পঞ্চম পর্বঃ সোনমার্গের পথে

সবুজ সোনমার্গ 

হাউজবোটের প্রথম সকালঃ (০১/০৬/১৯)

পরদিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ঘুম ভাঙ্গলো । কাশ্মীর তথা ডাললেকে আমাদের প্রথম সকাল । ঈদের দিন ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যেমন একটা খুশি খুশি আমেজ কাজ করে, সেদিনও ভোরে ঘুম ভেঙ্গে তেমন খুশি খুশি লাগছিলো । বলে রাখি, নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোকে ওরা বলে শিকারা রাইড । কাশ্মীর বেড়াতে আসার আগে কিছু বিষয় অবশ্য কর্তব্যের অংশ হিসেবে জেনে এসেছিলাম । তারমধ্যে একটি ছিলো শিকারা রাইড এবং আরেকটি হলো একরাত ডাললেকের হাউজবোটে থাকা । সেই হিসেবে প্রথম রাতেই হাউজবোটে থাকার অভিজ্ঞতা হয়ে গেলো ।

ডাললেক এক্সপেক্টেশন;
পিক ক্রেডিটঃ হাদী ভাই 

বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে ডাললেকের ফিল নেয়ার জন্য লেকের পাশের দরজা খুলেই কিছুটা হতাশ হয়ে গেলাম। এ কেমন ডাললেক !  ছবিতে যেমন দেখতাম, তারসাথে তো সেরকম মিল পাচ্ছিনা, বুঝতেছিলাম একটু গড়মিল হচ্ছে কোথাও । আশেপাশের পানিও তেমন স্বচ্ছ না, উপরন্তু পানিতে ময়লা-আবর্জনা ভেসে বেড়াচ্ছে । ধুরু, কি দেখবো ভেবেছিলাম, আর কি দেখছি এখন । এক্সপেক্টেশনের সাথে রিয়েলিটি না মিললেও পরিবেশটা বেশ সুন্দর ছিলো ।

ডাললেক রিয়েলিটি 

অমনি পাটাতনের উপরে বসে কিছুক্ষণ রোদ পোহালাম । সকাল আটটার দিকে নাস্তা চলে এলো । নাস্তার কি নাম ছিলো ভুলে গিয়েছি, আমি রুটিই নাম দিলাম । খেতে বেশ ছিলো । দুইজনের তিন স্লাইস রুটি আর দুইটি আমলেট নিলাম, মূল্য এলো ১০০ টাকা ।

 ব্রেকফাস্টঃ  রুটি, আমলেট

কাশ্মীর এবং ট্যুরিজম প্রফেশনালিজমঃ 

কাশ্মীরের হোটেল, মোটেল বা হাউজবোটের ব্যাপারে কিছু বলি । ওরা এমনিতেই অমায়িক, অসাধারণ । কিন্তু সমস্যা একটাই, সেটা হলো একবার ধরলে আর ছাড়ে না । কখনোই তারা রুড হবে না, বরং আদর করে করেই ওদের প্যাকেজে ইনক্লুড করিয়ে ছাড়বে ।  আপনি ডিনাই করতে করতে ক্লান্ত হবেন, বাট ওরা আপনাকে ওদের প্যাকেজের সুবিধা বুঝাতে গিয়ে কখনোই ক্লান্ত হবে না । এমনও হয়েছে, রাস্তাঘাটে ওরা আমাদের দাঁড় করিয়ে লম্বা সময় ধরে শুধু বুঝিয়েই গেছে । আমি বোবার অভিনয় করেও নিস্তার পাইনি । নিজে নিজেই ৫-১০ মিনিট ধরে একলা বকবক করে গেছে, আর আমি তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছি কখন ওদের কথা শেষ হবে । ওদের শুধু একটাই কথা, মাত লো মেরা রুম, মাগার দেখো তো সাহি, দেখনে কে লিয়ে থোরি না প্যায়সা চাহিয়ে ! হা হা হা... দুঃখও লাগে, হাসিও আসে । তবে অনুরোধ থাকবে, কখনোই তাদের সাথে বেয়াদবি করবেন না । দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে বেশিরভাগ কাশ্মীরের মানুষের কাছে এতো এতো ভালোবাসা আর আন্তরিকতা পেয়েছি যে, সারাজীবন মনে রাখার জন্য তা যথেষ্ট ।

