তৃতীয় পর্বঃ তিনদিন পর অবশেষে শ্রীনগর
![]() |
বানিহাল-শ্রীনগরঃ গরীবের টয় ট্রেন |
জম্মু থেকে শ্রীনগর কিভাবে যাবো ?(৩১/০৫/১৯)
সমাধান আগে থেকেই ঠিক করে নিয়ে গিয়েছিলাম । জম্মু থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলঘেঁষে অবস্থিত একটি রেলস্টেশন; নাম বানিহাল । আমাদের প্ল্যান ছিলো বানিহাল থেকে মেইল ট্রেনে চেপে শ্রীনগর যাওয়া । বেশ প্রশংসা শুনেছিলাম এই রুটের । অনেক সুন্দর ভিউ পাওয়া যায় নাকি । ইউটিউবে কিছু ভিডিও দেখেছিলাম । সবমিলিয়েই একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো এই রুটে ট্রেন ভ্রমণের । কিন্তু সেই ট্রেনে ওঠাটাও হুটহাট ধুপধাপ পসিবল ছিলো না । পাহাড়ি রাস্তায় ১৬০ কিলোমিটার মানে বেশ লম্বা একটি দূরত্ব । আর বানিহাল থেকে ট্রেনে শ্রীনগর রেলস্টেশন আবার প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব । সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে শ্রীনগর পৌঁছাতে এখনো অনেক দেরি ।
যাহোক, ২৮/০৫/১৯ তারিখ রাতে ঢাকা থেকে বাসে চেপে আজ ৩১/০৫/১৯ তারিখ সকালে এসে পৌঁছলাম জম্মুতে । ভ্রমণ করতে হবে আজকেও সারাদিন । আপাতত জম্মু রেলওয়ে স্টেশনে এসে নেমে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম । গতরাতে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া হয়নি, অধিকন্তু শরীরের উপরে দিয়ে ধকলও কম যায়নি । ভাবলাম সামনে আরো কত কি সহ্য করতে হবে তার ঠিক ঠিকানা নেই । আগে ঠিকমতো খেয়ে নেই । সেই উদ্দেশ্যেই ফ্রেশ হয়ে জম্মু রেলস্টেশন থেকে বের হলাম ।
রেলস্টেশনের বাইরে থেকে জনপ্রতি ১০ রুপী হারে একটা বাসে চেপে চলে গেলাম শ্রীনগর/বানিহালের দিকে ছেড়ে যাওয়া বাসস্টেশনের দিকে । সেখানে যেতে যেতেই পথিমধ্যে দেখলাম অনেক লোকাল ট্যাক্সি, সুমো গাড়িগুলো শ্রীনগরের যাত্রী খুঁজছে । ৫০০-৮০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে । আমাদের একটু ভিন্নরকম প্ল্যান থাকায় কমবেশি যে ভাড়াই হোক না কেনো, সেদিকে আর নজর দিলাম না। বাস থেকে নেমে একটা হোটেল খুঁজে দুই ভাই খেয়ে নিলাম আগে । এরপরে শান্তি ।
গন্তব্য এবার বানিহালঃ
খেয়েদেয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে এবার বানিহালের বাস খোঁজা শুরু করলাম । খুঁজতে গিয়ে বুঝলাম জম্মু-বানিহাল সরাসরি বাস আছে, বাট নট এভেইলেবল । সেক্ষেত্রে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে হবে । জম্মু-বানিহালের বাস ভাড়া প্রায় ২২০ রুপীর মতো । যাহোক, আমরা সরাসরি বাসটি মিস করলাম ।
