সপ্তম পর্বঃ নষ্ট একটি দিনের গল্প
![]() |
বৃষ্টিস্নাত ডাললেক |
নষ্ট দিনের শুরু (০৩/০৬/১৯)
আজকের দিনটা একদম ইউজলেস ভাবে কেটেছে । টোটাল ওয়েস্টেজ । ঘুম থেকে উঠে ধীরে স্থিরে বের হতে হতে সকাল সাড়ে নয়টা বেজে গেলো । সিদ্ধান্তহীনতাকে সাথে নিয়েই হোটেলে ব্যাগ রেখে সূর্য ভাই আর সুশীল ভাই এর সাথে বেড়িয়ে গেলাম । উদ্দেশ্য মুঘল গার্ডেন - শালিমার বাগ । লালচক থেকে শালিমারের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার । লালচক থেকে এভেইলেবল শেয়ারড ট্যাক্সি যায় সেদিকে, ভাড়া ৩০ রুপী ।
ডাললেক সমাচারঃ
উঠে গেলাম একটাতে । যাত্রাপথে চোখে পড়লো আসল ডাললেক । ওহ এই কাহিনী তাহলে ! এবার বুঝতে পারলাম - প্রথম রাতে আমরা যে হাউজবোটে ছিলাম, সেটা ছিলো ডাললেকের কোন একটা ব্যাক সাইডের অংশ । এজন্যই তো বলি কোথাও একটা গড়মিল হচ্ছে । গড়মিলটা এবার স্বচ্ছ হয়ে গেলো । কাশ্মীর ভ্রমণের অবশ্য কর্তব্য হিসেবে "একরাত ডাললেকের হাউজবোটে থাকা" অংশটা তবে আমাদের পরিপূর্ণ হয়নি ধরে নিলাম । সুতরাং তখনি আমি আর সুফল সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে রাতে আসল ডাললেকে থাকবো ।
![]() |
গুগল ম্যাপে ডাললেক ভিউ |
বিশাল এই ডাললেকের আয়তন প্রায় ২২ বর্গকিলোমিটার । গভীরতা খুব একটা বেশি না, প্রায় ৬ মিটারের মতো হবে । কিন্তু ডাললেকের ভেতরে সুন্দর সারিবদ্ধ হাউজবোটগুলো দেখতে খুবই সুন্দর লাগে । এরকম হাজার হাজার হাউজবোট আছে ডাললেকের বুক জুড়ে । তবে ফ্রণ্ট সাইডের হাউজবোটগুলো সবগুলো একটা নির্দিষ্ট সজ্জা মেনে লম্বালম্বিভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলো থেকে মুক্ত ডাললেকের ভিউ পাওয়া যায় এবং এগুলোর রেটও বেশি । ফ্রণ্ট সাইডের বাইরেও ব্যাকসাইড বা লেকের শাখাপ্রশাখা যা দেখছেন ম্যাপে, সবজায়গাতেই হাউজবোট আছে; যেগুলোর রেটও তুলনামুলকভাবে অনেক কম । ম্যাপে লাল মার্কিং করে লেকের বুকে হাউজবোটগুলোর সজ্জা তথা অবস্থানগুলো আমি বোঝাতে চেষ্টা করেছি । ম্যাপে লালচকের আশেপাশেও দেখেন ডাললেকের শাখা রয়েছে । প্রথম রাতে আমরা সেরকমই কোন একটা শাখার হাউজবোটে ছিলাম ।
লালচক থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে হলো ডালগেটের অবস্থান । ডালগেট হলো আসল ডাললেক শুরুর একটা পয়েন্ট বা ১ নম্বর ঘাটের কাছের পয়েন্ট, যেখানে থেকে শহরের বিভিন্ন দিকে রাস্তা চলে গেছে । ডাললেকের পাড় জুড়ে এরকম অসংখ্য ঘাট আছে ।
