নবম পর্বঃ ঈদ-উল-ফিতরের দিন শ্রীনগরে

হযরত বাল মসজিদ ঈদগাহ মাঠ


ঈদ-উল-ফিতরের দিনঃ(০৫/০৬/১৯)

সকাল আটটার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম । গোসল করে রেডি হলাম নামাজের জন্য । পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা যাবো হযরত বাল দরগাহ তে ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে । সকাল দশটার দিকে জামাত হয় । সেই হিসেবে ধীরে স্থিরে দুই বন্ধু বের হলাম নামাজের জন্য । নামাজ পড়ে কই যাবো তখনো সেভাবে ফিক্সড করিনি । আমরা জানতাম যা-ই করি না কেনো আজকে, হাতে অনেক সময় আছে ।

যাহোক, হোটেল থেকে বের হয়ে ডাললেকের পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে দুই বন্ধু চলে এলাম ডালগেটের কাছে । সেখানে গিয়ে দেখলাম অনেক লোকাল বাস যাচ্ছে হযরত বাল দরগাহের দিকে । একটাতে উঠে গেলাম দুই বন্ধু । ভাড়া দিলাম দুইজনে ২৫ রুপী । হযরত বাল দরগাহ নিয়ে যেরকম একটা আগ্রহ বা ফ্যান্টাসি ছিলো সেরকম করে ফিল করতে পারলাম না সেখানে গিয়ে । সবই খুব সাধারণ ছিলো । বক্তা কাশ্মীরি ভাষায় বয়ান দিচ্ছিলো, আগামাথা কিছুই তো বুঝলাম না তার । দেখলাম মেয়েরাও ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে এসেছে একইসাথে । ছেলে মেয়ে কম্বাইণ্ড মসজিদের ক্ষেত্রে যেরকম সেপারেশন আশা করা উচিত, সেরকমটা চোখে পড়লো না। বেশ সাবলীল ভাবেই দেখলাম সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

হযরত বাল দরগায় নামাজ শেষে 

মসজিদের আশেপাশে

পেছনে মসজিদের গম্বুজ

মসজিদের সামনে কবুতরের দল  
নামাজ শেষে মসজিদ টা ঘুরে দেখলাম । মসজিদটা সুন্দর । একটা ঐতিহাসিক ভ্যালু আছে । আমাদের মতো দেখলাম অনেক মানুষ নামাজ শেষে ঘুরে ঘুরে মসজিদ দেখছে । একসময় সেখানে থেকে বের হয়ে এলাম । বাহিরে এসে গেটের কাছে দেখি একটা পরোটার দোকান । বিশাল প্রমাণ সাইজের পরোটা ভাজতেছে । এগুলো বিক্রি হয় কেজি হিসেবে । সম্ভবত ১০০ রুপী কেজি পরোটা+হালুয়া । আমরা ৭৫ টাকার কিনলাম দুইবারে । খেয়ে খুবই শান্তি পেলাম, সুস্বাদু ছিলো ।

প্রমাণ সাইজের পরোটা
এরপরে সেখানে থেকে বের হয়ে গেলাম বাইরে । বাইরে এসেই দুই বন্ধু দুইটা আইসক্রিম খেলাম । পাশেই ছিলো কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় । হেঁটে হেঁটেই চলে গেলাম সেখানে ।



University of Kashmir:

দেশে বা বিদেশের মাটিতে যেকোন জায়গায় বেড়াতে গেলে আমার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ থাকে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি । সেখানকার পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের কালচার, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য, পরিচ্ছন্নতা, ক্যাম্পাসের বাস, লাইব্রেরী, ফুলের বাগান, বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি... এই  বিষয়গুলো খুব টানে আমাকে ।

তাইতো কাশ্মীর ভ্রমণের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ ছিলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যান্ন । বিশ্ববিদ্যালয়টি আয়তনে ২৬৩ একর জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত, যা জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় । সমতল ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত অসম্ভব সুন্দর এই ক্যাম্পাসের একপাশে সুউচ্চ পাহাড় আর অন্যপাশে বিস্তীর্ণ ডাললেক । দূর থেকে দেখলে অন্যরকম একটা আবেশ কাজ করে ।

