প্রথম পর্ব (ঢাকা থেকে কলকাতা অভিমুখে)



ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু 
ঢাকা থেকে প্রস্থান(২১-০৩-১৮) 

ঢাকা থেকে বেনাপোলে বাস যায় বেশ কয়েকটি। হানিফ, শ্যামলী, দেশ ট্রাভেলস, ঈগল সহ আরো কয়েকটি বাস আছে । আমরা হানিফে গিয়েছিলাম । ২১ তারিখ রাত ১০.১৫ তে ছিলো আমাদের বাস  আমরা রাত ৯.৩০ এর মধ্যেই কল্যাণপুরে হানিফের নির্ধারিত কাউন্টারে গিয়ে হাজির হলাম  আমি গিয়ে দেখি তাসিন বিশাল বড় একটা লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে  আমি ওর লাগেজ দেখে পুরো আবুল হয়ে গেছি  এই বিশাল লাগেজ নিয়ে এই ব্যাটা ক্যামনে ট্যুর দেবে আল্লাহ মালুম  এই লাগেজে নাকি ওর সব শীতের কাপড়  রাগে আমি কিছুক্ষণ নিজে নিজেই ফোঁৎ ফোঁৎ করলাম  এরপর নিজেকে এই বলে প্রবোধ দিলাম যে ওর জিনিস ও ক্যারি করবে আমার কি  সেলিম এসেছিলো আমাদের বিদায় জানাতে  । ওকে বিদায় জানিয়ে আমরা বাসে চেপে বসলাম  নির্ধারিত সময়ে বাস কাউন্টার থেকে ছেড়ে গেলো  । আমরাও আড্ডা দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে 


বেনাপোল বর্ডার অতিক্রম- (২২-০৩-১৮) 
এরাইভাল কার্ড 

ভোর সাড়ে ছয়টা নাগাদ আমরা গিয়ে পৌঁছলাম বেনাপোলে  কেউ যদি দ্রুত বর্ডার পার করতে চায়, তাহলে তাকে আরো আগে ঢাকা থেকে প্রস্থান করার জন্য বলা হলো । আর এই রুটে ফেরির কারণে কত সময় লাগবে, তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারবে না । যাহোক, সেখানে বাসে থেকে নেমে অটো নিয়ে সোজা চলে গেলাম কাস্টমস অফিসে  কাস্টম অফিসে গিয়েই দেখি দালালদের ছড়াছড়ি  দশ টাকার বিনিময়ে তারা এরাইভাল কার্ড পূরণ করে দিচ্ছে  

বর্ডারে দালাল এর কাছে ধরা দেবো নাএই নিয়ত করে বেড়িয়েছি – যা থাকে কপালে । অফিসের প্রবেশে ফি দিয়ে সোজা ঢুকে গেলাম ভেতরে  এরপর গিয়ে দাঁড়ালাম ট্রাভেল ট্যাক্সের লাইনে  সেখানেও দেখি বিশাল লাইন  অনেক কষ্টে ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দিলাম । এরপরে ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে এরাইভাল কার্ড সংগ্রহ করে নিজেরাই পূরণ করে জমা দিলাম । সেখান থেকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে প্রথমবারের মতো পা রাখলাম নো ম্যান্স ল্যান্ডে  এরপর সেখান থেকে প্রথমবারের মতো পা রাখলাম ইন্ডিয়ার সীমানাতে  ওখানেও এই ফরম পূরণের জন্য দালালরা বসে গেছে  নিজেরাই সেই ফরম ফিলাপ করলাম । ভারতের ফর্মে যে হোটেলে থাকতে চান তার নাম উল্লেখ করতে হয় । সুতরাং আগে থেকেই একটা হোটেলের নাম ঠিক করে নিয়ে যাবেন যদি দালাল দিয়ে না করাতে চান । আসল কথা হলো এসব কিছু আসলে চেক করা হয় না । হুদাই একটা ফরমালিটিস মাত্র । কেউ চাইলে দশ টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশ বা ভারতের এন্ট্রি ফরম ফিলাপ করাতে পারেন  ওটা ফিলাপ করতে ওরকম উত্তেজনার একটি মুহূর্তে বেশ পেইন মনে হচ্ছিলো 



কলকাতা অভিমুখে -  

এরপর বিশাল লাইন কাভার করে ভারতের ফরমালিটিস শেষ করতে করতে সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে নয়টা বেজে গেলো চারজনে তখন প্রথমবারের মতো ইন্ডিয়াতেপ্রথমবারের মতো বিদেশে  অনুভূতিটাই অন্যরকম । ভারত বাংলাদেশের চেয়ে আধাঘণ্টা পিছিয়ে । গিয়েই প্রথমে আধাঘণ্টা কমিয়ে নিলাম । 