লালচকের পরে ডালগেট থেকে শালিমার অবধি প্রায় পুরোটা রাস্তাই এই ডাললেকের ধার ঘেঁষে চলে গেছে । এসব দেখতে দেখতেই প্রায় আধাঘণ্টা পরে চলে এলাম শালিমারের সামনে । এই মুঘল গার্ডেনগুলো সব মুঘল আমলে তৈরি । মুঘল সম্রাটদের বিলাসী খেয়ালের ফসল এসব । গুগলে এসব লিখে সার্চ দিলে আপনারাই অনেক ইতিহাস জানতে পারবেন । এমনিতেই আমার ব্লগ অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে, এসব ইতিহাস লিখে আরো দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছেও যেমন নেই, তেমনি আমি আউটসাইড দ্য বক্স টাইপ কিছু কথা বলতে চাই - যা উল্লেখ করবো নবম পর্বের "ঈদ-উল-ফিতরের দিন শ্রীনগরে" অংশে এবং এই কথাগুলো আর কেউ উল্লেখ না করলেও নতুনদের জানার দরকার আছে বলে আমি মনে করি ।
যাহোক, ২৫ রুপী জনপ্রতি হারে টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম শালিমারে । ঢুকেই একটা আলাদা ভালোলাগা ছুঁয়ে গেলো । অপূর্ব সব ফুলের গাছ মনকে বিমোহিত করে। আর এতো ভ্যারাইটি সেসব ফুলের যে একমাত্র কাশ্মীর না এলে সেসব বুঝতেও পারা যাবে না । কাশ্মীরের মাটি অতিরিক্ত লেভেলের উর্বর । ফুলগাছগুলো যতবার দেখেছি, হা করে তাকিয়ে থেকেছি । অন্যান্য চেনা অচেনা ফুলগাছের পাশাপাশি আমি আমার জীবনে এতো টাইপের গোলাপ একসাথে কখনো দেখিনি । লালগোলাপ তো আমাদের দেশে খুবই কমন । কিন্তু কাশ্মীরের লাল গোলাপের সৌন্দর্যেও মনে হলো আলাদা একটা প্রাণ আছে, সজীবতা আছে । সৌন্দর্যের ভিন্ন একটা ডাইমেনশন খুঁজে পেয়েছি সেই গোলাপে । সেই গোলাপ যেমন একদম ছোটও হয়, হয় অনেক বড়ও । আবার বর্ণের ক্ষেত্রেও আছে অনেক পার্থক্য। কিন্তু দেখতে সবগুলোই অতিরিক্ত সুন্দর । সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো একেকটা গাছে এতো পরিমাণ গোলাপ ধরে যে মনে হয় ফুলের ভারে ডালই হেলে পড়বে একটু পরে । ঠিক আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানে আমের ভারে গাছের ডাল যেভাবে নুয়ে থাকে, কিছুটা সেরকম আর কি । এসব দেখতে দেখতে কেনো যেনো বারবার মনে হচ্ছিলো - প্রতিবার প্রত্যাখ্যাত কোন প্রেমিক যদি কাশ্মীরি লাল গোলাপের একটি তোড়া প্রেমিকার সামনে ধরে প্রেমের প্রস্তাব দেয় - অনেক কঠিন হৃদয়ের রমণীর আত্মাও কেঁপে উঠবে তাকে ফিরিয়ে দিতে ।
![]() |
Shalimar Bagh |
![]() |
Shalimar Bagh |
![]() |
Shalimar Bagh |
![]() |
Shalimar Bagh |
![]() |
Shalimar Bagh |
