কম খরচে কাশ্মীর-লাদাখ-মানালি ভ্রমণ

প্যাংগং লেক, লাদাখ 

প্রারম্ভিকা-

এটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের ফসল । বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পরে থেকেই এই রুট নিয়ে জানতে পারি এবং ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয় । কিন্তু সময় এবং সাধ্যের সমন্বয় সাধন করা খুবই দুষ্কর হয়ে পড়েছিলো আমার জন্য । আল্লাহর ইচ্ছায় অবশেষে সেই কাঙ্খিত সময়টি মিলেই গেলো ।

গত ২৮ মে'১৯ ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে সম্পূর্ণ রুট কাভার করে ফের ঢাকায় ফিরি ১৬ জুন'১৯ । মোট ১৯ দিনের এই সফরে আমাদের সর্বমোট খরচ হয়েছে ২০,০০০ বাংলাদেশী মুদ্রারও কিছু কম । আমাদের এক্স্যাক্ট রুট ছিলো -
ঢাকা>কলকাতা>দিল্লি>জম্মু>শ্রীনগর>কার্গিল>লেহ>মানালি>দিল্লি>কলকাতা>ঢাকা 

গুগল ম্যাপে আমাদের রুট 

পুরোটা একটা সাইকেল আর কি । দিল্লি থেকে এক পথে গিয়ে ফের অন্য পথে দিল্লিতেই ফেরা । দিল্লি থেকে ২৭৮ কিলোমিটার দূরবর্তী হরিয়ানা প্রদেশের একটি খুব পরিচিত জায়গা হলো আম্বালা । এই সাইকেলের এতোটুকু ছিলো কমন পয়েন্ট । বাকি পথগুলোর দূরত্ব, পরিচিতি, যাত্রা সহ বিস্তারিত পাবেন আমার লেখার ভেতরে ।


আমাদের পরিচয়ঃ 

এই ট্যুরের সদস্য ছিলাম আমরা মোট দুইজন। আমি ফাহিম; বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল ইয়ারের একজন শিক্ষার্থী । সঙ্গী হিসেবে ছিলো আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু - সুফল । চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে আনন্দময় করে তোলার জন্য যার ভূমিকা ছিলো ষোলো আণা । আমার ট্রাভেল মেট, যার প্রতি রয়েছে আমার অফুরান ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতাবোধ । যদিও এই ট্রিপে গিয়ে কারণে-অকারণে অনেক ঝগড়া হয়েছে, প্রচুর মুড সুইং হয়েছে... তবুও বলবো আর কেউ না জানুক, আমি তো খুব ভালোভাবেই জানি যে সুফল না থাকলে এই ট্রিপটা এক প্রকার অসম্ভবই ছিলো । ভয়াবহ লেভেলের পরিশ্রমী, মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং পজিটিভ একজন মানুষ ছেলেটা । পুরো ট্রিপের বর্ণনা জুড়েই খুঁঁজে পাওয়া যাবে তাকে । এজন্যই শুরুতে তার পরিচয় দিয়ে দিলাম ।

যাহোক, এটা ছিলো আমার চতুর্থবারের মতো ভারত ভ্রমণ । এর আগে সুফল সহ মোট চার বন্ধু মিলে ২০১৮ সালের ২২ মার্চ ১২ দিনের সফরে একবার সিমলা-মানালি ঘুরে এসেছি । তখনও সত্যি বলতে লাদাখের ব্যাপারে এতো বেশি ক্রেজ বা জানাশোনা ছিলো না । মানালিতে গিয়ে লাদাখের ব্যাপারে আরো স্পষ্টভাবে জানতে পারি । কিন্তু তখনো মানালি-লেহ রুট ওপেন হয়নি । তাই এক বুক আফসোস নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম । সেই আফসোসের পরম্পরায় এবার গেলাম বিখ্যাত এই ট্রান্স হিমালয়ান সাফারি কাভার করতে ।