যাহোকওখানে গিয়ে শুরুতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে আমাদের  যারাই আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে আসে তাদেরই দালাল মনে হয়  অনেক নাটক করে ওখানে থেকে ১০০ টাকায় পেলাম ৭৭.৮০ রুপী আর ১ ডলারে ৬৫ রুপী  ভাঙ্গিয়ে নিলাম কিছু ডলার আর টাকা  ওখানে সিমও বিক্রি হয়কিন্তু আমরা সিম কিনেছি কলকাতা গিয়ে  এজন্য বেশ ভোগান্তিও গেছে আমাদেরআমার সেজন্য মনে হয় সিমটা বর্ডার থেকে নিলেও পারতাম  আমার অভিজ্ঞতা বলে টাকা বর্ডারে ভাঙ্গানোই ভালো  কলকাতায় আমরা সেভাবে সুবিধা করতে পারিনি  রেট কম বলে  দিল্লিতে তো টাকার রেট আরো কম  কেউ ভুল করেও দিল্লিতে টাকা ভাঙ্গানোর চিন্তা করবেন না  দিল্লিতে আমরা ১০০ টাকায় ৭৫ এবং ৭৬ রুপীর বেশি পাইনি  তবে ডলার যেকোন জায়গাতেই ভাঙ্গানো যায়  দিল্লিতে আমরা ডলার ভাঙ্গিয়েছি ৬৫.৩০ রুপীতে  কারো কাছে এই মাত্র কয়েক পয়সা বা ১/২ রুপীর জন্য এতো কথা বলা আধিক্য মনে হতে পারে  আপনি ব্যাপার টা তখনই বুঝতে পারবেন যখন বিশাল বড় অংকের বাংলা টাকাকে রুপীতে কনভার্ট করবেন 


যাহোকএরপর সেখানে থেকে অটোতে চেপে চলে সোজা চলে গেলাম বনগাঁ । তখন প্রায় সাড়ে দশটা বাজে । সেখানে থেকে বনগাঁ লোকাল ট্রেনে চেপে চলে গেলাম শিয়ালদহ স্টেশনে  এই ট্রেন জার্নি টা মনে রাখার মতো ছিলো  বাংলাদেশে ঈদের সময় ট্রেনে যেমন ভিড় হয়এখানে এই ট্রেনে সেইম এক্সপেরিয়েন্স  প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা সময় ধরে এরকম একটা নারকীয় জার্নি করতে হয়েছে  দুপুরের দিকে কলকাতা গিয়ে সবকিছু আণ্ডার কন্ট্রোল আনতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়েছে । প্রসঙ্গত, পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, লক্ষ্য যদি ফেয়ারলি প্লেস হয় তবে চেষ্টা করবেন বনগাঁ থেকে সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটের মাঝেরহাট লোকাল ট্রেনটি ধরার । এই ট্রেন থেকে নামবেন বিবাদিবাগ স্টেশনে । আর সেখান থেকে ফেয়ারলি প্লেস কাছেই । আমরা যেহেতু বিলম্ব করেছি সেহেতু বাধ্য হয়েই আমাদের শেয়ালদহের টিকিট কাটতে হলো । 

শিয়ালদহ পৌঁছেই আগে দুপুরের খাওয়া সমাপন করি । এরপর নিউ মার্কেট থেকে সিম কার্ড কিনলাম (৩৫০+১৫০)= ৫০০ টাকা দিয়ে । সেখান থেকে সোজা ফরেইনারদের জন্য নির্ধারিত ফেয়ারলি প্লেস চলে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত কালকা অভিমূখী কালকা মেইলের টিকিট সংগ্রহের জন্য । গিয়ে দেখি ২২ তারিখের কোন টিকিট নেই এবং কলকাতা থেকে কালকা অভিমুখে কালকা মেইলে ফরেইনারদের জন্য সংরক্ষিত আসন হলো তিনটি । পড়ে গেলাম আরেক বিপদে । মানুষ চারজন কিন্তু সংরক্ষিত আসন তিনটি । অবশেষে কাউন্টারের ভদ্রমহিলা একটি উপায় বাতলে দিলেন । সেটি হলে সেই ট্রেনে চারজনের প্রথমে কলকাতা থেকে দিল্লি এবং এরপরে একই ট্রেনে দিল্লি থেকে কালকার টিকিট করে দিলেন । কলকাতা থেকে কালকার সরাসরি ভাড়া সম্ভবত ১০৫০ রুপীর মতো । কিন্তু আমাদের এরকম সিস্টেমে পড়লো ১১৭৫ রুপী । কি আর করার , একসাথে যাবার জন্য কয়টা রুপী বেশি দিতেই হলো । যাহোক, অবশেষে ২৩ তারিখ রাত ৭.৪০ এর কালকা মেইলের টিকিট হাতে পেয়ে সারাদিনের সকল শ্রান্তি ভুলে গিয়ে রিলাক্স হলাম । সেখানে এসির শীতল বাতাসে চারজন মিলে বসে থাকলাম অনেক্ষণ । 