খুবই ভালো লেগেছে বাগানটা ঘুরে । তবে পুরো বাগানটা ঘুরতে বেশি সময় লাগে না, ৩১ একরের মতো হবে বাগানটা । প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘুরে এগারোটার দিকে আমরা চারজন বাইরে বেড়িয়ে এলাম । বাগানের বাইরে অনেকগুলো দোকান আছে । সুন্দর সুন্দর গিফট বা শো-পিস কিনতে পাওয়া যায় । আপনারা চাইলে দেশের প্রিয়জনদের জন্য সুন্দর উপহার সামগ্রী কিনতে পারেন সেখানে থেকে ।
আমরা সেখানে থেকে সকালের খাবার খেয়ে নিলাম । ওরা তিনজনই কিছু না কিছু কেনাকাটা করলো । আমি কিছুই কিনলাম না। অনেক কিছুই পছন্দ হচ্ছিলো, টাকার কথা ভেবে কেনা হয়নি । এরপরে সেখানে থেকে প্রায় একটার দিকে আবার হোটেলে ফিরে এলাম একইভাবে । সেখানে থেকে চেক আউট করে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে এলাম শ্রীনগরের পথে ।
সূর্য ভাই আর সুশীল ভাই এর সাথে এবার বিদায়ের পালা । তিনটা দিন একসাথে ছিলাম, ভালোই কেটেছে সময়গুলো । এখন তাদের চলে যাবার সময় হতেই কেমন ঝিমিয়ে গেলাম আমরা দুইজন । নিজেদের মাঝে সেই উদ্যম খুঁজে পাচ্ছিলাম না আর । কি আর করা যাবে, ওনাদের থেকে বিদায় নিয়ে অমনি দুইজন আলাদা হয়ে গেলাম।
এতোদিন সুশীল ভাই এর মোবাইল হটস্পট দিয়ে নেট চালাইতাম । আমাদের কাছে অল ইন্ডিয়া সিম ছিলোই একটা । বাট আপনারা জানেনই তো কাশ্মীরের সিম সম্পূর্ণ আলাদা । পোস্টপেইড সিম - যেটা পুরো ভারতে চলে । বাট পুরো ভারতে যেটা চলে সেটা কাশ্মীরে চলে না । চলে গেলাম সিম কেনার দোকানে । সেই সিমের দোকানও খুঁজে পাচ্ছিলাম না । অনেক কষ্টে একটা ভোদাফোন কাস্টমার কেয়ার খুঁজে পেলাম । ওখানকার প্রতিনিধি পাসপোর্ট দিয়ে সিম দেয়ার ব্যবস্থার কথা জানালেন । কিন্তু পরে আরো কিছু ঝামেলার জন্য রাগ করে আর সিমই কিনলাম না।
আজকের দিনটা যে নষ্টই হলো, সেটা স্পষ্টই বুঝে গেলাম এতোক্ষণে । আফসোসও হচ্ছিলো এজন্য কিছুটা । মন-মেজাজ খারাপের শুরু ছিলো এখানেই । একটু সক্রিয়ভাবে ভাবলেই এমন হতো না। আমাদের হাতে প্রচুর সময় আছে তো তাই আর সেই সক্রিয় ভাবনা আসেনি সত্যি বলতে । আমি এসব ব্যাপারে সুফলের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল । সুফল হলো সেই মানুষ - যেখানে আমাদের মাথা ফাংশন করা বাদ দেয়, সেখান থেকে ওর মাথা ফাংশন করা শুরু করে । মাথা কুল রেখে কাজ করা, ইন্সট্যান্ট কোন সলুশন বের করা বা সিচুয়েশন হ্যাণ্ডেল করার ওস্তাদ হলো সুফল । ওর ওস্তাদির গুণেই প্যাংগং ঘুরতে পেরেছি সত্যি বলতে - I admire it always.
