ষোড়শ পর্বঃ লাদাখ সফরে জ্ঞাতব্য বিষয় (বিশেষ পর্ব)
![]() |
কয়েকটি উচ্চতম পাস |
Ladakh:
লাদাখ হলো এডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য তীর্থস্থান স্বরুপ । বাইকারদের জন্য এটা স্বপ্ন আর ট্রাভেলারদের জন্য এটি একটি নেশা । পৃথিবীর অন্যতম সেরা দ্রষ্টব্য স্থান হলো লাদাখ । লাদাখ সফরের অনুভূতিগুলো এতোটাই তীব্র হয় যে সারাজীবন এই স্মৃতিগুলো আপনাকে হাসাবে, কাঁদাবে আর নস্টালজিয়ায় ভোগাবে ।
লাদাখ শব্দটির অর্থই হলো - "Land of High Passes". La শব্দের অর্থ এখানে Passes. আপনারা একটা জিনিস খেয়াল করবেন হয়তোবা । লাদাখ বাদে ভারতের অন্যান্য প্রদেশে যত উচ্চতম পাস রয়েছে, তাদের কোনটির শেষে লা শব্দটি নেই । কেবলমাত্র লাদাখে অবস্থিত প্রতিটি পাসের নামের শেষে La সাফিক্স রয়েছে । এই লা দিয়েই আসলে পাস প্রকাশ করা হয় । যেমন - বারালাচা লা, খারদুং লা, চ্যাং লা, ট্যাগলাং লা ইত্যাদি ইত্যাদি । আমরা এরসাথে আবার নিজেরা পাস শব্দ যুক্ত করে সাধারণত ডেকে থাকি । যেমন বারালাচালা পাস, খারদুংলা পাস ... এরকম আর কি । আসলে হওয়া উচিত এমন - বারালা পাস, চ্যাং পাস, খারদুং পাস...। মানে ব্যাপারটা "ক্যাচ ধর" এর মতোই আর কি ।
Ladakh কে কেউ যদি Ladak বলে উচ্চারণ করে, তার আবার ভুল ধরবেন না যেনো । কারণ তিব্বতের মানুষের কাছে এটি সাধারণত লাদাক নামেই বেশি পরিচিত । সেই বিখ্যাত সিল্ক রোড কিন্তু লাদাখের মধ্য দিয়েই চলে গেছে । ইউরোপ, চীন, ভারত, ফার্সি আর আরবের সভ্যতার উন্নয়নে এই পথের ব্যাপক অবদান রয়েছে ।
আপনারা লাদাখের পথে চলার সময়ে একটু পরপরে সুন্দর সুন্দর সেফটি বিষয়ক কুয়োটস পাবেন । যেমন- Safety and speed never meets, Anytime is safety time, Be gentle on my curves, Be Mr late than Later Mr, If you sleep your family will weep... এরকম অসংখ্য কুয়োটস পাবেন পথে পথে । চলতে চলতে আমি প্রতিটি কুয়োটস পড়তাম, খুব ভালো লাগতো পড়তে । কথাগুলোতে সংশ্লিষ্টদের সৃজনশীলতার পরিচয় স্পষ্টত দৃশ্যমান । প্রতিটি কুয়োটস এর শেষে লেখা থাকতো "BRO"। পুরো লাদাখ ঘোরা শেষ হলে সুফলকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে সবগুলো সাইনবোর্ডে এরকম ব্রো লেখা থাকে কেনো ? সুফল সহাস্যে রিপ্লাই দিলো এর মানে হলো - Border Road Organization.