কাশ্মীর পরিচিতিঃ

কাশ্মীরের ইতিহাসের কথা মনে হলেই রক্ত আর ধ্বংসের চিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে । ১৯২৫ সালে হরিসিং কাশ্মীরের রাজা হন । পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে তিনি নিজের রাজত্ব পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে ভারতের কাছে সাহায্য চান । তখনকার আইন অনুযায়ী সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বলে ভারত শুধুমাত্র কাশ্মীরের যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলো । বাকি সকল ক্ষেত্রে কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ছিলো । ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তীতে নানা কাহিনীর মধ্য দিয়ে সেই কাশ্মীর ভাগ হয়ে ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের অধীনে চলে যায় ।


** সমগ্র কাশ্মীরের মধ্যে ভারতের দখলে রয়েছে ৪৩ ভাগ । সেই অঞ্চলগুলো হলো - জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকা, লাদাখ ও সিয়াচেন হিমবাহ ।

**পাকিস্তানের দখলে রয়েছে ৩৭ ভাগ । অঞ্চলগুলো হলো - আজাদ কাশ্মীর(রাজধানী মুজাফফরবাদ), গিলগিট ও বালটিস্তান ।

** চীনের দখলে রয়েছে ২০ ভাগ । আকসাই চীন এবং শাকগাম উপত্যকা । চায়না এই অঞ্চল দুইটি ১৯৬২ এবং ১৯৬৩ সালে যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধের সময় দখল করে নেয় ।

## ভারতের লাদাখ আর পাকিস্তানের বালটিস্তানের মাঝেই অবস্থিত সেই বিখ্যাত লাইন অব কন্ট্রোল । আর এদিকে আকসাই চীন এবং লাদাখের মাঝে অবস্থিত রয়েছে লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোল । ভারতের সাথে চীনের আরেকটি সীমানারেখা রয়েছে যার নাম ম্যাকমোহন লাইন, সেটা চীনের তিব্বত এবং ভারতের অরুণাচলের মাঝে অবস্থিত । বিসিএস এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কিনা, তাই তথ্যটা এড করে দিলাম । হা হা হা...

আমাদের ট্যুর মূলত জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশকে ঘিরেই । আমরা যখন বেড়াতে যাই (২৮মে থেকে ১৬ জুন'১৯) তখন অবধি এটি ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে বিবেচিত হলেও সাংবিধানিকভাবে এর নিজস্ব কিছু আইন বা ক্ষমতা ছিলো(Unlike other provinces) । যেমন - এর নিজের জাতীয় পতাকা ছিলো, নিজস্ব জাতীয় সংগীত ছিলো, এখানে ভারতের পতাকাকে অপমান করলে সেটা সাধারণ ভারতীয় আইনে বিচারযোগ্য নয় ... এরকম আরো অনেক আইন বা নিজস্বতা ছিলো । জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী আবার দুইটি । একটি গ্রীষ্মকালীন(শ্রীনগর) এবং আরেকটি শীতকালীন(জম্মু) । তিনটি বিভাগ নিয়ে এই রাজ্য গঠিত । জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ । জম্মুর আছে ১০ টি জেলা, কাশ্মীরের ১০ টি আর লাদাখের জেলা সংখ্যা হলো দুইটি । এই দুইটি হলো লেহ এবং কার্গিল । জম্মুর অধিকাংশ মানুষ হিন্দু, কাশ্মীরের মুসলমান আর লাদাখের বৌদ্ধ । ভূস্বর্গ হিসেবে খ্যাত এই জম্মু কাশ্মীরের আয়তন প্রায় দুই লক্ষ বাইশ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি পঁচিশ লক্ষ ।