যাহোক, বেলা তখন প্রায় সাড়ে তিনটার কাছাকাছি বাজে । মেজাজ টেজাজ খারাপ করে বের হলাম সিমের দোকান থেকে । লক্ষ্য আসল ডাললেকের হাউজবোট ঠিক করে আজ রাতে সেখানে থাকা । সেই লালচক থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম হাউজবোটের কাছে । হেঁটে আসতে যে এতো সময় লাগবে বুঝতে পারিনি একদমই । অনেক সময় লেগেছে । মুড ভালো না থাকায় হাঁটাটাও সেভাবে এনজয় করতে পারিনি ।
এই হাউজবোটগুলো একদম লেকের মাঝে অবস্থিত । ডাললেক ধরে বহু ঘাট আছে যেখানে ছোটছোট নৌকা বাঁধা থাকে । হাউজবোটের লোকজন ঘাটে থাকে । তারাই কাস্টমারদের ধরে নৌকায় করে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন মানের হাউজবোট দেখায় । পছন্দ হলে উঠে যায়, নাহলে তাদের নিয়ে এসে ঘাটে এনে নামিয়ে দেয় । টাকা নেয় না ।
![]() |
মূল রাস্তা থেকে হাউজবোট |
আমরাও এভাবে গেলাম । আমাদের বাজেট বরাবরের মতো এখনো খুবই কম । দুইজনের জন্য ৫-৬০০ রুপী সর্বোচ্চ। আগে যত আর্টিকেল পড়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছি তাতে জানতাম এই বাজেটে হাউজবোট পাওয়াই যায় না । আমরা গিয়ে যেটা বুঝলাম সেটা হলো এই বাজেটে কাটাও বাছা যায় । হা হা হা...
যাহোক, সেই নৌকার গাইড ভাই আমাদের বাজেট অনুযায়ী ফ্রণ্ট সাইডের হাউজবোটগুলো রেখে এসবের পেছনের দিকের হাউজবোটগুলো দেখাতে নিয়ে গেলেন । কারণ ফ্রণ্ট সাইডের গুলোর রেট অনেক বেশি । আমাদেরও জেদ কম না, গরীব হতে পারি, ফকির না। ব্যাকসাইডের হাউজবোটে তো ছিলাম প্রথম দিনে । আজকে যত সোনাদানাই দেখাক না কেনো, ব্যাকসাইডে থাকবো না। আমি ছটফট করছিলাম মনে মনে । সুফল বুঝতে পেরে ইশারায় থামিয়ে দেয় আমাকে । ওর কথা হলো - না নেই, দেখতে তো সমস্যা নেই । আমার কথা হলো ওই বাল আমি দেখবোই না । এরপরে বাধ্য হয়ে ওসব দেখলাম । দেখে স্পষ্টভাবে জানালাম আমরা ফ্রন্টসাইডে থাকতে চাই । গাইড ভাই এবার ফ্রন্ট সাইডের দুইটা হাউজবোট দেখালেন । এজ এক্সপেক্টেড, বাজেট মেলে না। পছন্দ-অপছন্দের কোন সমস্যা নাই । কারণ ফ্রণ্ট সাইডে যতগুলো হাউজবোট আছে,সবগুলোই হাইফাই । সমস্যা বাজেটে ।
শেষে একটা ফিক্সড করলাম ৭০০ রুপীতে । মালিক ৭০০ তে রাজি হলেও বুঝলাম উনি স্যাটিসফাইড না। ট্যুরিস্ট নাই, তাই বাধ্য হয়ে এতো কমে দিতে হলো ওনার । আমি ওনাকে পরে এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম - ভাই এই হাউজবোট এর আগে সর্বনিম্ন কততে দিয়েছেন ? উনি জানালেন ১৩০০ রুপী । আসলেও তাই । এতো বেশি সুন্দর যে রুমে ঢুকলে একটা তিন তারকা হোটেল টাইপ ফিল আসে । এই রুমের মিনিমাম ভাড়া হওয়া উচিত ২০০০ রুপী । আমার মনে হলো, সত্যিই সাথে টাকা পয়সা বেশি থাকলে অন্তত হাজারখানেক রুপী দিতাম তাকে । কিন্তু কি করা যাবে । আমাদের লক্ষ্য তো রাজপ্রাসাদ না, লক্ষ্য ফ্রণ্ট সাইডের যেকোন মানের একটা হাউজবোটে থাকা । এখন ফ্রণ্ট সাইডে সাধারণ মানের হাউজবোট নেই, সেটা কি আর আমাদের দোষ নাকি !
