর - (২৬-০৩-১৮)
আজকে আমাদের মানলির উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা । নয়টার দিকে মানালির শেষ বাস । কিন্তু সিমলা শহরটা এতো ভালো লেগে গেছে যে একদিন অন্তত থেকে যেতে ইচ্ছে করছিলো । সেজন্য আমি কিছুটা দ্বিমনা হয়ে কাজ করছিলাম । ব্যপার টা এমন যে মানালি যেতে পারলেও ভালো, না পারলেও ভালো । আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী ৩১ তারিখ রাতে ঢাকায় ফেরার কথা । কিন্তু সিমলায় একদিন থাকলে ৩১ তারিখে ফিরতে পারবো না । যাহোক, অবশেষে সবাই ঘুম থেকে উঠে আট টার ভেতরেই ফ্রেশ হয়ে হোটেল থেকে চেক আউট করে বের হলাম । আমাদের রুমের লোকেশনটা আমার খুবই ভালো লেগেছে । লবি থেকে পুরো শহর দেখা যায় । সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ফটোসেশন করলাম চারজনে । এরপর হোটেল থেকে বেড়িয়ে এলাম রাস্তায় ।
| হোটেলের লবি থেকে |
| পাহাড়ের গায়ে গড়ে ওঠা বাড়িঘর (হোটেলের লবি থেকে ) |
পথে নেমেই মনে হলো গতকাল সিমলার সৌন্দর্য ঠিকমতো চোখে পড়েনি হয়তো । দিনের অগ্রভাগে সেই সিমলা নতুন করে আমাদের সামনে ধরা দিলো । প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি স্থাপনার আর্কিটেকচারাল ভিউ অন্যান্য সাধারণ শহরের চেয়ে আলাদা । আমার মনে হলো না আমি ভারতের কোন রাজ্যে আছি । বিভিন্ন বই-পুস্তকে ইউরোপের দেশগুলোর যে বর্ণনা পড়েছি, সিমলা দেখে আমার কেবলই সেইসব দেশের কথা মনে হচ্ছিলো । সবকিছুই ভালো লাগছিলো ওখানকার । প্রতিটি রাস্তা এতো পরিচ্ছন্ন যে অবাক হতে হয় সেসব দেখে । মানুষজনের আচার-ব্যবহারও অমায়িক । কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সুন্দরভাবে দেখিয়ে দেয় । পাহাড়ের গা ঘেঁষে একেবেকে চলা উঁচুনিচু পিচ ঢালা পাহাড়ি রাস্তাগুলো হেলিকপ্টারে থেকে দেখতে কেমন লাগবে সেটাই ভাবছিলাম আমি । তবে এই রাস্তাগুলোতে হাঁটা বেশ পরিশ্রমের । কারণ যখন উপরের দিকে উঠতে থাকি, তখন শুধু উঠেই যাই । সবমিলিয়ে I'm in love with Shimla।
| সিমলার পথে পথে এরকম করেই স্ট্রিট ল্যাম্প লাগানো |
![]() |
| সকালে বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে |
এভাবে রাস্তা ধরে ফটোসেশন করতে করতে বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে গেলাম । পথিমধ্যে দেখলাম সুন্দর পরিপাটি পোশাক পরে বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে । ভালো লাগলো সবকিছু দেখেই । হোটেল থেকে পদব্রজেই চলে গেলাম শহর সংলগ্ন ওল্ড বাসস্ট্যান্ডে । সেখান থেকে একটি বাসে চলে গেলাম নিউ বাসস্ট্যাণ্ডে । নিউ বাসস্ট্যাণ্ডে পৌঁছে আগে মানালির বাসের টিকিট সংগ্রহ করলাম, শেষ বাস সাড়ে নয়টায় । এরপর ওখানে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম । ব্রেকফাস্ট শেষে বাসে উঠে রওনা দিলাম ।
সিমলা থেকে মানালি অভিমুখে -
সিমলা থেকে মানালি যাবার পথটাও অন্যরকম । পাহাড়ি আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলো বাস । Linear মোশনের সাথে যুক্ত হয়েছিলো Rotating মোশন । সেই ছোটবেলা থেকে ট্রাভেলিং করি আমি । ট্রেনের চেয়ে বাস জার্নিই সবসময় বেশি ভালো লাগে আমার । সেই হিসেবে বাসে উঠার সুযোগ পেলেই খুশি হই আমি । কিন্তু এবার আর খুশি হতে পারলাম না । এই দুই মোশনের লব্ধি হিসেবে আমার ভেতরে Vomit মোশনের আবির্ভাব হচ্ছিলো ।
![]() |
| মানালি অভিমুখে |
সিমলা থেকে মানালি দিনের বেলায় যাবার উদ্দেশ্যই হলো পথের সৌন্দর্য উপভোগ করা । কিন্তু এই সমস্যার কারণে এনজয় করা লাটে উঠলো । বাসে উঠে অনেক কষ্টে ঘুমিয়ে গেলাম । আর কিছু দেখতেও ইচ্ছে করছিলো না শারীরিক সমস্যার কারণে । মাণ্ডি পেরিয়ে গিয়ে একটু ভালো লাগতে শুরু করেছিলো । চারিদিকের সৌন্দর্য শরীরকেও অনেকটা প্রশান্তি দিয়েছিলো । কিন্তু সমস্যা হলো একই দৃশ্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেখতে সত্যিই আর আহামরি ভালো লাগছিলো না ।
