পঞ্চম পর্ব ( মানালিতে ১ম দিন )
| গুলাবাতে সূর্যের সাথে বরফের ডিলিং |
গুলাবা- (২৭-০৩-১৮)
আগের দিন হোটেলের লোকের সাথে কথা বলে রেখেছিলাম গুলাবা আর সোলাং ভ্যালির গাড়ির ব্যপারে; ভাড়া ১০০০ রুপী ।পরদিন সকাল আট টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি SUZUKI CELERIO এর ৯৯৮ সিসির চারজন ক্যাপাসিটির সুন্দর ছোট্ট একটি হোয়াইট কার হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে আছে ।
| SUZUKI CELERIO |
প্রসঙ্গত, মানালির রাস্তায় এই গাড়িগুলোর বিচরণ খুব বেশি । মোট ১০০ টা গাড়ির ভেতরে প্রায় ৭০ টা গাড়িই এটা । তার মধ্যে সম্ভবত ৯৫ ভাগ গাড়িই ট্র্যাভেলারদের জন্য । এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নির্ভর করেই ট্যুরিস্টদের উপরে । স্থানীয় মানুষজনের আচরণও বেশ সন্তোষজনক ।
যাহোক নয়টার ভেতরেই হোটেল থেকে বেড়িয়ে গেলাম গুলাবার উদ্দেশ্যে । গাড়ি শুরুতে গিয়ে থামলো একটা দোকানের সামনে যেখানে বরফের ভেতরে যাওয়ার পোশাক ভাড়া দেওয়া হয় । আমি নিতে চাইলাম না শুরুতে । কারণ শীতের পোশাক নিয়েই গিয়েছিলাম । কিন্তু সমস্যা হলো আমার সেই পোশাক বরফের ভেতরে কোন কাজে আসবে না । ওসব জায়গায় কুস্তাকুস্তি বা পিচ্ছিল খেলতে গেলে পোশাক নষ্ট হবার ভয় থাকে । আমি কারের ভেতরে বসেই ছিলাম । কিন্তু দোকানের লোক এসে আমাকে মোটিভেট করে বাধ্য করলো ওদের পোশাক নিতে ।
| পোশাক ভাড়ার দোকান |
সুফল আর তাসিন দেখি স্কিং খেলার জন্য বায়না দিচ্ছে । দোকানদার বুঝাচ্ছে যে আপনার বাকি দুই বন্ধুকেও নিতে বলেন তাহলে খরচ কম পড়বে । আমি স্কিংও খেলতে চাইলাম না । কারণ জনপ্রতি শুধু পোশাক যেখানে ২৫০ রুপী ভাড়া সেখানে স্কিং নিলে অতিরিক্ত ৫৫০ রুপী দিতে হবে । সুফল আর তাসিন এমনভাবে ধরলো যে আমিও নতুন এই এক্সপেরিয়েন্স গ্যাদার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলাম না । নিলয় তো একপ্রকার নেবেই না বলে পণ করেছে । দোকানী নানা ক্যাপাসিটি করে ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে চারজনের পোশাক+স্কিং এর জন্য ৩০০০ রুপীতে রাজি হলো । এতোগুলো টাকা খরচ আজাইরা মনে হচ্ছিলো এবং বেশ পোড়াচ্ছিলোও । নিলয় তো পারলে টাকার কষ্টে কেঁদেই দেয় । হা হা... কি আর করার সেখানে থেকেই একজন গাইডকে সাথে নিয়ে আমরা ছোট্ট গাড়িতে চাপাচাপি করে চললাম গুলাবার উদ্দেশ্যে । প্রসঙ্গত, গাইড ফিও সেই ৩০০০ রুপীতে ইনক্লুড ।
পাঠকের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, আমরা দেশে থেকেই পর্যাপ্ত শীতের পোশাক নিয়ে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র এজন্য যে মানালি গিয়ে যাতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে শীতের পোশাক ভাড়া করতে না হয় । কিন্তু সেই পোশাক সেভাবে কোন কাজেই দিলো না । এরমানে হলো বেহুদা এতো বিশাল ব্যাগ বহন করতে হলো ১১ দিন ধরে । আমি তো তাসিনের কথা ভাবলাম শুধু । ব্যাটাশালার লাগেজ ভর্তি শীতের পোশাক । কি কষ্টই না হয়েছে ওর এই লাগেজ টানতে । কেউ যে এভাবে লাগেজ নিয়ে বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যেতে পারে ওর এক্টিভিটি না দেখলে বুঝতামই না । এই ১১ দিনে যে পেইনটা ওর গেছে, আশা করি ভবিষ্যতে বউ নিয়ে ট্রিপে গেলেও সে লাগেজ নিতে চাইবে না । যাহোক, তারমানে দেশে থেকে ব্যাগ লোড করার সময় ভেবে দেখবেন ব্যাপারগুলো । তাছাড়া সারাদিন এসব শহরের তাপমাত্রা খুব সাধারণ থাকে, শুধু রাতে কমে যায় । রাতে তো হোটেলেই থাকা হয় । সন্ধ্যার পরে শহরে বা বাইরে যে সময়টা ঘোরা হয়, তখন শুধু লাগে । এজন্য এতো বেশি পোশাকের কোনই প্রয়োজন পড়েনা । আর খুব আগ্রহ না থাকলে স্কিং খেলার দরকার নেই । অগত্যা এতোগুলো টাকা যাবে । আর এসব কারের লোকজন দোকান থেকে কমিশন পায় সম্ভবত । ব্যাপারগুলো মাথায় রাখবেন । কিছু টাকা সেইভ করতে চাইলে কিছু কষ্ট+খাটাখাটি করতেই হবে । সেই কষ্টের একটি অংশ হলো সময় ব্যয় করে গুগলে খোঁজা বা আমার এই ব্লগ পড়া ।