![]() |
আমাদের হাউজবোটের রুম |
এই হাউজবোটগুলোর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো - এসব রুমে কোন লক সিস্টেম নেই । কোনদিন এসব হাউজবোট থেকে কিছু চুরি হয়না । ব্যাপার টা খুবই ভালো লাগলো ।
হাউজবোটে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম । এতো সুন্দর একটা হাউজবোটে ওঠায় মনটা খুব ফুরফুরে ছিলো । এখন খেতে হবে । খুব ক্ষুধা লেগে গেছে বেশ । সেখানে থেকে ঘাটে আসার জন্য সবসময়ই নৌকা পাওয়া যায় । মালিকই ব্যবস্থা করে দেয় ।
ভারতের একটা বড় সমস্যা হলো ভেজ না নন ভেজ । আসার পরে থেকেই ভেজের উপরে দিয়েই যাচ্ছে । আমরা যারা নন-ভেজ তাদের জন্য লং টাইম ভেজ নিয়ে পড়ে থাকা মুশকিল । ননভেজ হোটেলও সবজায়গায় এভেইলেবল না । কিন্তু আজকে আমাদের যেখানেই যাওয়া লাগে না কেনো, ননভেজ-ই খাবো ঠিক করেছিলাম । জানতে পারলাম খায়েমচকে নাকি অনেক নন ভেজ হোটেল আছে । বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে দুজনে ৩০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে চলে গেলাম খায়েমচক । দুইজনে আরাম করে চিকেন বিরিয়ানি খেলাম, যেটাকে ডিনার বা লাঞ্চ একটা কিছু বললেই চলে । এরপরে ফিরে এলাম আমাদের হাউজবোট সংলগ্ন ঘাটে ।
এখন লক্ষ্য হলো ডাঙ্গায় একটা হোটেল ঠিক করা । কিন্তু ডাললেক সংলগ্ন রোডের পাশে ডাঙ্গায় যতগুলো হোটেল আছে, সবগুলোই খুব ক্ল্যাসিক লেভেলের । অনেক ভাড়া । আজকে বেশ এনার্জিও আছে, সময়ও আছে, কাজও নেই, উপরন্তু হোটেল দেখতেও ভালো লাগে। সুতরাং লেগে গেলাম কাজে । অনেকগুলো হোটেল দেখেছি সেদিন । এভাবেই এই রোডের ধারেই এভারেজ একটা হোটেল পেয়ে গেলাম । দুইজন পার নাইট ৪২৫ টাকা ফিক্সড হলো । আজকের রাতে হাউজবোটে থেকে নেক্সট রাত থেকে এখানেই থাকবো ।
লালচকে থাকা সবচেয়ে সুবিধার, কারণ সেখানে থেকেই সবগুলো ট্যুর স্পটে যেতে হয়। উপরন্তু ওখানে কমদামি হোটেল পাওয়াও ইজি । কিন্তু লালচক থেকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে এবং তুলনামূলক বেশি খরচ করে হলেও আমরা ডাললেক সংলগ্ন রোডের পাশের হোটেলে থেকেছি । কারণ খুব সিম্পল । ভিউ । আমরা ট্যুরে গিয়ে অনেক জায়গাতেই মিতব্যয়ী(লোকে বলে কৃপণ) ছিলাম, বাট এসব উপভোগের ক্ষেত্রে কোন কার্পণ্য করিনি । সুন্দরের উৎসবে নির্বিচারে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছি ।