সেক্ষেত্রে আমরা সেখানে থেকে রামবান নামক একটি জায়গার বাসে উঠলাম । জম্মু থেকে রামবান প্রায় ১৩০ কিলোমিটার । ভাড়া ১৯০ রুপী জনপ্রতি, সময় লাগে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার মতো । সেখানে থেকে আবার আরেক বাহনে চেপে যেতে হবে বানিহাল । প্রায় সকাল দশটার দিকে জম্মু থেকে আমাদের রামবানগামী বাসটি ছেড়ে গেলো । পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে বেশ ধীরে সুস্থেই চলছিলো বাস । আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যের পার্থক্য এতোক্ষণে স্পষ্ট হতে শুরু করলো । বুঝতে পারছিলাম যে সামথিং মোর বিউটিফুল মাস্ট ওয়েটিং ফর আস ।
এই বাসে চেপেই প্রায় ৩ টার দিকে চলে এলাম রামবান । সেখানে থেকে যে বাসগুলো বানিহাল যায়, সেটা আর আজকে যাচ্ছিলো না । এই সুযোগে ট্যাক্সিচালকরা ভাড়াও বেশ বাড়িয়ে দিয়েছিলো। রামবান-বানিহাল প্রায় ৩০ কিলোমিটার, ভাড়া নিলো ১৫০ রুপী জনপ্রতি । কি আর করা যাবে । এখানেও অপেক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত সময় আমাদের নেই । কারণ বানিহাল থেকে শ্রীনগরের ট্রেন একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে না পাওয়ার চান্স আছে (চেক ওয়েবসাইট)। সেরকম হলে আরেক বিপদ । তাই বিলম্ব করলাম না । কিছু খাবার কিনে গাড়িতে উঠে পড়লাম । প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে পাঁচটার দিকে গিয়ে পৌঁছলাম বানিহাল রেলস্টেশনে । গিয়েই কাউন্টারে খোঁজ নিলাম । জানতে পারলাম ট্রেন আছে, যেটা ছেড়ে যাবে ছয়টার পরে । শুনে হালকা বোধ করলাম । ক্লান্তিটা একটু কম বোধ হচ্ছিলো । ফ্রেশ হলাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম ।
জম্মু থেকে বানিহালের সরাসরি বাস ভাড়া ছিলো ২২০ টাকা । সেখানে জম্মু থেকে বানিহাল আসতে বাস আর ট্যাক্সি মিলিয়ে আমাদের জনপ্রতি গেলো ১৯০+১৫০=৩৪০ রুপী । এরপরেও যদি ট্রেন মিস করতাম, ব্যাপার টা খারাপ লাগতো ।
শীত শীত বোধ টা টের পাচ্ছিলাম । বুঝতে পারছিলাম অনেক দূরে চলে এসেছি সেই উত্তরপ্রদেশের বাপ-মা বিহীন গরম থেকে । মনও খুশি খুশি, ট্যুর ট্যুর ফিলটা বেশি করে পাচ্ছিলাম । ব্যাগ থেকে শীতের পোশাক বের করে পরে নিলাম । দুই বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলাম । পাহাড়ের কোলঘেঁষে অবস্থিত রেলস্টেশনের দিকে চোখ বুলাচ্ছিলাম । দেখে বেশ ভালো লাগছিলো । দুই বন্ধু মিলে একটু ফটোসেশন করলাম ।
![]() |
বানিহাল রেলওয়ে স্টেশন |
![]() |
রেলস্টেশনের ঠিক বিপরীতের দৃশ্য |
বসে বসে আমাদের দৌড়ঝাঁপের হিসেব করছিলাম । ভাবছিলাম কিভাবে কিভাবে সব যানবাহনগুলো ইন টাইম মিলে গেলো কপালে । আল্লাহ না করুক, কলকাতা থেকে যদি ওইদিনই ট্রেন না পেতাম(বারেবারে যেটা হয় আর কি), আরো একটা দিন কলকাতায় স্টে করতে হতো । গতকাল যদি দিল্লি থেকে জম্মু-তাওয়াই ধরতে না পারতাম, হয় একদিন অতিরিক্ত দিল্লিতে থাকা লাগতো, নাহলে ১২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে জম্মু আসা লাগতো । অথবা আজকেই যদি বানিহাল থেকে শ্রীনগরের ট্রেন টা মিস করতাম, তাহলে হয় শ্রীনগরে নিজেরা কার ভাড়া করে যাওয়া লাগতো, নাহলে এখানেই একরাত থেকে যাওয়া লাগতো ... যার কোনটাই কাজের কাজ ছিলো না। আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের সাথে এসবের কিছুই ঘটেনি । আমাদের এই দৌঁড়াদৌড়ি বৃথা যায়নি ।
এসব চিন্তাভাবনা করতে করতেই আমাদের ট্রেনের নির্দিষ্ট সময় চলে এলো । ট্রেন ছাড়ার কিছু সময় আগে টিকিট ছাড়ে । গিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করলাম । বানিহাল থেকে শ্রীনগর প্রায় ১০০ কিলো পথ, টিকিটের মূল্য মাত্র ২০ রুপী । দারুণ লাগলো ব্যাপারটা । ইন্ডিয়ার মেইল ট্রেনের এই ব্যাপার টা আসলেই অসাধারণ । এই যে আমরা বনগাঁ লোকালে চেপে কলকাতা আসি মাত্র ২০ টাকায়, সেখানেও প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় । দূরত্বের তুলনায় ভাড়া যথেষ্ট কম ।
গরীবের টয় ট্রেনঃ
বানিহাল থেকে শ্রীনগর রুটে চলা এই ট্রেনের নাম দিয়েছি আমি গরীবের টয় ট্রেন । এরমানে এটা নয় যে ট্রেনের খুবই জীর্ণ দশা ছিলো । বরং এজন্য যে এই ট্রেনে উঠেই সেই কালকা টু সিমলা টয় ট্রেনের ফ্লেভার পাচ্ছিলাম কিছুটা । বেশ ভালো লাগছিলো । ট্রেন বেশ জোরেই যায় । দুই বন্ধু ট্রেনে উঠেই কানে হেডফোন দিয়ে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে কাশ্মীরি প্রকৃতি অবলোকন করছিলাম । বেশ ভালো লাগছিলো জার্নিটা সত্যি বলতে । পড়ন্ত বিকেলে পাহাড় আর সূর্যের লুকোচুরি খেলার দৃশ্য যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে । চারিদিকে একটা রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছিলো । প্রচণ্ড গরমের এলাকা থেকে গিয়ে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় এরকম দৃশ্য অবলোকন করতে অন্যরকম ফিল হচ্ছিলো । এই ট্রেনে ওঠার যেটা কারণ ছিলো সেটা হলো আশেপাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতে শ্রীনগর যাওয়া । এই ট্রেন ধরতে না পারলে - হয় নেক্সট কোন ট্রেন পেতাম না, নাহলে পেলেও সেটা রাত হয়ে যেতো । ভিউ আর পেতাম না । আফসোস থেকে যেতো । সেই হিসেবে আমরা প্রায় ঘণ্টাখানেক সূর্যের আভা পেয়েছি । শেষ বিকেলে গরীবের টয় ট্রেনে চড়াটা বৃথা যায়নি ।
![]() |
পড়ন্ত বিকেল |
দ্রষ্টব্যঃ পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, বানিহাল থেকে একটু পরপরই শ্রীনগরে ট্রেন যায় । এভেইলেবল আর কি । বাট সমস্যা হলো মাঝেমাঝে রাস্তার সমস্যার কারণে হুট করেই বন্ধ হয়ে যায় । তাই এই রুট টা ফলো করতে চাইলে একটু চোখ কান খোলা রেখে চলবেন ।
Pir Panjal > The longest railway tunnel of India:
হ্যাঁ ইন্ডিয়ার সবচেয়ে লম্বা রেলওয়ে টানেলটি অবস্থিত এই রুটেই । পির পাঞ্জাল; অনেকে এটিকে বানিহাল রেলওয়ে টানেল নামেই চেনে । এর দৈর্ঘ্য ১১.২ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩ মিটার ।
![]() |
Pir Panjal tunel |
এই ব্যাপার টা বেশ মজা লেগেছে আমার কাছে । সত্যি বলতে আমি এই টানেলের ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানতাম না। ট্রেন যখন টানেলে প্রবেশ করলো তখন বুঝতে পারলাম এই রুটে একটি টানেল আছে । এই টানেল পার করতে আমাদের ট্রেনের ১০-১৫ মিনিট সময় লেগেছে । ট্যুর শেষ করে ঢাকায় ফিরে গুগলে ঘাঁটাঘাঁটি করে জানতে পেরেছি যে সেদিন আমরা যে টানেলের মধ্যে দিয়ে গেলাম, সেটিই ছিলো ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘতম টানেল । এরকম স্পেশাল কিছু জিনিসের সাথে পরিচয় হওয়াটা, সাক্ষী হয়ে থাকার ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগে আমার । ভ্রমণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে হয় ।
তিনদিন পর অবশেষে শ্রীনগরঃ
ভ্রমণ আর শেষ হতে চায় না । সেই ২৮ তারিখ রাতে ঢাকা থেকে বাসে উঠেছিলাম, এখনো চলছেই চলছেই । বানিহাল থেকে প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার ট্রেন ভ্রমণ শেষ করে রাত সাড়ে আটটার দিকে আমরা এসে নামলাম শ্রীনগর রেলওয়ে স্টেশনে । ট্রেন থেকে নেমে আসা গুটিকয়েক যাত্রীর গুটিগুটি পায়ের শব্দ বাদে আর কোন শব্দ নেই আশেপাশে । পুরোপুরি শীতের আমেজ চারিদিকে । সুন্দর ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন এবং গোছানো একটি স্টেশন । দেখলেই ভালো লাগে ।
![]() |
শ্রীনগর রেলওয়ে স্টেশন |
স্টেশন থেকে বেড়িয়েই ভাবলাম যাক, অবশেষে সেই কাঙ্খিত শ্রীনগরে চলে এলাম । কিন্তু বিধিবাম । শ্রীনগর রেলস্টেশন থেকে মূল শহর আরো প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে । ঢাকা থেকে অলরেডি প্রায় ২৬০০+ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে এসে মাত্র ১২ কিলোমিটারের জন্য নিশ্চয়ই বিধিকে দোষারোপ করছি না । ব্যাপার টা মূলত এটাই যে, কাশ্মীরে সাড়ে আটটা মানে অনেক রাত । উপরন্তু এই রেলস্টেশনটি একটি হাইওয়ের পাশে অবস্থিত । মহাসড়ক ধরে সব দূরপাল্লার যানবাহন সাঁই সাঁই করে আমাদের ফেলে রেখে চলে যাচ্ছে । সহযাত্রী সবাই এক/দুই জন করে মিলিয়ে যেতে শুরু করলো । গাড়ি না পেলে কি হবে - এটাই ভাবছিলাম তখন । আশেপাশে কোন ঘরবাড়িও নাই ।
অবশেষে শ্রীনগরগামী একটা বাস পেলাম । আমরা দুই বন্ধু খুশিমনে উঠে বসলাম বাসে । জীবনের প্রথম স্লিপার কোচে উঠলাম । অদ্ভুত স্লিপার কোচ । বাসের বাম সাইডে ছোট ছোট খোপের মতো স্লিপিং রুম, আর ডান সাইডে পুরোটা জুড়ে বসার চেয়ার। হাফ স্লিপিং কোচ, হাফ সিটিং কোচ । আমি মনে মনে এই কোচের নাম দিলাম "স্লিটিং কোচ" । জনপ্রতি ১৫ টাকা করে ভাড়া দিলাম । মিনিট বিশেক পরে আমাদের এনে শ্রীনগর নামিয়ে দিলো ।