মানালির কাছে আসতে আসতে বরফে ঢাকা পাহাড় দৃষ্টিগোচর হতে লাগলো । এই ব্যপার টা আবার অন্যরকম ভালো লাগছিলো । মানালি যেতে যেতে কিছুটা টেনশড ছিলাম এজন্য যে এই সময়ে গুলাবাতে বরফ পাবো কিনা । কিন্তু মানালির কাছে গিয়ে বরফে আচ্ছাদিত পাহাড় দেখে সবার দুশ্চিন্তা লাঘব হলো । এভাবে প্রায় আট ঘণ্টার জার্নি শেষ করে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আমরা গিয়ে মানালি পৌঁছলাম ।
সত্যি বলতে মানালি শহরে গিয়ে সিমলার মতো ফিল পেলাম না । ঠিক তখন থেকেই কেমন একটা খুঁতখুঁতে ভাব কাজ করছিলো । কিছুটা জোর করেই নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করছিলাম যে না আসলে আমরা অনেক সুন্দর জায়গায় এসে পড়েছি । মানালিতে হোটেল এর রেট সিমলার চেয়েও কম। সেখানে চারজন ১,০০০ রুপীতে ৪৮ ঘণ্টার(দুই রাত) জন্য একটি রুম নিলাম । আমাদের এই হোটেলটি পছন্দ করার পেছনে কারণ ছিলো হোটেলের ঠিক সামনে দিয়ে বিয়াস নদী বয়ে গেছে । বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেই নদীর পানির প্রবাহ চোখে পড়ে । আর রাত হলে সেই প্রবাহের প্রচন্ড শো শো শব্দ অন্যরকম ভালো লাগা ধরিয়ে দেয় । শীতের রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি অনেক সময় অন্ধকার নদীর দিকে তাকিয়ে সেই শোঁ শোঁ শুনেছি । ভালো লাগতো । প্রসঙ্গত, মানালিতে তাপমাত্রা তখন শীত দশ ডিগ্রীর কাছাকাছি ।
| হোটেলের সামনে দিয়ে বয়ে চলা বিয়াস নদী |
![]() |
| হোটেলের বেলকুনি থেকে তোলা |
হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বের হলাম । আজকেও বাসে থাকায় সেরকম কিছু খাওয়া হয়নি । আমার আরেকটি স্পেশালিটি হলো ট্যুরে বের হলে ক্ষুধাও কম লাগে । যাহোক, এখন ঠিকই ক্ষুধা লেগে গেছে । হোটেল থেকে বের হয়েই খাবার সন্ধানে শহরের ভেতরে গেলাম । আমাদের হোটেল থেকে বিয়াস সেতু পেরিয়ে শহরে ঢুকতে চার মিনিট লাগে । চার মিনিটের দূরত্ব বলেই ভাড়া কম । যাহোক, শহরে ঢুকেই শুনলাম আজকে শহরের সকল খাবারের হোটেল বন্ধ । সেদিন হিন্দুদের কি যেনো উৎসব ছিলো যেজন্য সারা শহরের সকল হোটেল খাবার সরবরাহ করে মন্দিরে । সেখান থেকে প্রসাদ হিসেবে সেই খাবার সারা শহরের মানুষকে খাওয়ানো হয় বিনামূল্যে । ইসলামী দৃষ্টিকোণ এবং নিজের মানসিকতা বিবেচনায় সেই খাবার আমি খেতে অপারগ ছিলাম । কিন্তু আমার তিন বন্ধু দেখলাম সবার সাথে চটের উপর বসে গেছে । আমি বেশ বিপদে পড়ে গেলাম । লেগেছে ভাতের ক্ষুধা আবার এদিকে সব হোটেলও বন্ধ, খাবো কি ! সুতরাং আমি ভ্যারাইটি স্টোর থেকে হাবিজাবি কিনে খেলাম । অল্প একটু খেয়েই আর খেতে ইচ্ছে করছিলো না । এরপর শহরে চারজন মিলে ঘুরেফিরে হোটেলে ফিরে এলাম । হোটেলে এসেই অন্যান্য দিনের মতো ফোনের হটস্পট অন, ফেসবুকে ফটো শেয়ারিং, চ্যাটিং শুরু হলো । নিজেদের ভেতরে আড্ডা তো রয়েছেই । এরপরে ঘুম ।
খরচঃ
সিমলা ওল্ড বাসস্ট্যান্ড – নিউ বাসস্ট্যান্ড = ৭/-
সিমলা – মানালি (বাস) = ৩৭৫ /-
সিমলাতে ব্রেকফাস্ট = ৩০/-
মানালিতে দুইরাতের হোটেল ভাড়া = ২৫০/-
আমার রাতের হাবিজাবি খাওয়া = ২৫/-
মোট = ৬৮৭ /-






মানালিতে যে হোটেলে ছিলেন তার নাম কি ছিল, এবং লোকেশন টা জানালে ভাল হত।
উত্তরমুছুনমানালিঃ hotel kapoor
মুছুনসিমলাঃ Hotel city view
ভাই টয় ট্রেন এ কি সিট পাইছিলেন?? মানে সিট নাম্বার ছিলো?? নাকি বনগাঁ - হাওড়া এর মত?? দাড়াইয়া যাইতে হয়?
উত্তরমুছুনএতোদিনে তো ভুলেই গেলাম ভাই ...
মুছুন