আমরা বেড়িয়ে আসার পরে এই বছরেরই ৫ আগস্ট কাশ্মীরের ৩৭০ ধারায় রক্ষিত বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয় । এতে করে কাশ্মীর হারায় তার নিজস্ব গৌরব । এতোদিন তাও আলাদা একটি রাজ্য হিসেবে এটাকে বিবেচনা করা হতো । ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মোট ৭ টি । যথাঃ দিল্লি, পণ্ডিচেরী, দমন ও দিউ, লাক্ষাদ্বীপ, আন্দামান ও নিকোবর দীপপুঞ্জ, দাদরা ও নগর হাভেলী এবং চণ্ডিগড় । ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে আরো দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হলো । যথাঃ লাদাখ এবং জম্মু ও কাশ্মীর । সেই সাথে কাশ্মীর ঢুকে গেলো পুরোপুরি ভারতের পেটের ভেতরে । 


আমার কথাঃ

যাহোক, আমি গিয়েছিলাম সত্যি বলতে কাশ্মীর বেড়াতে । লাদাখ রেখেছিলাম বোনাস হিসেবে । ব্যাসিকালি পিকচার দেখে লাদাখের এই ধূসর বর্ণের প্রকৃতির প্রতি আমার কখনোই তেমন কোন আকর্ষণ তৈরি হয়নি । আমি ওখানে গিয়েছি স্রেফ লাদাখের প্রতি মানুষের ক্রেজ দেখে। যাওয়ার পরে ফিল হয়েছে - হ্যাঁ এটা সত্যিই অতুলনীয় এবং অবর্ণনীয় সুন্দরতম একটি জায়গা । সেই সাথে ভরপুর এডভেঞ্চার । আহ্‌! মনপ্রাণ ভরে গেছে একদম । ফুল স্যাটিসফিকশন নিয়ে ঘরে ফিরেছি ।

লাদাখ-কাশ্মীর নিয়ে অনলাইনে শত শত আর্টিকেল পড়েছি, ইউটিউব-ফেসবুকে শতশত ভিডিও দেখেছি এসব নিয়ে, এসব রুটে ঘুরে এসেছে এমন অনেকের সাথে কথা বলেছি । সেসব সঞ্চিত জ্ঞানের আলোকে নিজেরা ঘুরে এসেছি । এরপরে সেই পাঠ্য জ্ঞানের সাথে নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার মিশ্রণ ঘটিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি আজকের এই ব্লগটি । আমি সবসময়ই সেই সব কথা লিখতে চেষ্টা করি, যেই কথাগুলো অন্য কেউ সচরাচর বলে না, কিন্তু কথাগুলো  জানা দরকার । এই সিরিজেও সেরকম কিছু কথাই খুঁজে পাবেন আশা করি ।


চ্যালেঞ্জঃ

আজকে পাঁচ মাস পরে যত সহজে কম্পিউটারের সামনে বসে আমি স্মৃতি রোমন্থন করছি, এই ট্যুরটা এতোটাও সহজ ছিলো না । এজন্য একটা গোটা ঈদকে স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে । একটি টিপিক্যাল ফ্যামিলির একমাত্র ছেলের ঈদের দিনের অনুপস্থিতি ঘরে কেমন পরিবেশ তৈরি করতে পারে তা আন্দাজ করে নেবেন । তবুও বের হতে হয়েছে পথে, কারণ আমি জানি সুযোগ বারবার আসে না ।

আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো টাকা ম্যানেজ করা । দীন-দরিদ্র মানুষ আমি, এতো টাকা খরচ করে ঘুরতে যাওয়াটা খুব কঠিন ছিলো আমার জন্য । তবুও আন্তরিকতা ছিলো বলেই হয়তো কিভাবে কিভাবে ম্যানেজ করে ফেললাম । ২০,০০০ টাকায় কাশ্মীর-লাদাখ ঘোরা যে অসম্ভব ছিলো, সেটা বিভিন্ন ট্রাভেল এক্সপার্টদের সাথে কথা বলে মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম । সেই হিসেবে ধরেই নিয়েছিলাম যে কষ্ট করে ট্যুর দিলেও অন্তত ২৫,০০০ লাগবেই । তাও এই বাজেটের কথা কাউকে বলতাম না, কারণ এটা বললেই সবাই বলতো ২৫,০০০ দিয়েও পসিবল না । কিন্তু বাস্তবতা তো দেখছেনই ।