AMS: Acute Mountain Sickness. লাদাখ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলে এই টার্ম টা খুব পাবেন । আমি যখন কার্গিল পৌঁছাই তখন কিন্তু শব্দটি উচ্চারণ না করলেও বিষয়টি নিয়ে বলেছি । আপনি যখন উঁচু পাস অতিক্রম করবেন তখন অক্সিজেন স্বল্পতায় আপনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন । নানারকম বিরুপ শারীরিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে । এই বিষয়টা আপনার ট্যুরটাই মাটি করে দিতে পারে । লাদাখ সফরে এসে অনেকেই এই সমস্যায় পড়ে । সুতরাং জিনিস টা মাথায় রাখবেন ।
রুট চয়েসঃ
এখন লেহ থেকে মানালি অভিমুখী রোডের সাথে আপনাদের একটু পরিচয় করিয়ে দেই । লাদাখ সফরের অন্যতম বড় একটা আকর্ষণ হলো Leh to Manali Road Trip । এই ট্রিপ আপনি কয়েকভাবে দিতে পারবেন । যেমন- শ্রীনগর থেকে লেহ হয়ে মানালি বা মানালি থেকে লেহ হয়ে শ্রীনগর । অথবা হাতে সময় কম থাকলে দিল্লি থেকে সোজা উড়ে আসবেন লেহ তে, এরপরে সেখানে থেকে বাই রোড মানালি । লেহ - মানালি রোড যতটা এক্সট্রিম বা এই রোডের প্রতি মানুষের যে পরিমাণ ক্রেজ রয়েছে, লেহ-শ্রীনগর রোডের প্রতি ততোটা নেই । সুতরাং আপনি যদি প্রথম ধাপে মানালি থেকে লেহ গিয়ে দ্বিতীয় ধাপে লেহ থেকে শ্রীনগর প্রবেশ করেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে দ্বিতীয় ধাপটি সেরকম উপভোগ্য মনে হবে না - এটা একপ্রকার নিশ্চিত করেই বলা যায় । কিন্তু উলটা রুট ফলো করলে পুরো ট্রিপটিই উপভোগ্য মনে হবে । তবে এটা কোন কন্সট্যান্ট থিওরি নয় । আমার নিজের মতামত আর কি । কোনদিকে দিয়ে ঢুকে কোনদিক দিয়ে বের হবেন, সেটা একান্তই আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার । তবে গুগলে খোঁজাখুঁজি করলে লেহ থেকে মানালি রুটের ব্যাপারে খুব কমই তথ্য পাবেন, বেশিরভাগ মানুষই সম্ভবত মানালি থেকে লেহ তে যায়, তাই এই ডিরেকশনের তথ্যই বেশি পাবেন ।
আমি এখন এই রুটের কিছু উল্লেখযোগ্য পাস আর স্থানের নাম দূরত্বসহ ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছি ।
LEH >40> KARU >15> UPSHI >58> TANGLANG LA >65> PANG >24 >LACHULUNG LA >11 > NAKEELA LA >45> SARCHU >34> BARALACHALA >14> ZINGZINGBAR >18>PATSEO>16>DARCHA>6>JISPA>22>KEYLONG>9>TANDI>43>GRAMPHU>14>ROHTANG PASS >52> MANALI
![]() |
লেহ-মানালি রুট |
![]() |
মানালি টু লেহ ডিরেকশনে দেখুন |
মানালি থেকে লেহ মোট দূরত্ব ৪৯০ কিলোমিটার (কোথাও হয়তো ৪৭৫ বা কিছু কমবেশি পাবেন)। এরমধ্যে ২৩০ কিলোমিটার রাস্তা পড়েছে হিমাচল প্রদেশের ভেতরে, আর বাকি ২৬০ কিলোমিটার রাস্তা পড়েছে জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশের ভেতরে । সারচু হলো দুই প্রদেশের মধ্যবর্তী স্থান । সারচু থেকে মানালির রাস্তা পড়েছে হিমাচলের মধ্যে, আর সারচু থেকে লেহ অবধি রাস্তা পড়েছে জম্মু-কাশ্মীরের মধ্যে । এই পথে মোট ৫ টি উঁচু পাস পড়ে । এই রোডের গড় উচ্চতা হলো ১৩০০০ ফিট ।
ট্যুর প্ল্যানঃ
