প্রথম পর্বঃ গন্তব্য কলকাতা

কলকাতা


ঢাকা থেকে প্রস্থানঃ(২৮/০৫/১৯)

২৮ তারিখ রাতে যথাসময়ে চলে গেলাম রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে । ঈদের বাকি আরো ৭ দিন । ঘরমুখো মানুষের ভীড় শুরু হয়েছে একটু একটু । আমি গাবতলী গিয়ে সুফলের জন্য অপেক্ষা করছি । অতীতের সবগুলো ট্যুরের মতো আজকেও সে লেটেই এসে হাজির হলো গাবতলীতে । যাহোক, তাও ভালো বাস ছাড়ার আগেই এসেছে । বাসে উঠে পড়লাম দুই বন্ধু । বরাবরের মতো আমি জানালার পাশে, আর ও করিডোরের সিটে বসলো । রাত বাজে প্রায় ১১ টার মতো । এরপরে হানিফের টান শুরু হলো । রাস্তা প্রায় ফাঁঁকাই ছিলো । চোখ খুলেই দেখলাম আমরা চলে এসেছি ফেরিঘাটে । দীর্ঘ সিরিয়াল পার করে ফেরি পার হতে হতে আমাদের অনেক সময় লেগে গেলো । সুফলের আম্মা আমাদের দুইজনের জন্য নাস্তা দিয়েছিলেন, গাড়িতে বসেই সেগুলো খেলাম দুই বন্ধু মিলে । 

২৯ তারিখ একদম ভোর বেলায় গিয়ে বেনাপোলে পৌঁঁছলাম । সেখানে থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা হারে অটো ভাড়া দিয়ে চলে গেলাম বর্ডারে । দুইজনে ট্রাভেল ট্যাক্স আর এন্ট্রি ফি দিলাম মোট ১০৯০ টাকা । এরপরে চলে গেলাম ইমিগ্রেশনে । কোন দালালের সহযোগিতা ছাড়া নিজেরাই সকল প্রসিডিউর শেষ করে চলে গেলাম ইণ্ডিয়ান কাস্টমসে । সেখানে লাগেজ+পাসপোর্ট চেক করে যেখানে সেখানের এক বজ্জাত অফিসার সুফলকে ধমক দিয়েই আমাদের দুইজনের কাছে থেকে ২০০ টাকা নিলো । সুফলও কথা না বাড়িয়ে দিয়ে দিলো । শালার মেজাজ আবার খারাপ হয়ে গেলো । হুদাই তুই টাকা দিবি ক্যান । 

যাহোক, এভাবেই ইমিগ্রেশনের সকল কাজ শেষ করে চলে গেলাম পেট্রাপোল, ভারতে । ঘড়িতে তখন সম্ভবত সাড়ে আটটা বাজে । আধাঘণ্টা পিছিয়ে দিলাম । বেজে গেলো আট টা । শুভ সকাল ভারত । 


বেনাপোল থেকে কলকাতাঃ(২৯/০৫/১৯) 

বেনাপোলে পৌঁঁছেই দুই বন্ধু ছড়িয়ে গেলাম দুই দিকে । সবগুলো দোকান খুঁঁজে সবচেয়ে বেশি রেট দিলো যে তার কাছে থেকে টাকা ভাঙ্গিয়ে নিলাম । রেট পেলাম ১০০ টাকায় ৮৩.৬৫ রুপী ।  

এই বিষয়টা আমি সবসময় গুরুত্ব দেই । আমাদের দুইজনের কাছে টাকা ছিলো মোট ৭৫,০০০ । যদি রুপী করার সময়ে শতকরা ২০ পয়সা করেও কম পাই তাহলে ৭৫০০০ টাকায় লস যায় ১৫০ রুপী । একটু সতর্ক হলেই এই ক্ষতিটা কমানো যায় । 

বেনাপোল থেকেই আমাদের ভিসা, পাসপোর্ট ফটোকপি করিয়ে নিলাম কয়েক কপি । এরপরে দ্রুত প্রস্থান করলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে । যত দ্রুত কলকাতায় গিয়ে ফেয়ারলি প্লেসে যেতে পারবো, ততোই সেদিনের ট্রেনের টিকিট পাবার সম্ভাবনা বাড়বে । সেই উদ্দেশ্যেই উঠে পড়লাম বনগাঁঁগামী অটোতে । অটোভাড়া জনপ্রতি ৩০ রুপী । বনগাঁঁ নেমেই জনপ্রতি ২০ রুপী হারে টিকিট কেটে উঠে গেলাম কলকাতাগামী বনগাঁঁ লোকালে, যেটা কলকাতার শেয়ালদা স্টেশনে থামে । এই ট্রেনের জার্নি সবসময়ই বেশ কষ্টদায়ক । কারণ সবসময়ই প্রচুর ভীড় লেগেই থাকে । প্রায় ৮০ কিলোমিটার যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা, সেই হিসেবে ভাড়া একদম কম । 