সত্যি বলতে আরো খরচ করার অপশন ছিলো । আরো ভালো কোন হোটেলে থাকতে পারতাম, ভালো গাড়িতে চড়তে পারতাম, আরো ভালো খেতে পারতাম। কিন্তু বাজেটের সীমাবদ্ধতায় অনেক কিছুই করা হয়নি । তাই বলে অনুগ্রহ করে ভাববেন না যে আমরা টাকা বাঁচানোর ধান্দায় ক্ষুধার কষ্ট করেছি বা কোন ভিউ/ফিল নেয়া থেকে নিজেদের নিবৃত করেছি । ট্যুর শেষে কোন আফসোস ছিলো না । যা পেয়েছি, তাই তো অমূল্য । সারাজীবন এই স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে পারবো । আপনাদের অনেকেই আমার অনেক ভুল ধরবেন । যদি সেরকম ইচ্ছে থাকে, তবে প্লিজ ঘুরে এসে ভুল ধরবেন । আমি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবো ।

আমি এই ধরণের ব্লগ লেখার মাধ্যমে শুধুমাত্র তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে চাই যারা টাকার দিকে তাকিয়ে ট্যুরের সাহস পায়না। ইন ফ্যাক্ট আমি হিসেব করে দেখলাম, ঢাকা থেকে আমি যদি শুধু ৬ দিনে কাশ্মীর ঘুরে আসতাম তাহলে আপডাউন মিলিয়ে ১২ দিনে আমার খরচ হতো ১৩,১২৬ টাকা । এতো কমে কাশ্মীর ঘোরা যায় জানলে আমি অন্তত আরো আগেই কাশ্মীর ঘুরে আসতাম । আমি নিজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এসে সেই জানানোর কাজটাই করছি, যাতে মানুষ সাহস করতে পারে ।

এইতো আর কয়দিন পরে ইঞ্জিনিয়ার হবো । টাকা হয়তো অনেক কামাই করবো যদি আল্লাহ চায় । কিন্তু সবচেয়ে Harsh Truth হলো সময় এবং টাকা কোনদিনও একসাথে মিলবে না। জবে গেলে টাকা থাকবে, সময় পাবো না । ট্যুর না করার জন্য বা ক্যান্সেল করার জন্য এক্সকিউজ লাগে, বাট ট্যুরে যেতে চাইলে কোন রিজন লাগে না; লাগে ইচ্ছে । আমার ভবঘুরে জীবনের সুখ দেখে কখনো-সখনো ভুল করে কারো হয়তো মনে হয়েছে যদি সে এমন লাইফ লিড করতে পারতো ! বাট আমার কখনো কারো মতো হতে ইচ্ছে করেনি । I'm okay with me.

যাহোক, আরেক জটিলতা ছিলো ভিসা প্রাপ্তি নিয়ে । হাতে সময় খুব অল্প । সুফল শালা খুব ছ্যাঁচড়া । আজ যাই, কাল যাই করতে করতে দেখা যায় আর ডিউ টাইমে ভিসাই বোধহয় হয় না । এই থেকেই খিটখিটে মেজাজের শুরু আমার । আমি সব পেপারস রেডি করে বসে আছি, আর ওর কিছুই রেডি না। অবশেষে একদম ক্রান্তিলগ্নে চলে গেলাম ভিসার পেপারস সাবমিট করতে । ও অনেক পেইন দিয়েছে এজন্য । অবশেষে ভিসা করতে দিলাম । ৭ দিন পরে ভিসা পেলাম । ভিসা পাওয়ার পরে আমার খুশি দেখে কে । আমি খুশি এজন্য ছিলাম না যে আমি দ্বিতীয় মেয়াদে মাল্টিপল এন্ট্রির এক বছর মেয়াদে ভিসা পেয়েছি, বরং এজন্য খুশি হয়েছি যে সুফল পেয়েছে সিঙ্গেল এন্ট্রির তিন মাস মেয়াদের ভিসা । শালা অনেক জ্বালাইছে ।