মনে পড়ে, বিকাল বা সন্ধ্যায় হোটেল থেকে বেড়িয়ে এসে যখন ডাললেকের ঘাটের পাশে এসে দুই বন্ধু বসতাম, মন-টন ভরে যেতো একেবারে । খুব ফিল হতো বউ-টউ থাকলে হাতে হাত রেখে এই ঘাটে বসে সময় পার করতে পারলে দারুণ লাগতো নিশ্চয়ই । কক্সবাজার গেলে এই ফিলটা সবচেয়ে বেশি হয় আমার । যখনি ডিভোর্সের কথা শুনি, সবসময় একটা সাইকোলজি কাজ করে আমার । মনে হয় - তাদের দু'জনের বোধহয় কম্বাইন্ড কোন সুন্দর মেমোরি নেই । একসাথে থাকার জন্য কারণ লাগে না, কারণ লাগে আলাদা হবার জন্য । সুন্দর স্মৃতিগুলো দুইজন মানুষকে বিনা কারণে পাশাপাশি ধরে রাখতে অনেকটাই সাহায্য করে বলে আমার ধারণা । দুইজনে মিলে এরকম কিছু সুন্দরতম সময়ের সাক্ষী হতে পারলে, ব্যস্ততায় যে আহ্লাদগুলো কখনো প্রকাশ করা হয়নি, সেগুলো প্রকাশ করতে পারলে, শক্ত করে হাতটা ধরে ''সারাজীবন পাশে থাকবো" বলতে পারলে বোধহয় সেই সম্পর্কগুলো ডিউরেবিলিটির ক্ষেত্রে আরেকটা ডাইমেনশন এড হতো । মানুষগুলো আরেকটু ভালো থাকতে পারতো, আরেকটু বেশি ভালোবাসতে পারতো ।
যাহোক, আমার বউও নাই, সুতরাং এসব থাক । গল্পে ফিরে যাই । সবকাজ শেষে ফিরে গেলাম হাউজবোটে । বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিলো । বেশ লাগছিলো পানির মাঝে নৌকার আদলে তৈরি একটা ঘর, নাম যার হাউজবোট; সেখানে বসে বৃষ্টি দেখতে । ঘাটে বসে থেকে সারিবদ্ধভাবে রাতের হাউজবোটগুলো দেখতেই বরং বেশি ভালো লাগে । কারণ এক হাউজবোটে উঠলে সমান্তরাল অবস্থানের কারণে আশেপাশে ১০-২০ টার বেশি হাউজবোট দৃষ্টিগোচর হয় না । কিন্তু ঘাটে থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু হাউজবোটই নজরে আসে । লেকের জলে রাতের আলোকোজ্জ্বল হাউজবোটগুলোর শ্যাডো একটা আলাদা মোহনীয় দৃশ্য তৈরি করে । এই ছোট ছোট বিষয়গুলোই খুব ভালো লাগে ।
এখনো লাদাখের গল্প আসেইনি । কিন্তু সত্যিটা হলো এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের মধ্যে আজকে বেশ কথাবার্তা হয়েছে । সুফল যত বেশি পজিটিভ এটিটিউড শো করে, আমি ততই বাইপাস প্ল্যানগুলো ঝালাই করছিলাম । উত্তরখাণ্ড যাবো নাকি অন্য কোথাও যাবো । আর সুফলের কথা হলো ভালো-মন্দ ফলাফল যাই হোক, আমরা গেলে লাদাখই যাবো । কারণ এই রুটে আর জীবনে যাওয়া হবে না । যাহোক, এই কথাগুলোই ঘুরেফিরে চলে আসছিলো আমাদের আলোচনায় । এই বালের লাদাখের চিন্তায় সামনের দুই দিন কাশ্মীরে ঘুরে শান্তি পাইনি । খালি মনে হতো যদি লেহ থেকে মানালির রাস্তা না খোলে তাহলে কি হবে । এতো বড় রিস্ক নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে ! কাশ্মীরের পরবর্তী দিনগুলোতেও এই কনফিউশড এটিটিউড আমাদের বেশ ভুগিয়েছে । সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীকাল আমরা শ্রীনগরের TRC(Tourist Reception Center) তে যোগাযোগ করবো এই বিষয়ে তথ্য বা সহযোগিতার জন্য ।
আজকের খরচঃ (০৩/০৬/১৯)
১। লালচক - শালিমার (২জন) = ৬০/-
২। শালিমার এন্ট্রি ফি(২ জন) = ৫০/-
৩। শালিমার - লালচক = ৬০/-
৪। হাউজবোট = ৭৩০/-
৫। হাউজবোট - খায়েমচক = ৩০/-
৬। খাওয়া = ৩৫০/-
মোট = ১২৮০ রুপী
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন