দ্বাদশ পর্বঃ লাদাখের পথে - ১

শ্রীনগর টু লেহ রোড ট্রিপ 

Trip to Dreamy Ladakh(০৭/০৬/১৯)

দুই বন্ধু ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম । উঠেই ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ প্যাক করে নিলাম । একই হোটেলে ছিলাম ৩ দিন । হোটেলের স্টাফদের থেকে সবরকম সহযোগিতা পেয়েছি আমরা । এই তিনদিনে অনেক আন্তরিকতা হয়ে গেছে তাদের সাথে । যাহোক, তাদের থেকে বিদায় নিয়ে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম দুইজন । হেঁটেই চলে গেলাম TRC তে । 

গিয়ে দেখি বাস দাঁড়িয়ে আছে । এটা আমাদের BRTC এর মতো জম্মু-কাশ্মীর এর একটি সরকারী বাস, পুরো নাম জম্মু-কাশ্মীর স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন(JKSRTC). শ্রীনগর থেকে লেহ (৪২৪কি,মি)- দুই দিনের কানেক্টেড ট্রিপে এই বাসের ভাড়া ৯০০ রুপী । শেয়ারড ট্যাক্সিতে চড়ে একদিনেই যাওয়া যায় এই পথ, ভাড়া লাগে কমবেশি ২০০০-২৫০০ রুপী ।

আমাদের বাস 
যাহোক,এই  বাসে উঠেই ইম্প্রেশন খারাপ হয়ে গেলো । বেশ অপরিচ্ছন্ন এবং অবহৃত অভ্যন্তরীন সজ্জার একটি বাস । দুই বন্ধু বাসে উঠে দুইটা আসন পরিষ্কার করে বসে গেলাম । অর্ধেক বাস খালি, বেশ কয়েকজন বিদেশী নাগরিক বাসে । এই বাসে চড়ে দুই দিন টানা জার্নি করে লাদাখ যাবো, ভাবতেই পারছিলাম না । সহযাত্রীরাই বা কতদূরে যাবে সেটাও বুঝতে পারছিলাম না । অনিশ্চিত যাত্রায় খুশি-অখুশির ফিল টা ছিলোনা সেরকম । যাহোক, এক প্রকার নিউট্রাল মুড নিয়েই বাসে বসে গেলাম । 

শ্রীনগর টু লেহ রোডম্যাপঃ

ট্রান্স হিমালয়ান সাফারির এই অংশটাই ছিলো লাদাখের প্রতি আমার প্রথম প্রেমের শুরু । এরকম একটি বাসে চড়ে এতো লম্বা একটি ট্রিপ যে এতোটা উপভোগ্য হতে পারে তা কোনদিন ভাবিনি । যাহোক, এই রুটে অনেক উল্লেখযোগ্য কিছু জায়গা আছে । আমি গুগল ম্যাপের স্ক্রিনশট দিয়ে সেই জায়গাগুলোর অবস্থান তুলে ধরতে চেষ্টা করছি । এতে করে আমার লেখনীটা ভালোভাবে ফিল করতে পারবেন  আপনারা ।

শ্রীনগর টু লেহ রোড ট্রিপ (গুগল ম্যাপ) 
এই রুটের কিছু বিখ্যাত জায়গা আমি ম্যাপে উল্লেখ করে দিয়েছি । তারমধ্যে তিনটি উল্লেখযোগ্য Highest Motorable Pass রয়েছে । এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলো Zojila Pass যার উচ্চতা হলো 3,528 meters (11,575 ft) , এছাড়া আছে Namika La Pass (Height 3,700 m or 12,139 ft) এবং Fotu La Pass (Height 4,108 m or 13,478 ft)। গল্পে গল্পে ধারাবাহিকভাবে সবগুলো জায়গা চলে আসবে । 


শ্রীনগর টু সোনমার্গঃ (৮২কি,মি)

ঠিক সাতটায় বাস নড়েচড়ে উঠলো । মধ্যবয়সী একজন লোক ছিলেন আমাদের চালক । হিমালয়ের পথে ড্রাইভিংয়ে বহু বছরের অভিজ্ঞতায় হাড় পাকিয়ে ফেলেছেন একেবারে । তার হাত স্টিয়ারিং এ পড়া মাত্রই বাস এগোতে শুরু করলো তার নিজ গতিতে । শ্রীনগরকে পেছনে ফেলে নিউট্রাল একটা মুড নিয়ে জানালার পাশের একটা আসনে বসে এগোতে শুরু করলাম আমি তথা আমাদের বাস ।




শুরু হলো অনিন্দ্য সুন্দর একটি ভ্রমণ - যা সারাজীবন আমি গল্প করে বলতে পারবো সবাইকে । এই ব্লগটা সেই গল্পের একটা লিখিত রুপ হিসেবেই নাহয় থেকে সারাজীবন । অনেক বছর পরে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যখন আমাদের এই বয়সে আসবে, তারা নিজেদের প্রেরণা খুঁজে নেবে এই গল্পগুলো থেকে । তারা বুঝতে শিখুক - জীবন মানে শুধুই বেঁচে থাকা নয়, নয় শুধু আফসোস করা । জীবন মানে নিজের সীমাবদ্ধতাটুকু মেনে নিয়েই নিজের প্যাশনকে আগলে রাখা । এই গল্পগুলো তাদের শেখাবে কিভাবে জীবনকে ভালোবাসতে হয়, শেখাবে কিভাবে ভালোবাসাকে সামনে রেখে তবেই পথ চলতে হয় । আজকে আমি দরিদ্র দশায় থেকেও যে জিনিস টা খুব বেশি ফিল করতে পারি সেটা হলো মৃত্যুর আগ মুহুর্তে প্রাচুর্যতা কখনোই আমার খুশির কারণ হবে না, যদি কোনকিছু সেদিন আমাকে তুষ্ট করতে পারে সেটা হতে পারে এই মেমোরিগুলোই । আল্লাহর কাছে আমার একান্তই ইচ্ছে আমি জীবনের শেষ দিনে যেনো বলতে পারি - Yes, I lived! 

যাহোক, সেই পূর্বপরিচিত পথ ধরেই বাস এগোতে শুরু করলো । আনমনে জানালার পাশে বসেই দেখছিলাম সিন্দ নদীর বয়ে চলা । নির্বিকার ভাবটা তখনো লেগে আছে চোখেমুখে । প্রায় ঘণ্টা তিনেক বাদে বাস গিয়ে সোনমার্গে পৌঁছায় । সেখানে আমরা সবাই নেমে ব্রেকফাস্ট করি । কিছুক্ষণ আড্ডা দেই, এরপরে ফের বাসে উঠে যাই । 



সোনমার্গ থেকে যোজিলা পাস হয়ে কার্গিলঃ(১২৩কি,মি)

এই রুটের অপরিচিত অংশ শুরু হলো সোনমার্গ থেকে । তখনো জানিনা সামনে কেমন লাগবে বা আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে । সোনমার্গ থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে যোজিলা পাস এর অবস্থান । এই  পথটুকু যেতে আমাদের প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগেছে । আমরা যারা সাজেক বা বান্দরবানের গহীনে গিয়েছি, পাহাড়ি পথের ব্যাপারে তাদের কিছুটা আইডিয়া আছে । এর তুলনায় হিমালয় রেঞ্জের ব্যাপার টা একটু আলাদা । সেটা হলো এখানে পাহাড় কেটে বানানো রাস্তাগুলো আমাদের দেশের মতো মোটেও এক্সট্রিম লেভেলের খাড়া না এবং এই রুটে সেরকম গাছপালা নেই কিন্তু গরম তো নেই-ই, উপরন্তু আছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা । এই পথ ধরে বিশাল বিশাল লোডেড ট্রাক টুকটুক করে বেশ আরামেই চলতে পারে । এই পথগুলো বানানো হয়েছে এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই । এজন্য মাঝে মাঝেই ছোট বড় অসংখ্য লুপের দেখা মেলে এই পথে । লুপ জিনিসটা কেমন যে সোজা খাড়া গেলে হয়তো অল্প একটু পথ, কিন্তু সেই অল্প পথটুকুই পাহাড়ের গা বেয়ে কয়েক প্যাঁচ দিয়ে উপরে-নীচে সংযোগ স্থাপন করেছে । ভারত সরকারের এই শ্রীনগর-লেহ-মানালি রোড বানাতে যে কি ফাটাই ফেটেছে তা আল্লাহ পাক ভালো জানেন । তাছাড়া প্রতি বছর এসব রাস্তা সংস্কারের জন্য একটা হিউজ লেভেলের বাজেট লাগে । এরকম বিশাল বিশাল পাথুরে পাহাড় কেটে বানানো রাস্তাগুলো দেখলে সবারই একটা কথা শুরুতে মাথায় আসে , সেটা হলো এই পথগুলো বানালো কিভাবে রে ভাই ! This is something like extreme & unbelievable. 

লাদাখের পথে

এই পথে যখন গাড়ি চলছিলো পুরোটা সময় হা করে শুধু দেখেছি চারপাশটা । মাঝে মাঝে অবশ্য বেশ ভালো জ্যাম পড়ে । দীর্ঘসময় গাড়ি জ্যামে বসে থাকে । ঢাকার জ্যামের সাথে এতোটুকুই পার্থক্য - এই জ্যামটা খুব কিউট । গাড়ি জ্যামে আটকালেই আমি আর সুফল লাফ দিয়ে পথে নেমে যেতাম গাড়ি থেকে । আশেপাশে দেখতাম আর দুই বন্ধু গল্প করতাম ।

পুরো কাশ্মীরে একটা যুদ্ধ-যুদ্ধ সাজ সবসময় দেখা যায় । সৈনিকরা সবসময় একটা ট্রায়ালে থাকে - দেখে এমনই মনে হয় । মাঝে মাঝেই এই রাস্তায় ওদের কনভয় নজরে আসে । একটা কনভয় যখন পাস করে তখন সকল সিভিল ট্রান্সপোর্টার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে । একটা কনভয়ে অসংখ্য গাড়ি থাকে । সবগুলো গাড়ি পাস করতে করতে একটা লম্বা সময় বাকিদের অপেক্ষা করতে হয় । 

হিমালয়ের ট্রাফিক জ্যাম

এভাবেই কখন যোজিলা পাসের কাছে চলে এসেছি মনেই করতে পারিনা । জার্নিটা ভালো লাগতে শুরু করেছে কিনা তাই । সেখানে আমাদের কোন যাত্রাবিরতি ছিলো না । দেখলাম অনেক দর্শনার্থী সেখানে বেড়াতে এসেছে । খুব আনন্দ উল্লাস করছে সবাই । চারপাশে অনেক বরফ ছিলো । গুলমার্গ বা সোনমার্গের মতো এখানেও নানারকম আইস-এক্টিভিটি চলছিলো । হালকা জ্যামে পড়ে এসব বেশ ভালোভাবেই দেখেছিলাম । 

বাসে বসে আমরা দুই বন্ধু গল্প করছিলাম আর চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছিলাম । একসময় ঘটনাপ্রসঙ্গে তিনজন আংকেলের সাথে পরিচয় । বাসের মাঝে বাংলায় কথা বলে কারা রে - এই প্রসঙ্গ ধরেই মূলত আমাদের পরিচয় । ওনারা তিনজন আর আমরা দুইজনই ছিলাম কেবল বাঙ্গালি, তাই ৫জনে জমে গেলো খুব । 


তিন আংকেলের সাথে আমরা দুইজন


Age is just a number - এই কথাটা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি ষাটোর্ধ এই তিন বয়োজ্যেষ্ঠর সাথে মিশে। পিন্টু, দিলীপ এবং সঞ্জয় আংকেল ৷ ওনাদের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা তে । প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এই তিন বাল্য বন্ধু একসাথে হলেই একদম বাচ্চাদের মতো আচরণ শুরু করেন ৷ এর মধ্যে আবার দুই বন্ধু চিরকুমার। সুযোগ পেলেই এই তিনজন মিলে ছুটে বেড়িয়েছেন ৩২ লক্ষ বর্গকিলোমিটারে একটি দেশের কোণায় কোণায় । তাদের সাথে একটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার সুযোগ হয়েছে। ভালো লেগেছে তাদের বয়সের আড়ালে লুকিয়ে থাকা টগবগে তারুণ্য দেখে ৷ ধীরে ধীরে বাকি বিদেশীদের সাথেও সখ্যতা হচ্ছিলো একটু একটু করে । সবাই বেশ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েই ভ্রমণ করছিলাম একসাথে । 





যোজিলা পাস থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের একটা জায়গার নাম মিনামার্গ । এখানে থেকেই মূলত কার্গিল জেলা তথা লাদাখ বিভাগের শুরু । বেলা তিনটার দিকে আমাদের বাস মিনামার্গে পৌঁছায় । যেখানে লেখা ছিলো এটাই পৃথিবীর দ্বিতীয় শীতলতম স্থান যেখানে মানুষ বসবাস করে । সেখানে বাস থেকে নেমে সকল বিদেশীদের পাসপোর্ট নথিভুক্ত করা হয় এবং নাম, ঠিকানা নেয়া হয় । বলে রাখা ভালো, এই জায়গাগুলো পুরোটাই সেন্সিটিভ । কারগিল ওয়ারের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই জায়গাগুলো । যাহোক, সেখানে এসব করতে করতেই প্রায় আধাঘণ্টা লেগে যায় । 




কাজ শেষ করে এরপরে ফের বাসে উঠি । বাস চলতে শুরু করে । ভালোই লাগছিলো এই পথচলা । ক্লান্তি-শ্রান্তির কোন বোধই ছিলো না। বিদেশীদের সাথে ইতোমধ্যে বেশ সখ্যতা হয়ে গেছে । বেশ আড্ডা দিচ্ছিলাম সবাই মিলে । 

বিদেশী সহযাত্রী
বাসের মাঝে বিদেশী হিসেবে আমরাই দুইজন ছিলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ । কারণ আমরা দুইজন বাদে বাকিরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিক । বাম থেকে যথাক্রমে তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স এবং হাঙ্গেরির নাগরিক তারা । বাসের মাঝে টেকো মাথার আরেকজনকে দেখা যাচ্ছে, উনি জার্মান , কারো সাথে তেমন মেশেন না । ভেবে অবাক হলাম এতো মানুষ এতো দূর দূর থেকে এভাবে একা একাই কিভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে !  


মিনামার্গ থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে Dras শহরটি । সেখানে থেকে আরো ৬৪ কিলোমিটার দূরে Kargil শহর অবস্থিত । সুতরাং আমাদের এই ভ্রমণ শেষ হতে এখনো অনেক দেরি । এই দূরত্বগুলোতে অতিক্রান্ত সময় সাধারণ সমতল ভূমির রাস্তার অনুপাতে মাপলে মিলবে না । এই রাস্তায় অনেক বেশি সময় লাগে । গুগল ম্যাপে যে সময় শো করছে, সেটা ট্যাক্সিতেও মোটামুটি অসম্ভব । আমার মনে হয় শ্রীনগর থেকে লেহ ট্যাক্সিতে যেতে কমপক্ষে ১৫ঘণ্টা+ লাগবে । আর বাসে তো দুইদিন । 

যাহোক, সেই বাস চলছে তো চলছেই । আমি মাঝপথে নেমে একবার বাসের জানালা পরিষ্কার করা শুরু করছিলাম । বাইরের প্রকৃতির সামান্য ঘোলা রুপও সহ্য হচ্ছিলো না। প্রায় ১২ ঘণ্টা টানা ভ্রমণের পরে আমরা গিয়ে পৌঁছাই কার্গিল শহরে । সেই বিখ্যাত যুদ্ধাহত একটি নগরী - কার্গিল । 

আগে থেকেই একটা ব্যাপারে খুব শুনে এসেছি যে হাই আল্টিটিউডের জন্য লেহতে বাইরে থেকে দর্শনার্থীরা এলে অনেকেই শুরুতে শ্বাসকষ্টে ভোগে । তো এই ব্যাপার টা মাথায় ছিলো আমার । এমনিতে আমি নাজুক টাইপের ট্রাভেলার না। এক্সট্রিম সিচুয়েশন বেশ ইজিলিই হ্যান্ডেল করতে পারি । কিন্তু গত বছর মানালি থেকে দিল্লি যাবার পথে কোন একটা কারণে আমি বাসে থেকে বমি করেছিলাম । সেই ছোটবেলার পরে এই প্রথম জ্ঞান হবার পরে চলতি পথে বমি করলাম। সেই থেকে নিজের প্রতি ওভার কনফিডেন্স কমে গিয়েছে । এইবার আবার একটু নার্ভাস হয়ে গেলাম । মনে হচ্ছিলো প্রেশার ফল করছে । চোখমুখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো, চোখের সামনে ফুলকির মতো দেখছিলাম, মাথাব্যথা, বুকে চাপ অনুভব করছিলাম... অবস্থা মেজর কিছু না, কিন্তু মনে হচ্ছিলো এই অবস্থায় বাস যদি আরো লং টাইম চলতেই থাকে, তাহলে সমস্যায় পড়ে যাবো । কিন্তু অল্প কিছুক্ষণ পরেই আমরা কার্গিলে এসে নামলাম । নেমেই আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়েই ইজি হয়ে গেলাম । ইজি হয়েই একটু কনফিউজড হয়ে গেলাম । এই সামান্য অসুস্থতা আবার আমার ভাবনায় রয়ে যাওয়া "লাদাখে যাবার সময়ে শ্বাসকষ্ট হয়" বিশ্বাসের মানসিক ইফেক্ট নয়তো ?  নাকি সত্যিই একটু সিক হয়ে পড়েছিলাম । যাহোক, তবুও ভয় রয়েই গেলো ! কার্গিলে এসেই এমন কাহিল হয়ে যাচ্ছিলাম, লেহ তো এখনো যাই-ই নাই । 

আজকের রাতে থাকবো এখানে । ড্রাইভার আংকেলের পরিচিত এক হোটেলেই উঠলাম সবাই । হোটেলের দুই ভাই আমাদের সার্ভিস দিচ্ছিলেন আর কি । বাস থেকে কিছুদূর গিয়েই আমরা সবাই একসাথে সেই হোটেলে উঠলাম । আমি, সুফল, একজন ন্যাটিভ এবং সেই হাঙ্গেরিয়ান উঠলাম এক রুমে । ভাড়া দিতে হবে জনপ্রতি ২০০ রুপী । আমরা দুইজন ৩৫০ রুপী দিয়েছিলাম অবশ্য । রুমে উঠেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম । সারাদিনে বিশেষ কিছু খাওয়া-দাওয়া না হলেও তেমন সমস্যা হয়নি সত্যি বলতে । জার্নিতে সেভাবে পেটের দিকে নজর ছিলো না । কিন্তু এখন ফ্রেশ হবার পর টের পেলাম সারাদিন ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া হয়নি । 

ভারতে বেড়াতে গেলে এই ভেজ-ননভেজ সমস্যার জন্য ভালো লাগে না । সবজায়গায় একই সমস্যা । এদিকে আমরা ননভেজ ছাড়া বেশিদিন থাকতেও পারিনা । তাই হোটেলের সেই ভাইটি আমাদের একটা ননভেজ হোটেলে নিয়ে গেলেন । ওয়াও ! অস্থির ব্যাপার । কাশ্মীরী ওয়াজওয়ানের প্রেমে পড়ে গেছি অলরেডি । সেখানে এই আইটেম আছে শুনে এক বাক্যে দুই বন্ধু অর্ডার দিলাম । ভেবেছিলাম না জানি কত দাম হয় খাবারের ! কিন্তু আমরা ভুল ছিলাম। দুই বন্ধু কয়েক প্লেট ভাত খেলাম,সাথে সবজি এবং বিশাল সাইজের ওয়াজওয়ান - সবমিলিয়ে মাত্র ১০০ রুপী জনপ্রতি । সুস্বাদু ছিলো খাবারটা, খুব তৃপ্তি নিয়ে খেলাম দুইজন । হোটেলে এসেই ঘুম । কারণ আগামীকাল ভোর ৫ টার সময় কার্গিল থেকে লেহ অভিমুখে আমাদের বাস ছেড়ে যাবে । 


আজকের খরচঃ (০৭/০৬/১৯) 


১। শ্রীনগর-লেহ(বাস) = ১৮০০/- 
২। খাওয়া =৩২০/-
৩। কার্গিলে হোটেলে থাকা = ৩৫০/-  


মোটঃ ২৪৭০ রুপী











মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কম খরচে কাশ্মীর-লাদাখ-মানালি ভ্রমণ

১০৫০ টাকায় ঢাকা থেকে চারদিনের রাজশাহী+নওগাঁ সফর

কম খরচে সিমলা-মানালি ভ্রমণ