যাহোক, ঈদের আমেজ শুরু হয়েছে একটু একটু করে । আর কিছুদিন পরেই ৫ জুন ঈদ-উল-ফিতর । আমরা দ্রুত বাংলাদেশ ত্যাগ করতে চাচ্ছিলাম এই জ্যাম বা ঝামেলা এড়াতে । ভিসা ডেলিভারি ডেট ছিলো ২৭ মে । ঢাকা থেকে বেনাপোলগামী ২৮ মে রাতের বাসের টিকিট (হানিফ) কেটেছিলাম ভিসা হাতে পাবার কয়দিন আগেই । জনপ্রতি ৫০০ টাকার ভাড়া গেলো ৬২০ টাকা । কি আর করা যাবে, অমনি নিতে হলো । ভিসা হাতে পেয়ে পরদিনই আমাদের ভ্রমণ শুরু হলো ।

আইটিনারিঃ 

প্রসঙ্গত, বলি রাখি - আমাদের প্ল্যান বলতে এটাই ছিলো যে আমরা কাশ্মীর ঘুরবো, এরপরে সেখান থেকে কারগিল হয়ে লেহ দিয়ে মানালি হয়ে দিল্লিতে ব্যাক করবো । Ladakh যাবার জন্য কারণ হিসেবে দুইটি বিষয় টেনে আনলাম -
১। প্যাংগং লেক, নুব্রা ভ্যালি এবং তুরতুক ভিলেজ ভ্রমণ
২। লেহ থেকে মানালির এক্সট্রিম রোড ট্রিপ এনজয় করা

এই দুই অপশনের যেকোন একটা করতে পারলেও আমাদের লাদাখ সফর সফল হিসেবে ধরে নিতাম । প্ল্যানটা যথেষ্ট ভঙ্গুর ছিলো । কারণ বাংলাদেশী হিসেবে লাদাখের বিভিন্ন জায়গা (লেহ সাইট সিয়িং বাদে) ভ্রমণের অনুমতি প্রাপ্তি প্রায় অসম্ভব ছিলো । আমাদের জন্য দিল্লি হাই কমিশন থেকে অনুমতি নিতে হয় । দিল্লি হাই কমিশন পাঠায় দিল্লিস্থ বাংলাদেশী হাই কমিশন থেকে রেফারেন্স আনার জন্য । আর বাংলাদেশের হাই কমিশন কখনোই সাধারণ মানুষদের রেফারেন্স দেয় না । তারমানে এক নম্বর অপশন শুরুতেই ভঙ্গুর দশায় রয়েছে ।

শ্রীনগর টু লেহ রোড প্রায় সারাবছর ওপেন থাকলেও লেহ টু মানালি রোড বছরের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু মাসেই খোলা থাকে । প্রতি বছর এপ্রিলের দিকে লেহ-মানালি রোড ওপেন হলেও এই বছরে সেটা এই মে মাসের শেষে এসেও ওপেন হয়নি । সবাই শুধু বলে এই খুব শীঘ্রই খুলে যাবে । ঢাকা থেকেই এই ব্যাপারে সবসময় আপডেট নিচ্ছিলাম লাদাখের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট গ্রুপগুলো থেকে । রুট আর ওপেন হয় না  । তারমানে লাদাখ ভ্রমণের দুই নম্বর কারণটাও খুব একটা শক্ত ভিত্তি পায়নি । এদিকে ছুটিও শুরু হয়ে যাচ্ছে, এই চিন্তায় তো আর ঢাকায় বসেও থাকতে পারছিলাম না । সবমিলিয়ে কপালের উপরে ভরসা করে পথে বের হলাম ।