অনেক লম্বা এবং বন্ধুর পথ হওয়ায় এই পথ একদিনে না গিয়ে দুইদিনে কাভার করাই সবচেয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত । এতে সুস্থতার সাথে ধীরে ধীরে দিনের আলোয় সব উপভোগ করতে করতে যেতে পারবেন । AMS এর সমস্যা হবার সম্ভাবনাও কমে যাবে । আমি এখানে দুইটা ম্যাপ এটাচ করে দিলাম আপনাদের সুবিধার্থে । আপনারা ম্যাপ দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোথায় থাকলে ভালো হয় । পথে অনেক জায়গাতেই থাকার মতো ব্যবস্থা রয়েছে । তবে সাধারণত পর্যটকরা কেলং, জিসপা বা সারচুতে এক রাত থেকে দুই দিনে এই রুট কাভার করে থাকে ।
লাদাখ ট্যুর মানে কি ? আপনাদের অলরেডি বলেছি যে বাংলাদেশীদের জন্য লাদাখের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের অনুমতি না থাকলেও মানালি-লেহ-শ্রীনগর রোড ট্রিপে কোন বিধিনিষেধ নেই । অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন যে ট্যুরিস্ট স্পটগুলোই দেখতে পারলাম না, তাহলে আর লাদাখে গিয়ে কি লাভ ! তাদের জন্য আমি বলতে চাই, শুধুমাত্র লেহ-মানালি রোড ট্রিপের জন্যই বারবার লাদাখে যাওয়া যায় । অনেক বেশি আকর্ষণীয় এই রুট ।
অনুমতিঃ
লেহ থকে মানালি যেতে আলাদা কোন অনুমতি নেয়া লাগে না । রাস্তায় দুই তিন জায়গায় চেকপোস্ট বসে, সেখানে পাসপোর্ট ইস্যু করিয়ে নিলেই চলে । কিন্তু আপনি যদি মানালি থেকে লেহ যেতে চান তাহলে রোহতাং পাস ক্রস করার জন্য অনুমতি লাগে । এই অনুমতি আপনি মানালির SDM অফিস বা অনলাইনেও পেতে পারেন । আপনারা এই বিষয়ে একটু খোঁজ নিয়ে যাবেন অনুগ্রহ করে । তবে মাথায় রাখবেন এই রোথাং পাস দেখার জন্য ভয়াবহ লেভেলের জ্যাম পড়ে । আপনারা এটা মাথায় রেখেই টাইম টেবিল সাজাবেন ।
জ্বালানীঃ
এখানে গ্যাস স্টেশন পাবেন তিন জায়গায় । মানালিতে, টাণ্ডিতে এবং লেহতে । তবে পথে আপনি অনেক লোকাল খাবারের দোকান বা হোটেল পাবেন, যেখানে জ্বালানী তেল কিনতে পারেন । কিন্তু দাম অনেক বেশি রাখবে । সুতরাং সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হলো অতিরিক্ত জ্বালানী আলাদা ট্যাংকে করে বাইকের সাথে বেঁধে নিয়ে যাওয়া । রাস্তায় যত বাইকার দেখেছি, ম্যাক্সিমামই এভাবে ট্যাংকি নিয়ে যায় ।
যানবাহনঃ
আপনি চাইলে বিভিন্নভাবে এই রুটে ভ্রমণ করতে পারেন । তবে সবচেয়ে কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে আপনাকে HRTC এর বাসটাই নিতে হবে । ভাড়া ১০০০ রুপীর মতো হবে । এছাড়াও আপনি লাক্সারিয়াস বাসে করেও যেতে পারবেন । এই রুটে আপনি চাইলে প্রাইভেট বা শেয়ারড ট্যাক্সিও নিতে পারেন । প্রাইভেট ট্যাক্সিতে খরচ অনেক বেশি পড়বে । ট্যাক্সিভেদে শেয়ারড ট্যাক্সিতে ভাড়া পড়বে ১৫০০-২৫০০ রুপী । এসব নিয়ে অনলাইনে বহু আর্টিকেল পাবেন, একটু সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন । আমি অনলাইনে দেখেছি দিল্লি থেকেও মানালি হয়ে লেহ তে বাস চলে, ২-৩ দিনের কানেক্টেড ট্রিপ । আপনাদের আগ্রহ থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখবেন ।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়ঃ