এরপরে সেখানে থেকে কিছুদূরে গিয়ে সকালের নাস্তা করলাম । নাস্তার আইটেম ছিলো গোবি পরাঠা(আলুর পরোটা) এবং পাও ভাজি ।
| গোবি পরাঠা(বামে) ও পাও ভাজি(ডানে) |
এরপরে সোজা চলে গেলাম গুলাবাতে । গুলাবাতে গাড়ি থেকে যেখানে নামিয়ে দেয় সেখান থেকে বেশ খানিকটা বন্ধুর পথ পায়ে হেঁটে বরফের পাহাড়ে আসতে হয় । এই রাস্তাটুকু পার হবার জন্য ওখানে ঘোড়া এবং চামড়ি গাই এর ব্যবস্থা রয়েছে । এজন্য এক্সট্রা পে করতে হবে । বলে রাখা দরকার , মানালি কিন্তু ইন্ডিয়াতে ওয়ান অব দ্য বেস্ট শ্যুটিং স্পট । নামিদামি বহু মুভির শ্যুটিং হয়েছে এখানে । যাহোক, সেখানে গিয়ে অনেক্ষণ বরফে খেলাধুলা করলাম । জীবনের প্রথম এভাবে বরফের ভেতর গড়াগড়ি খাচ্ছি, ব্যপার টা ভাবতেই কেমন অন্যরকম একটি অনুভূতি হচ্ছিলো । একেবারে ছোট বাচ্চা হয়ে গিয়েছিলাম । খুব ভালো কিছু সময় কেটেছে গুলাবাতে । অনেকগুলো ফটো তুললাম । বাংলাদেশ থেকেই পতাকা নিয়ে গিয়েছিলাম । সেই পতাকা ধরে কিছু পিক তুললাম । কফি খেলাম । সবশেষে কিছুক্ষণ স্কিং করে দুপুর দুইটার দিকে রওনা দিলাম সোলাং ভ্যালির উদ্দেশ্যে । এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, আমরা কেউই হাতমোজা নেইনি । কিন্তু হাতমোজা নেয়া খুব জরুরী ছিলো । কারণ বরফে পিচ্ছিল খেলার সময় হাত কিছু সময় বরফের সংস্পর্শে থাকে । এরপর হাতের অবস্থা খারাপ হয়ে যায় । হাতে কোন সেন্স থাকে না । মনে হয় হাতের তালুতে ব্লাড সার্কুলেশন বন্ধ হয়ে গেছে । এটা মাথায় রাখবেন ।
| যাত্রীবাহী চামড়ি গাই |
| গুলাবা |
| বরফ পাহাড় |
সোলাং ভ্যালি-
সেখান থেকে সোলাং ভ্যালি যাবার পথে চারজনে দুপুরের খাবার খেলাম । এরপর অল্প কিছু সময় ব্যবধানেই চলে গেলাম সোলাং ভ্যালিতে । সোলাং ভ্যালি খুব বড় কোন জায়গা না, তবে জায়গাটা ফিল করার মতো । সামনে বিয়াশ নদী, নদী ভর্তি পাথর । তারও সামনে সোলাং গ্রাম । সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই অনেক সময় পার করে দেয়া যায়, দেশে ফেলে আসা প্রিয় মানুষগুলোর কথা ভাবা যায় । আমি অনেক্ষণ এসবই করেছি আর কি । ভালো লেগেছে ব্যাপারগুলো ।
| সোলাং শূন্য কিলোমিটার |
| সোলাং ভ্যালিতে বিয়াশ নদী |
![]() |
| অপূর্ব সুন্দর বিয়াশের সাথে |
ওখানে Zorbing, Bungee Trampoling & Zipline খেলার ব্যবস্থা আছে । মন চাইলে খেলতে পারেন । সুফল তিনটার প্যাকেজ নিয়েছিলো ৮০০ রুপীতে । Zorbing খেলায় বলের ভেতরে দুইজনকে তুলে গড়িয়ে দেয় । সুফল কোন পার্টনার না পেয়ে আমাকে ধরে বসলো । আমি ১০০রুপী দেবার শর্তে Zorbing খেলেছিলাম সুফলের সাথে শেয়ারে । প্রতিটি খেলা আলাদাভাবে খেলতে চাইলে প্রায় ৪০০ রুপী করে লাগে
।
| Zorbing |
| Zipline |
| Bungee Trampoling |
যাহোক, এরপর সেখানে অনেক্ষণ প্রকৃতি উপভোগ করলাম অনেকটা একা একাই । ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না আমার । কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো । তাই ফিরতে হলো । হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফের শহরে গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম । সেখানে থেকেই পরদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার মানালি-দিল্লি অভিমুখী বাসের টিকিট সংগ্রহ করলাম । এরপর রাতের খানাপিনা শেষ করে হোটেলে ফিরে আবার আড্ডা এবং ঘুম ।
খরচঃ
কার ভাড়া = ২৫০/-
স্কিং+পোশাক+গাইড ফি = ৭৫০/-
সকালের নাস্তা = ৫৩/-
গুলাবাতে কফি = ২০/-
দুপুরের খাবার = ৫৫/-
রাতের খাবার = ১০৫/-
zorbing = ১০০/-
মানালি-দিল্লি বাস ভাড়া = ৬৭০/-
সারাদিনের হালকা নাস্তা = ১৫/-



মানালী গেলেন অথচ রোথাং পাস মিস করলেন কেন?
উত্তরমুছুনoff silo tokhon.
উত্তরমুছুনইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি মুভির পিক সংযোজন করায় ব্লগটা বেশিই ভালো লাগছে😍
উত্তরমুছুন