অবশেষে শ্রীনগরে পৌঁছাতে পেরে একটু রিলাক্স বোধ করছিলাম । এখন কোন একটা হোটেল খুঁজে উঠে পরার পালা । আহ্! এখন একটু বিশ্রাম নিতে পারবো। কিন্তু এবারও হতাশ হতে হলো । শ্রীনগর সেন্টার মানে লালচক বলতে যেটা বুঝায় আর কি, সেটা এখনো ৫ কিলোমিটার দূরে । আমাদের যেখানে নামিয়ে দিয়েছে সেটা মূলত একটি বাসস্ট্যাণ্ড, নাম বাটামাল । সেখানে থেকে অটোতে চেপে যেতে হবে লালচক । তারপরে সেখানে গিয়ে যেখানে খুশি হোটেল নেয়া যাবে ।
আরেক যন্ত্রণা । একেতো চারিদিকে নীরব, উপরন্তু একটা লোক আমাদের তার হোটেলে নিয়ে যাবার জন্য টানাটানি শুরু করে দিয়েছে । আমি এসব টানাটানিতে সাধারণত গলি না কখনো । কারণ এই টানাটানিতে গলে গেলেই খরচ বাড়ে । নিজের মতো করে হোটেল খুঁজে উঠে পড়ি সবসময় । এতে করে তৃতীয় কারো পকেট ভারী হবার আশংকা থাকে না ।
কিন্তু আজকে আর খ্যাচখ্যচও করতে ইচ্ছে করছিলো না, উপরন্তু আমাদের হাতে সেরকম অপশনও ছিলো না । তাই বাধ্য হয়ে সেই ভাই এর সাথেই যেতে হলো । কথায় কথায় ভাইকে ভালো করেই বুঝিয়ে দিলাম যে ভাই আমরা কিন্তু বেশি বড় কাস্টমার না । ছাত্র মানুষ, খুব স্বল্প বাজেট । তার সাথে একটা অটো ছিলো । আমরা গিয়ে সেই অটোতে বসলাম । অটোতে গিয়ে দেখি অলরেডি আরো দুইজন কে তিনি কোথা থেকে যেনো ধরে নিয়ে এসেছেন । অটো চলতে চলতে আমাদের চারজনকে নিয়ে গেলো লালচকের অদূরেই ডাললেকের একটা হাউজবোটে । দুইজনে ৫০ টাকা অটোভাড়া দিয়ে হাউজবোটে একটা রুম দেখে মোটামুটি দামাদামি করে উঠে গেলাম ।
![]() |
হাউজবোটের রুম |
আমি সাধারণত প্রচুর দামাদামি করে ডিল করি, অনেকগুলো হোটেল দেখে তারপরে ফিক্সড করি । আমাদের বাজেট এবং রুট দেখে তথা প্রারম্ভিকা পড়ে এতোক্ষণে এই বিষয়ে একটা আইডিয়া পাঠক হিসেবে আপনার হয়ে যাবার কথা । কিন্তু আজকে সিচুয়েশন ছিলো না । এখানে যদি বাইচান্স রুম না নেয়া হয়, তাহলে ফের হোটেল খোঁজাখুঁজি করতে হবে । কিন্তু এই রাত নয়টার সময় শ্রীনগরে - নিশুতি রাতের গ্রামের আমেজ চলে এসেছে । বিপদে পড়ে যাবো রুম না নিলে । রুমটা ভালোই ছিলো সত্যি বলতে, ভাড়াও খুব বেশি না, মাত্র ৫০০রুপী । কথা ভালো মন্দ না, কথা হলো একটা নির্দিষ্ট এলাকায় বেড়াতে গিয়ে অনেকগুলো হোটেল দেখে সিলেক্ট করলে এই বিষয়ে একটা এক্সপেরিয়েন্স হয়, হোটেলগুলোর মাঝে ডিফার করার ক্যাপাবিলিটি তৈরি হয় । আমার বাজেটেরও সমস্যা, এক্সপেরিয়েন্স নিতেও ভালো লাগে, সো ইজি ।