ফেয়ারলি প্লেসঃ

শেয়ালদা নেমেই সেখানে থেকে ফেয়ারলিপ্লেস গামী বাসে উঠে পড়লাম । ভাড়া জনপ্রতি ৯ রুপী । আজকে বসে বসে যত দ্রুত লিখছি, ফেয়ারলি প্লেসে মোটেও ততো দ্রুত যাওয়া হলো না, যদিও অনেক চেষ্টা করেছিলাম। যাহোক, যখন ফেয়ারলি প্লেসে গেলাম তখন প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে । মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো । এই জায়গাতে প্রতিবারই যত দ্রুতই আসতে চাইনা কেনো, কিভাবে যেনো দেরি হয়ে যায় । যাহোক, টিকিট কাটার জন্য ফরম এবং টোকেন সংগ্রহ করলাম । 

মনে রাখবেন, টিকিট কেনার জন্য কিন্তু মোবাইল নম্বর লাগে । আর লাগে পাসপোর্ট এবং ভিসার (ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের ডিপার্চার সিল এবং ভারতের এরাইভাল সিলের সহ) ফটোকপি । সঠিক পাতাটা কপি করা হলো কিনা নিজে যাচাই করে নেবেন, আমার ভুল হয়েছিলো এই কাজে । আমার পরামর্শ হলো, ভারতে প্রবেশ করেই বেনাপোল থেকেই একটা সিম নিয়ে নেবেন । ২৪ ঘন্টা পরে রান হবে, এমন সিম না । ইন্সট্যান্ট রান করে নিয়ে নেবেন । কয় টাকা বেশি গেলেও তাই করবেন । কারণ ২৪ ঘন্টা পরে এক্টিভ হবার কথা বলে সিম বিক্রি করলেও অনেক সিমই পরে আর এক্টিভ হয়না । আর টাকাও বর্ডার থেকেই কনভার্ট করে নেবেন । অনেকেই সিম কেনা এবং টাকা কনভার্ট করার জন্য কলকাতা নিউ মার্কেটের পরামর্শ দিয়ে থাকেন । এই বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভালো না । তাই বর্ডার থেকেই এই কাজগুলো করা ভালো । ফটোকপিও এখানে থেকেই করাবেন পারলে । কারণ এখানে থেকে না করালে ফেয়ারলি প্লেসের সামনে থেকে করাতে হবে, যেখানে খরচ কিছুটা বেশি ।

যাহোক, আমাদের আল্টিমেট গন্তব্য হলো জম্মুগামী কোন ট্রেন । কিন্তু সেই ট্রেন এভেইলেবল না। যদি জম্মুর ট্রেন না পাই, বা দেরি হয় তাহলে দিল্লি দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাবো, যাতে সময় নষ্ট না হয় । সাড়ে তিনটার দিকে কাউন্টারের সেই পূর্ব পরিচিতা দিদির কাছে গিয়ে বসলাম দুই বন্ধু । জানতে পারলাম আগামীকালের জম্মুগামী জম্মু তাওয়াই এর টিকিট হবে । আরো জানতে পারলাম, সেদিনের-ই দিল্লিগামী কালকা মেইলের টিকিটও পাওয়া যাবে ফরেইন কোটায় । আমাদের আর পায় কে । ইন্সট্যান্ট দিদিকে দিল্লির টিকিট কেটে দিতে বললাম । কারণ দিল্লি থেকে বাসে বা ট্রেনে কোন সময় অপচয় না করেই আমরা কোন না কোনভাবে জম্মু যেতেই পারবো । বাট জম্মু তাওয়াই এর জন্য অপেক্ষা করলে একটি দিন অতিরিক্ত কলকাতায় থাকতে হবে । যেটা কোনমতেই কাম্য নয় । দিদি জানালেন, আর আধাঘন্টা দেরি করলে সেদিনের টিকিট আর পেতাম না । কারণ প্রতিদিন চারটার সময় শুধুমাত্র সেই দিনের সকল ট্রেনের ফরেইন কোটার টিকিট কাটার শেষ সময় । 