কিন্তু ঈদের দিন হওয়ায় ক্যাম্পাস বন্ধ ছিলো । তাই শিক্ষার্থীদের কোন সমাগম ছিলো না। বিষয়টি মিস করলাম । তবুও দুই বন্ধু মিলে ঈদের পোষাকেই ঢুকে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে । পুরো ক্যাম্পাসটা হেঁটে হেঁটে দেখলাম । ক্যাম্পাসের ভবনগুলো, বাসগুলো, রাস্তা, ফুলের বাগান খুবই ভালো লেগেছে । এতো পরিচ্ছন্ন একটি ক্যাম্পাস - না দেখলেই নয় । সুন্দর প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে পুরো ক্যাম্পাসের বুক জুড়ে । ফুলগাছগুলোও সমস্ত কাশ্মীরের মতোই - অসম্ভব সুন্দর আভা ছড়িয়ে মুগ্ধ করে রেখেছে দর্শকদের ।

ইউনিভার্সিটি অব কাশ্মীর

ক্যাম্পাসের ভেতরের রাস্তা

ক্যাম্পাসের ফুলবাগান 

বারোটায় ঢুকে প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘুরেই পুরো ক্যাম্পাস শেষ করে ফেললাম । একটার দিকে বের হলাম ক্যাম্পাস থেকে । এখন ফেরার পালা । ক্যাম্পাসের গেটের সামনে থেকেই দেখলাম ডালগেটের দিকে বাস যাচ্ছে । উঠে পড়লাম বাসে । দুইজনে ভাড়া দিলাম ২০ রুপী ।



Nishat Bagh:

ডালগেটে এসে দেখলাম অনেক গাড়ি যাচ্ছে মুঘল গার্ডেনগুলোর দিকে । এর আগে তো আমরা শালিমার বাগ ঘুরেছি, তাই আজকে ঠিক করেছি নিশাত বাগ, চাশমেশাহী আর পরীমহল ঘুরবো । সেই হিসেবে নিশাত বাগকে প্রথম টার্গেট করে ডালগেট থেকে একটা বাসের ছাদে উঠে গেলাম। ছাদে দেখলাম কাশ্মীরের অনেক পোলাপান উঠে বেশ মজা করছে । আমরাও তাদের সাথে জয়েন করলাম
বাসের ছাদে কাশ্মীরি পোলাপানদের সাথে

বাসের ছাদ থেকে ডাললেক তথা হাউজবোট
আজকে অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশিই ভাড়া দিতে হলো । ডালগেট থেকে নিশাত বাগ দুইজনের ভাড়া গেলো ৪০ রুপী । জনপ্রতি ২৫ রুপী টিকিটে দুইজন ঢুকে গেলাম নিশাত বাগে । প্রচুর ভীড় ছিলো আজকে; এজ এক্সপেক্টেড ।

এর আগে কাশ্মীর ভ্রমণের যত আর্টিকেল পড়েছি, তাতে এই গার্ডেনগুলোর সীমাবদ্ধতা নিয়ে কখনো কিছু পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । আমি নিজেই শালিমার ঘুরে অনেক প্রশংসা করেছি সপ্তম পর্বে এবং আপনারাও বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে অলরেডি অনেক গুণগান শুনেছেন আশা করি । আমি আজকে শুধু সীমাবদ্ধতাগুলোকেই ফোকাস করবো, যেটা জানা খুবই দরকার বলে আমি মনে করি ।

গতদিন শালিমার বাগ ঘুরে যে ভালোলাগা টা কাজ করেছে, আজকে সেই ফিলটা পেলাম না । কারণ কি জানেন ? খুব সিম্পল । শালিমারের সাথে নিশাতের তেমন কোন মেজর পার্থক্য চোখে পড়েনি । দুইটাই হুবহু একই রকম মনে হয়েছে আমার কাছে । এই বাগানও মুঘল সম্রাটদের বিলাসী খেয়ালের ফসল । আগেরদিনের মতো এখানেও রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ । আছে নজরকাড়া গোলাপের রকমফের ।



কাশ্মীরের জনপ্রিয় পোশাক - ফেরান পড়ে বন্ধু সুফল

বুঝলাম শালিমার আর নিশাত বাগ একই জিনিস । তাই আর খুব বেশিক্ষণ ছিলাম  না । বের হয়ে এলাম আড়াইটা-তিনটার দিকে । এখন গন্তব্য চাশমেশাহী ।



Chashme Shahi:

নিশাত বাগ থেকে বাসে কিছুদূর এসে একটা অটো নিয়ে সোজা চলে গেলাম চাশমেশাহী ।এখানে খরচ হলো ১০০ রুপী । এবার একটা ভিন্ন ধাচের কিছু দেখার প্রত্যাশায় জনপ্রতি ২৫ রুপী হারে টিকিট কেটে ঢুকে গেলাম ভেতরে । ও মা ! এ-কি । যে লাউ সেই কদু । এসব গার্ডেন তো স্রেফ একটা আরেকটার ছোটভাই-বড়ভাই টাইপ গো । এবার বরং কিছুটা বিরক্তই হয়ে গেলাম । ধুর বাল ! তার উপরে আজকে মানুষ গিজগিজ করছে । ভালো লাগছিলো না। একটা পিক তোলার রুচিও হলো না । অমনি কিছুক্ষণ বসে থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলাম ।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এখন আমাদের গন্তব্য পরিমহল । কিন্তু আমার আর মন টানছিলো না। কিন্তু নামের কল্যাণে সুফলের ধারণা হলো ওখানে নিশ্চয়ই অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ক কিছু দেখার আছে । দুইজনের মতের পার্থক্য তৈরি হলো । মতৈক্যে আসার লক্ষ্যে দুইজন মিলে স্থানীয় একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারের স্মরণাপন্ন হলাম ।সেই ড্রাইভার ভাইটিও খুবই আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের পরীমহলের বিশেষত্ব বুঝালেন । সেই বিশেষত্ব শুনে সুফলেরও আর রুচি অবশিষ্ট রইলো না সেটা দেখার ।

শ্রীনগর ডে ট্রিপ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অভিমতঃ 

আমি জানি আমার পরামর্শ আপনার পছন্দ নাও হতে পারে । কারণ সারাজীবন শুনে আসা তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক কোন তত্ত্ব মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি গ্রহণ করতে চায় না সহজে । তবুও আমি একটা যুক্তির আলোকে বুঝাতে চেষ্টা করছি । পছন্দ না-ই হতে পারে, শুনতে দোষ কি ! পছন্দ না হলে মানবেন না - দ্যাটস অল ।

গুগল ম্যাপে শ্রীনগরের সবগুলো দর্শনীয় স্থান একসাথে

ম্যাপ দেখেই বুঝতে পারছেন যে প্রতিটি ট্যুরিস্ট স্পট একদম কাছাকাছি এবং একটা নিয়মিত সজ্জা ও দূরত্বে অবস্থিত । এটাও একটা সাইকেলের মতো । যেটা পুরো ডাললেকের পরিধি বরাবর ঘিরে রেখেছে । আপনারা যারা পুরো একটা দিন শ্রীনগরের জন্য দেয়ার প্ল্যান করছেন; যেটা সবাই করে আর কি, তারা এরকম সজ্জায় আপনার ডে ট্রিপটি কাভার করতে পারবেন । নিজেরা গাড়ি রিজার্ভ করে ঘুরতে পারলে ভালো, বাট চাইলে লোকালিও ঘুরতে পারবেন । আমাদের হাতে নাহয় সময় ছিলো বলে ধীরে ধীরে বা এলোমেলোভাবে ঘুরে এসেছি । অধিকাংশ মানুষই আসে খুব স্বল্প সময় নিয়ে । সেক্ষেত্রে তারা নিশ্চয়ই বেড়াতে এসে অহেতুক সময় নষ্ট করবে না ।

এখন আমি আলাদাভাবে যেটা বলতে চাই সেটা হলো - আপনি পারলে শ্রীনগর ডে ট্রিপের জন্য আলাদাভাবে পুরো একটি দিন দিয়েন না । আমার কাছে মনে হয়েছে এটা কোন কাজের প্ল্যান না । কারণ প্রতিটি মুঘল গার্ডেন একদম এক । আপনি ডিফার করতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না । তাহলে কি দরকার শুধু শুধু নাম ডাক শুনে সবগুলোতে যাওয়ার । আমার কাছে যেমন সবগুলোর ভেতরে শালিমার বাগ টা কিছুটা বেটার মনে হয়েছে, সেই হিসেবে আপনি চাইলে আমার সাজেশনে শুধু শালিমার বাগটা ঘুরতে পারেন । অথবা শুধু নিশাত বাগেও যেতে পারেন । চাশমেশাহী বা পরিমহলে যাবার ব্যাপারে আমি কোন সাজেশন দিচ্ছিনা । একইরকম জিনিস বিভিন্নভাবে ঘুরেফিরে দেখতে থাকলে আমাদের মতো বরং কিছুটা বিরক্ত হবার সম্ভাবনা আছে । তাই একটাতে ঢুকে যে ভালোলাগাটুকু পাবেন, সেটাই সঙ্গী হিসেবে রেখে দিন ।

তবে হ্যাঁ আমি কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়টা ঘুরে দেখার জন্য ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবো । আমার ভালো লেগেছে । আমি কোন শ্রীনগর ডে ট্রিপের আর্টিকেলে এই পরামর্শ টা পাইনি । তবে আমার কাছে মনে হয়েছে - এটা যে কারো ভালো লাগবে ।

আলাদাভাবে পুরো একটি দিন দেবার মানে কি ? 