হাউজবোটে উঠে ফ্রেশ হলাম । ভালো লাগছিলো এখন । হিসেব করে দেখলাম জম্মু থেকে হাউজবোট অবধি আসতে জনপ্রতি খরচ হলো সব মিলিয়ে ১৯০+১৫০+২০+১৫+২৫= ৪০০রুপী । এবং অবশেষে আমাদের টানা তিনদিনের ভ্রমণ শেষ হলো । ২৮ মে রাত দশটায় ঢাকা থেকে বাসে উঠে আজকে ৭২ ঘন্টা পরে ৩১ মে রাত ১০ টায় এসে পৌঁছলাম আমাদের গন্তব্যে । কোনরকম কোন যানবাহনের প্রি-রিজার্ভেশন না থাকা অবস্থায় ঢাকায় থেকে আমরা বাইরোডে যখন কাশ্মীর আসার প্ল্যান করছিলাম, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ধরেই নিয়েছিলাম যে অন্ততপক্ষে চার দিন বা ৯৬ ঘণ্টা লাগবেই এক্ষেত্রে । কিন্তু এরকম কোন টাইম লস ছাড়া পৌঁছাতে পারবো - সেটা একবারও ভাবিনি । যাক, এজন্য আলহামদুলিল্লাহ ।এখন শুধু বেড়ানোর পালা ।
বসে বসে এসব ভাবতে ভাবতেই সুফলের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম । সেই সাথে টের পেলাম পেটে ক্ষুধার অস্তিত্ব। সত্যি বলতে হাউজবোটের মালিক ভাইটি খুব ভালো ছিলো । আন্তরিকতা ছিলো কথায় এবং কাজে । সেই ভাইটিই আমাদের দুইজনকে নিজের অটোতে করে নিয়ে গেলেন শহরের ভেতরে একটা খাবার হোটেলে । একটা ভেজিটেবল ডিশ অর্ডার করলাম ৮০ রুপীতে । খুব ভালো লাগলো খেয়ে ।
![]() |
রাতের খাবার |
খাবার খেয়ে ফের চলে গেলাম হাউজবোটে । হাউজবোটে ফিরেই সুফলের সাথে আগামীদিনের প্ল্যান করছিলাম । প্রসঙ্গত, আমাদের সাথে আগত আরো যে দুইজন ছিলো - ইন দ্যা মিনটাইম, তাদের সাথেও আলাপ হলো । দুই ভাই- Suraj & Sushil. মহারাষ্ট্রে বাড়ি । তিনদিনের ছুটিতে দুই ভাই মিলে বেড়াতে এসেছে কাশ্মীরে । আমিই মূলত তাদেরকে একসাথে শেয়ারে ঘোরার প্রস্তাব টা দেই । গাড়ি ভাড়া কম লাগবে তাহলে । তারাও সহজেই রাজি হয়ে গেলো আমার প্রস্তাবে । ব্যস ! নেক্সট দিন সোনমার্গ বেড়াতে যাবার প্ল্যান করে যে যে যার যার মতো করে ঘুমিয়ে গেলাম কাশ্মীরের প্রথম প্রভাতের সূর্যোদয় দেখার প্রত্যাশায় । শুভ রাত্রি ।
আজকের খরচঃ(৩১/০৫/১৯)
১। জম্মু রেলস্টেশন - শ্রীনগর/রামবান/বানিহাল বাসস্ট্যাণ্ড = ২০/-
২। ব্রেকফাস্ট = ৮০/-
৩। জম্মু-রামবান(বাস) = ৩৮০/-
৪। খাওয়া = ১২০/-
৫। রামবান-বানিহাল(সুমো) = ৩০০/-
৬। বানিহাল-শ্রীনগর রেলস্টেশন(ট্রেন) = ৪০/-
৭। শ্রীনগর রেলস্টেশন-বাটামাল(বাস) = ৩০/-
৮। বাটামাল - হাউজবোট(অটো) = ৫০/-
৯। ডিনার = ১৬০/-
১০। হাউজবোট ভাড়া = ৫০০/-
মোটঃ ১৬৮০ টাকা ।
আপনার এই ব্লগ টা পড়ার মূহুর্তে চোর বাবাজি বাসের জানালা দিয়ে আমার মোবাইল নিয়ে উধাও
উত্তরমুছুনবেপার টা দারুন হইছে না
দুঃখজনক ব্যাপার টা । আপনার আরেকটু সচেতন থাকা উচিত ছিলো । আমি নিজে এই ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকি সবসময় ।
মুছুনVai batamal theke houseboat & sreenagor city er bepar ta ektu clear korle valo hoito ��
উত্তরমুছুনআপনার প্রশ্নই বুঝিনি, ক্লিয়ার আর কি করবো ?
মুছুনhouseboat er name ki vai?
উত্তরমুছুন