যখন কলকাতার পথে নামলাম তখন বিকেল হয়ে এসেছে । এতোক্ষণ ট্রেনের টিকিটের অনিশ্চয়তার সংশয়ে কলকাতার পথে থেকেও কলকাতা নজরে পড়েনি । ট্রেনের টিকিট হাতে পেয়ে কলকাতাকে নতুন করে দেখা শুরু করলাম । ক্লান্তি দূর করতে চারজনে চা খেয়ে নিলাম ফুটপাতে দাঁড়িয়ে । ওদের চায়ের কাপগুলো মাটির তৈরি এবং ওয়ান টাইম ম্যাটেরিয়াল।

কলকাতার চায়ের কাপ 
 চা খেয়ে চারজনে অনেক্ষণ উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাঁটির পরে হোটেল খুঁজতে বের হলাম । হোটেল খুঁজে পেতে এবার বেশ বেগ পেতে হলো । সুফল আর তাসিনকে দাঁড় করিয়ে আমি আর নিলয় খুঁজতে লাগলাম । খুঁজতে খুঁজতে সত্যি বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম । অবশেষে অনেক কষ্টে নিউ মার্কেটের কাছে টটি রোডে একটা হোটেল পেয়ে গেলাম । চারজনে ৯০০ রুপী হিসেবে বেশ ভালোই ছিলো রুমটি ।
কলকাতায় আমাদের হোটেল রুম 
হোটেলে গিয়ে ব্যাগ&ব্যাগেজ রেখে বসতেই টের পেলাম সারাদিন কি ধকল গেছে সবার উপর দিয়ে । ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম চারজন । নিউ মার্কেটে গিয়ে ৩৫ রুপী বাটি গরুর মাংস আর ভাত দিয়ে ভাবমতো খেলাম চারজনে । ভারতে অন্যান্য আইটেমের তুলনায় বিফ আইটেমের মূল্যমান খুবই কম । 

দিল্লি আর কলকাতাতে যে চারদিন ছিলাম শুধুই বিফের উপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছি । মনে হচ্ছিলো আরো কয়দিন থেকে যাই শুধু বিফ খাওয়ার জন্যই । খাওয়া-দাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে এসে চারজনে আজকের সারাদিনের ক্লান্তিকে বিদায় জানালাম ।



খরচঃ  

ঢাকা-বেনাপোল (বাস) = ৫০০/-
বেনাপোল-কাস্টমস অফিস অটো ভাড়া = ১০/-
অফিসের প্রবেশ ফি = ৪২/-
ট্রাভেল ট্যাক্স = ৫০০/-
মোট = ১০৫২ টাকা

৭৭.৮০রুপী হিসেবে ১০৫২ টাকা = ৮১৮ রুপী
বর্ডার-বনগাঁ (অটো ভাড়া) = ৩০/-
বনগাঁ-শিয়ালদহ (লোকাল ট্রেন)= ২০/-
শিয়ালদহ দুপুরে খাওয়া = ৪৪/-
সিম ক্রয়(চারজনে ৫০০), জনপ্রতি  = ১২৫/-
নিউ মার্কেট - ফেয়ারলি প্লেস(বাসে) = ১৩/- 
কলকাতা-কালকা = ১১৭৫ /-
চা = ৬/-
হোটেল ভাড়া = ২২৫/-  
রাতের খাবার = ৬০/- 
অটো ভাড়া= ৭ /-

মোট = ২৫২৩ রুপী



মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কম খরচে কাশ্মীর-লাদাখ-মানালি ভ্রমণ

১০৫০ টাকায় ঢাকা থেকে চারদিনের রাজশাহী+নওগাঁ সফর

একাদশ পর্বঃ ১২,৮২৭ টাকায় ১২ দিনে ঢাকা থেকে কাশ্মীর ভ্রমণ (বিশেষ পর্ব)