এরমানে হলো শ্রীনগর ডে ট্রিপের জন্য সবাই একটি পুরো দিন ফিক্সড রাখে । আপনি সেটা করবেন না । আপনি যেটা করবেন সেটা হলো যেদিন গুলমার্গ,দুধপত্রী বা সোনমার্গ বেড়াতে যাবেন সেদিন একদম সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টায় বের হবেন লালচক থেকে । এতো সকালে বের হলে আপনি রিলাক্সে সব ঘুরে শ্রীনগরে ফিরতে সর্বোচ্চ  বিকাল তিনটা থেকে চারটা বাজবে ।

আপনার শুধু বিকেলের দুই ঘণ্টাই যথেষ্ট একটা মুঘল গার্ডেন ভালোভাবে ঘোরার জন্য । একদিন মুঘল গার্ডেন ঘুরবেন, আরেকদিন এভাবে সময় বাঁচিয়ে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরবেন ।

এভাবেই আপনি একটি দিন সেভ করতে পারবেন অহেতুক ডে ট্রিপ দেয়া থেকে । শুধু একটু সকালে ভ্রমণ শুরু করতে হবে । লোকে ভ্রমণ শুরু করে সকাল দশটায়, তাই সবার ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । এই হলো আসল কাহিনী । আপনার হাতে যদি অনেক সময় থাকেও তাহলেও আমি আপনাকে ডে ট্রিপে পুরো দিন ব্যয় করার পরামর্শ দেবো না । আপনি চাইলে ঘুমান, চাইলে শপিং করেন , খাওয়া দাওয়া করেন । অথবা অন্যান্য স্বল্পপরিচিত কিন্তু সুন্দর যেসব স্পট আছে যেমন কাশ্মীর ভ্যালি, দুধপত্রী, উলার লেক, ইউশমার্গ যান অথবা পেহেলগামে দুই দিন দিতে পারেন ।


প্রসঙ্গ শিকারা রাইড

কাশ্মীর ভ্রমণের অবশ্য কর্তব্য হিসেবে শিকারা রাইডের কথা খুব শুনেছিলাম । শিকারা কি ? নৌকায় চড়ে লেকের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো । এটা আমার কাছে খুব একটা স্পেশাল কিছু মনে হয়নি । বারকয়েক ঘাট থেকে হাউজবোটে আপডাউন করতে গিয়েই বুঝতে পেরেছি এই শিকারা রাইড কেমন হবে । তাই আর এক্সট্রা এই বিষয়টা আমাদের টানেনি । উপরন্তু আমি নদীমাতৃক দেশের মানুষ । নদীতে ভেসে বেড়ানো নিয়ে কত স্মৃতি আছে । সেখানে এতো দাম দিয়ে এই মরা ডাললেকে ভেসে বেড়ানোটা আমার কাছে আদিখ্যেতাই মনে হয়েছে বরং । আমি এই বিষয়ে পুরোপুরি ডিমোটিভেট করছি না। আপনার ভালো লাগলে ঘুরবেন । তবে একটু দামাদামি করে উঠবেন । অহেতুক অনেক টাকা চায় ওরা । আর আপনি যদি আমার মতো বাজেট ট্রাভেলার হয়ে থাকেন, তাহলে হাসিমুখে এই শিকারা রাইড স্কিপ করতে পারেন ।

লাদাখ ফ্যাণ্টাসিঃ

সবকাজের ভীড়ে আমাদের দুইজনের মাথায় তো সবসময় লাদাখ ঘুরছেই । লাদাখ-লাদাখ করতে করতে শ্রীনগরের শেষ দুই দিন যতটা উপভোগ্য হবার কথা ছিলো - ততোটা হয়নি । লাদাখের জন্য মন খারাপ । ফেসবুকের মাধ্যেম লাদাখের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট গ্রুপ থেকে সবসময় আপডেট নিচ্ছিলাম। সেই আগের মতোই নিউজ; সেটা হলো খুব শীঘ্রই লেহ-মানালি রোড ওপেন হবে । ওপেন আর হয়না । ধুর বাল । এই রোড ওপেন হবার প্রত্যাশাতেই মূলত আমরা কাশ্মীরের ট্রিপটা দীর্ঘায়িত করছিলাম ।