টিকিট কাটা শেষে খুব হালকা বোধ হলো । থ্রি টায়ার ননএসি স্লিপার, কলকাতা টু দিল্লি, কালকা মেইল, জনপ্রতি ভাড়া ৮৮৫ রুপী । টিকিট হাতে পেয়ে খুব খুশি খুশি লাগছিলো । একটুও সময় অপচয় হলো না । ট্রেন সেদিনই রাত ৭ টা ৪০ মিনিটে । 


ট্রেনের জন্য অপেক্ষাঃ 

টিকিট কাটা শেষে কলকাতার রাস্তায় বের হলাম । প্যারা নাই আর । চিল । ইজি মুডে হাঁঁটাহাঁঁটি করছিলাম দুই বন্ধু । দেশে থেকে এক বন্ধু মোবাইল কিনতে দিয়েছিলো । আমাদের কাছেও ফটো তোলার মতো ভালো কোন ফোন ছিলো না । তাই ফোন কেনাই এখন প্রথম টার্গেট ছিলো । সেখানে থেকে হেঁটেই চলে গেলাম নিকটস্থ মোবাইল মার্কেটে । নিয়ে নিলাম একটা ফোন । হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম নেহেরু স্ট্রীটে । বলে রাখি, আমরা দেশে থেকেই একটা ভারতীয় সিম নিয়ে গিয়েছিলাম । ইন্ডিয়াতে গিয়ে সেটাই এক্টিভ করি । ১০০ রুপী লোড দিলাম । 

এভাবেই আমাদের ট্রেনে চড়ার সময় চলে এলো । সেখানে থেকেই চলে গেলাম হাওড়া স্টেশনে । লম্বা ভ্রমণের জন্য কিছু এক্সেসরিজ যেমন - জ্যাম, পাউরুটি, সাবান, শ্যাম্পু, পেস্ট কিনে নিলাম । হাওড়া স্টেশনের পাশেই একটা মুসলিম হোটেল আছে । বারেবারে সেখানে গিয়েই খাই । আজকেও তাই করলাম । ট্রেনের খাবার এভয়েড করতে সেই হোটেল থেকেই কিছু খাবার পার্সেল নিলাম । সব কাজ শেষে চলে গেলাম স্টেশনের ভেতরে । সারাদিন গোসল করিনি । তার উপরে ধকলও কম যায়নি । হাওড়া স্টেশনে ১০ রুপীর বিনিময়ে গোসলের ব্যবস্থা রয়েছে । আমি মাঝেমাঝেই সেখানে গোসল করি । যাহোক, সেদিনও গোসল করে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম প্ল্যাটফর্মে । দেখি সুফল আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য। দুই বন্ধু মিলে উঠে গেলাম আমাদের কালকা মেইলে । গন্তব্য এখন জম্মু>ভায়া দিল্লি । 


আজকের খরচঃ (২৯/০৫/১৯) 

ঢাকা-বেনাপোল(বাস) = ১২৪০ টাকা 
বেনাপোল-বর্ডার(অটো) = ২০ টাকা 
ট্রাভেল ট্যাক্স+এন্ট্রি ফি = ১০৯০ টাকা 
বর্ডারে উৎকোচ = ২০০ টাকা 
মোট = ২৫৫০ বাংলাদেশী টাকা । 

১০০ টাকায় ৮৩.৬৫ রুপী হিসেবে 



১। ২৫৫০ টাকা=২১৩৩রুপী 
২। পাসপোর্ট-ভিসা ফটোকপি= ৩০রুপী 
৩। বর্ডার-বনগাঁ = ৬০ রুপী 
৪। বনগাঁ-শেয়ালদা = ৪০ রুপী 
৫। শেয়ালদা-ফেয়ারলি প্লেস= ১৮রুপী 
৬। হাওড়া-দিল্লি(ট্রেন) = ১৭৭০রুপী 
৭। নেহেরু স্ট্রীট - হাওড়া = ১৮রুপী 
৮। ডিনার+পার্সেল = ২০০রুপী 
৯। সিম রিচার্জ= ১০০রুপী 
১০। এক্সেসরিজ + খাওয়াদাওয়া= ১৮৫রুপী 

মোট= ৪৫৫৪ রুপী । 

















মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কম খরচে কাশ্মীর-লাদাখ-মানালি ভ্রমণ

১০৫০ টাকায় ঢাকা থেকে চারদিনের রাজশাহী+নওগাঁ সফর

একাদশ পর্বঃ ১২,৮২৭ টাকায় ১২ দিনে ঢাকা থেকে কাশ্মীর ভ্রমণ (বিশেষ পর্ব)