এই বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোনই কমতি ছিলো না। বলা যায় এই অতিরিক্ত উদ্বেগ না থাকলে আমাদের Kashmir অংশের ট্রিপটা আরেকটু উপভোগ্য হতে পারতো । সবসময় দুই বন্ধু লাদাখ-লাদাখ করে জিকির করতাম একপ্রকার । আগেরবার মানালি থেকে ঘুরে গিয়েছি । এবার যদি শ্রীনগরে এসেও লাদাখ যেতে না পারি, জীবনে আর কোনদিন আমাদের লাদাখ সফর হতো কিনা - এই বিষয়ে বিস্তর সন্দেহের অবকাশ ছিলো ।

এরকম একটি ভঙ্গুর প্ল্যান নিয়েই আমাদের যাত্রা চলছিলো । আমাদের হাতে যেহেতু সময় আছে, তাই আমরা চাইছিলাম লাদাখ যেতে না পারলে অন্য কোথাও যাবো । তাজমহল, উত্তরাখাণ্ড বা রাজস্থান । বাইপাস প্ল্যান হিসেবে রেখে দিয়েছিলাম এসব ।

এরপর এতো সকল অনিশ্চয়তাকে সাথে নিয়েই শুরু হলো আমাদের পথচলা । মহান আল্লাহ পাকের কাছে অশেষ শুকরিয়া । আমরা যখন যেখানে গিয়েছি, সৌভাগ্যবশত সেখানকার সব দরজা অটোমেটিক খুলে গেছে । কিভাবে কি হলো, কি হতে পারতো... এসব মিলিয়েই এই ব্লগটি ।

উল্লেখ্য, হিসেবের সুবিধার্থে আমি এখানে দুইজনের খরচ সব একসাথে তুলে ধরলাম । একদম শেষে গিয়ে ক্যালকুলেট করে জনপ্রতি খরচটা বের করবো । এই রুট বা আমাদের এই ভ্রমণের গল্পগুলো জানতে নিচের সিক্যুয়াল অনুযায়ী পড়তে থাকুন । আশা করি হতাশ হবেন না । যারা শুধু কাশ্মীর ভ্রমণ করতে চান এবং এতো বড় সিক্যুয়াল পড়ার ধৈর্য্য নেই, তাদের জন্য একাদশ পর্বে  "১৩০০০ টাকায় ১২ দিনে ঢাকা থেকে কাশ্মীর ভ্রমণ" টাইটেলে শুধুমাত্র কাশ্মীর অংশকে ফোকাস করে ট্যুরের সারাংশ তুলে ধরেছি । হ্যাপী রিডিং । 


কম খরচে কাশ্মীর-লাদাখ-মানালি ভ্রমণ ঃ





















মন্তব্যসমূহ

  1. হৃদয় ষ্পর্শী সাবলীল বর্ণনায় লেখাটি দুই দিনে পড়ে শেষ করলাম। মনটা বিবাগী হয়ে গেলো! ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ ভাই । কখনো সুযোগ হলে যাবেন নিশ্চয়ই ।

      মুছুন
  2. আপনি কি সাইকেলে করে টুর দিয়েছেন,নাকি,
    আর একজন যদি বাইরোডে টুর দেয় কত খরচ হতে পারে,,,,

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. কি পড়লেন আপনি সে ঘুরলো বাই রোড়ে আর আপনি জিজ্ঞাসা করছেন বাইরোডে কিভাবে যাওয়া যায়!

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

১০৫০ টাকায় ঢাকা থেকে চারদিনের রাজশাহী+নওগাঁ সফর

একাদশ পর্বঃ ১২,৮২৭ টাকায় ১২ দিনে ঢাকা থেকে কাশ্মীর ভ্রমণ (বিশেষ পর্ব)