সন্ধ্যার একটু পরেই দুই বন্ধু ডিনার করে নিলাম । এরপরে এসে হোটেলের পাশে ডাললেকের ঘাটে বসলাম । বসেছিলাম মূলত লেকের সৌন্দর্য দেখার জন্যই । কিন্তু এই সৌন্দর্য ফের লাদাখের আলোচনায় গিয়ে ঠেকে । আসলেও সত্যি বলতে পেহেলগাম দেখা ছাড়া আমাদের আর শুধু শুধু কাশ্মীরে অবস্থান করার আর কোন কারণই অবশিষ্ট ছিলো না । এমনিতেই দুইটা দিন একপ্রকার ইউজলেসভাবে কেটেছে । শুধু শুধু খরচ বাড়ছে, ভ্যাকেশনের টাইম ফুরিয়ে আসছে কিন্তু লাদাখের ব্যাপারে ফাইনাল সিদ্ধান্তে আসতে পারছিনা । এতোদিন অবধি আমাদের প্ল্যানিং ঝোলাঝুলির উপরেই ছিলো । এখন ফাইনাল করতেই হবে । দু'জন লেকের ঘাটে আলোচনায় বসে গেলাম ।

আমি রিস্ক নিতে চাচ্ছিলাম না । আমার কথা ছিলো এখানে থেকে ফের সেইম ওয়েতে ব্যাক করে দিল্লি হয়ে উত্তরাখণ্ড যাবো । কিন্তু সুফল নাছোড়বান্দা । সে গেলে লাদাখেই যাবে । ওর কথাতেও যুক্তি ছিলো । কারণ এবার না গেলে আর কোনদিনই এই রুটে যাওয়া হবে না । সেজন্য রিস্ক হলেও সুফল বারবার লাদাখে যাবার ব্যাপারেই জোর দিচ্ছিলো । কিন্তু আমার মন একদমই সায় দিচ্ছিলো না । শেষে সুফলকে সিরিয়াসলি একটা প্রস্তাব দিলাম ।

বললাম যদি আমরা শ্রীনগর থেকে লেহ তে গিয়ে মানালি দিয়ে বের হতে না পারি, ফের যদি শ্রীনগরেই ব্যাক করতে হয় তাহলে এই আপডাউন (২+২=৪দিন) এর সকল খরচ তুই দিবি । সুফল আমাকে অর্ধেক খরচ দিতে চাইলেও আমি রাজি হলাম না । আমি বললাম তুই পুরোটা দিবি । অনেক সময় নিয়ে ভাবলো সে । অবশেষে ওর জেদেরই জয় হলো । শালা তাও লাদাখে যাবেই । আমার সব খরচ দিতে রাজি হলো সত্যি সত্যিই ।

অবশেষে আমরা একটা সিদ্ধান্তে এলাম । আগামীকাল পেহেলগাম ঘুরে এসে পরশু ভোরে আল্লাহর নাম নিয়ে লেহ অভিমুখে যাত্রা শুরু করবো । যে সিদ্ধান্তের মহানায়ক ছিলো বন্ধু সুফল । সমস্ত কৃতজ্ঞতা এই জেদী বন্ধুটার জন্য । হেরে গেলে কি হতো সেটা তো জানিনা, কিন্তু জিতে গিয়ে কি অসম্ভব সুন্দর কিছু মেমোরি ক্রিয়েট করার সুযোগ সে আমাকে দিয়েছে - সেটা এককথায় প্রকাশ করা সম্ভব না । অনেক বেশি ভালোবাসা থাকবে এই ছেলেটার জন্য । 


আজকের খরচঃ(০৫/০৬/১৯)

১। ডালগেট - বালমসজিদ = ২৫/-
২। বাল মসজিদ - ডালগেট = ২০/-
৩। ডালগেট - নিশাত বাগ = ৪০/-
৪। নিশাত বাগ এন্ট্রি ফি = ৫০/-
৫। নিশাত বাগ - চাশমেশাহী = ১০০/-
৬। চাশমেশাহী প্রবেশ ফি = ৫০/-
৭। চাশমেশাহী - হোটেল = ৩০/-
৮। খাওয়া = ৩৭০/-
৯। হোটেল ভাড়া = ৪২৫/-

মোটঃ ১১১০ রুপী 















মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কম খরচে কাশ্মীর-লাদাখ-মানালি ভ্রমণ

১০৫০ টাকায় ঢাকা থেকে চারদিনের রাজশাহী+নওগাঁ সফর

একাদশ পর্বঃ ১২,৮২৭ টাকায় ১২ দিনে ঢাকা থেকে কাশ্মীর ভ্রমণ (বিশেষ পর্ব)