সাধারণত এই রোড জুন থেকে সেপ্টেম্বর অবধি খোলা থাকে । এই রোড আসলে পুরোটাই খারাপ না । কিছু নির্দিষ্ট পয়েন্ট আছে যেমন বারালাচালা পাস, রোহতাং পাস, ট্যাংলাংলা পাস বা কিছু ওয়াটার ক্রসিং আছে... এইসব পয়েন্টের জন্যই রোডটা মূলত বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময় খোলা থাকে । তবে এই রুটে ভ্রমণ করতে চাইলে একদম এনশিওর হয়েই পথে বের হওয়াটাই ভালো । আমাদের ব্যাপার টাই দেখলেন তো । কত ঝামেলা হলো এসব টাইম স্কেজিউল মেলানো নিয়ে । আমরা যখন ভ্রমণ করি তখন মাত্র রোড খুলে যায় । তখন কেবল ট্যাক্সি চলা শুরু করেছে । বাস চলতে আরো কিছুদিন সময় নেয় । বাস পেলে আমাদের খরচ আরো কিছু কমতো ।
নিরাপত্তাঃ
লাদাখ সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞাতব্য বিষয় হলো সেফটি । উপরে যত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি তাদের সবার মধ্যে এটিই একমাত্র আপোষহীন ইস্যু । পর্যাপ্ত শীতের পোশাক সাথে রাখবেন । এই রোড কোন সাধারণ রোড না, একটা ,মরণফাঁদ । আমি আপনাদের কোন ভয় দেখানোর জন্য কথাগুলো বলছি না । স্রেফ অতিরিক্ত সতর্ক করে দেয়ার জন্য বলছি । ভরপুর এডভেঞ্চারের কোণায় কোণায় ওত পেতে আছে মৃত্যু । আর এই তালিকায় সর্বাগ্রে রয়েছে বাইকাররা । বাইকারদের কি ভয়ংকরভাবে ওয়াটার ক্রসিং গুলো পার হতে দেখেছি । দেখে মনে হয় একটু ১৯ থেকে ২০ হলেই পানির তোড়ে ভেসে যাবে নাহলে ১০০ ফিট নীচে পড়বে । প্রতিদিনই অন্তত কয়েকটি মেজর বাইক এক্সিডেন্ট হয় এই রোডে । প্রতিদিনই কেউ না কেউ গুরুতর আহত হয় । হাইওয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসে এখানে যদি নিজেকে স্পেশালাইজড ভাবেন, তাহলেই ধরাটা খাবেন । আমি আসলে বাইকারদের যে দুর্দশা দেখেছি এই রোডে, তাতে আমি নিজে তো বটেই, যে কাউকে বাইক নিয়ে যেতে কিছুটা ডিমোটিভেটই করি । শীতে কি কষ্ট একেকজনের, মাঝরাস্তায় কেউ কেউ ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ায় বরফের মাঝে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, একদম মধ্য সমুদ্রে ইঞ্জিন নষ্ট হলে তার সমাধান কিভাবে করবেন ভাবতে পারেন ? আপনি নিজেও যদি এক্সিডেন্ট করে পড়ে থাকেন, তার কি সমাধান করবেন ? আরো অনেক ইস্যু আছে । আপনারা যান, সমস্যা নেই । তবে নিজেদের খেয়াল রাখবেন । নিচের স্ক্রিনশট টি আমি লাদাখের একটা ফেসবুক গ্রুপ থেকে পেয়েছি । আপনাদের সতর্ক করার জন্য এটাচ করে দিলাম ।
ঠিক এই জন্যই সরকার মানুষজনের সতর্কতার জন্য রাস্তার পাশে পাশে অসংখ্য কুয়োটস দিয়ে রেখেছেন । Safety and speed never meets, Anytime is safety time, Be gentle on my curves, Be Mr late than Later Mr, If you sleep your family will weep, Over speed is a knife that cuts a life
আপনাদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো । আশা করি, নিজ নিজ বিবেচনা শক্তি দিয়ে ধীর এবং স্থিরতা নিয়ে কাজ করবেন । সুস্থ এবং সুন্দর ভাবে নিজ নিজ প্রিয় মানুষগুলোর কাছে ফিরে আসবেন অফুরন্ত গল্পের ডালি নিয়ে ।
Aruo Debnath vhai, amra koyekjon by air a Ladakh jabo, August 2020 te. Jabar issa thakle amake nock korte paren.Amader plan hosse Ladkha, Pangong Lake, Nubra valley and Turtuk. 01671958224 it's my number.My name Mithu. Free mindade hole joga jog korte paren.
উত্তরমুছুন