ওদের আরেকটা স্পেশালিটি হলো - ওরা সবাই ট্যুরিজম রিলেটেড অলমোস্ট সবরকম প্রসেসের সাথে যুক্ত । প্রতিটি হোটেল মালিকের ট্যুর প্যাকেজ সিস্টেম আছে, সবাই কার ড্রাইভিং জানে, ফটোগ্রাফি জানে, ইংরেজি জানে, নৌকা চালাতে পারে, গাইডের কাজ জানে... আরো যা যা লাগে আর কি, ওরা জানেনা এমন কিছু খুঁজে পাইনি আমরা । একটা প্রফেশনের লোক, বিভিন্নভাবে ট্যুরিজম রিলেটেড প্রতিটি প্রফেশন বা সিস্টেমের সাথে যুক্ত । এককথায়, ওখানে গিয়ে আপনি যে কাউকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলেই হলো, সে-ই সব সিস্টেম করে দেবে । আমরা অটোরিক্সা চালকের কাছে থেকে কার নিয়েছি, দোকানদারের কাছে থেকে হোটেল নিয়েছি । ব্যাপার টা এমন না যে তাদের কাছে গিয়ে সেই জিনিস টা আমরা চেয়েছি । ব্যাপার টা এমন যে, হয়তো চলতি পথে তাদেরকে বলেছি যে এই জিনিস টা লাগবে, কই পেতে পারি । সাথে সাথে দেখা গেলো ফোন বের করে কাকে ডেকে আনে । অটোওয়ালা কারের দামাদামি করে, দোকানদার মামা হোটেল দেখায় । কি একটা অবস্থা... আমরা দুই বন্ধু ফান করতে করতে তাই বলছিলাম, শালার আজকে যদি বলি ভাই আমাদের এখন হেলিকপ্টার রাইড দিতে ইচ্ছে করছে, দেখা যাবে সাথে সাথে ফোন বের করে বলবে - ভাই একটু ওয়েট করেন, হেলিকপ্টারে ফোন দিচ্ছি । হা হা হা...

মোদ্দাকথা, পয়সা বাঁচাতে চাইলে কোন সিস্টেমে পড়া যাবে না, বরং নিজেরাই সিস্টেম করতে হবে । আমি যেহেতু বাজেট ট্রাভেলার, সুতরাং ইচ্ছে থাকুক বা না, আমাকে এসবের মধ্যে দিয়েই যেতে হয়েছে । আপনারও যদি পয়সার সমস্যা থাকে তাহলে আপনাকেও এই পথেই আসতে হবে । আমার প্রতিটি হিসেবি এটিটিউড, বাজেট ম্যানার পয়েন্ট আউট করবেন, কাজে লাগবে ।

 যাহোক, প্রথমদিনেই আমরা এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম । যে হাউজবোটে রাতে ছিলাম, সেই মালিক ভদ্রলোক আমাদের ছাড়বেনই না। কতশত ভাবে বুঝালেন, বাট কাজ হলো না। প্যাকেজ না নিলেও যেনো নেক্সট রাতগুলোতেও তার ওখানেই থাকি, সেটাও বুঝালেন । রুম হিসেবে ৫০০ রুপী যে বেশি কিছু ছিলো তেমন না ।  কিন্তু আমার তো একটাই কথা, আমি যেখানে যাবো, সেই এলাকার সব হোটেল সম্পর্কে আইডিয়া লাগবে আমার । গতরাতে নাহয় বাধ্য ছিলাম ওই হাউজবোটে থাকার জন্য, আজকে নিশ্চয়ই দেখেশুনে উঠতে পারবো । আমরা চারজন একসাথেই মনমরা হয়ে থাকা হাউজবোটের ভাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে গেলাম ।



সোনমার্গের পথেঃ 

অদূরেই ছিলো শ্রীনগর সেন্টার পয়েন্ট - লালচক । ওখানেই ছিলো ট্যাক্সিস্ট্যাণ্ড । স্ট্যাণ্ডের ভেতরে ঢুকেই দেখলাম বিশাল একটা সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে, যেখানে বিভিন্ন জায়গায় আপডাউনের ভাড়া ফিক্সড করে দেয়া আছে ।

ট্যাক্সি ভাড়ার তালিকা

যতই ফিক্সড করা থাকুক, আমরা তো জানিই যে এরচেয়ে অনেক কমে ট্যাক্সি পাওয়া যাবে । লালচক থেকে Sonamarg রাউন্ড ট্রিপ ফুল ডে-র ভাড়া লেখা আছে ৩৪০৫ রুপী । কয়েকটি ট্যাক্সির সাথে কথা বললাম, ২৫০০ এর নীচে কেউ রাজি হলো না। বুঝলাম স্ট্যান্ডের বাইরে যেতে হবে, এখানে এরা সিণ্ডিকেট করে ফেলেছে । স্ট্যাণ্ডের বাইরে গিয়েই ২০০০রুপীতে ১০ সিটের একটা তাবেরা (kind of car/taxi) ম্যানেজ করে ফেললাম । ভালোই হলো । সকাল নয়টার দিকে আমি, সুফল আর সেই সূর্য ভাই এবং সুশীল ভাই উঠে পড়লাম গাড়িতে ।


আমরা যে রোডে যাচ্ছি এটাই মূলত লাদাখের রোড । লালচক থেকে সোনমার্গ প্রায় ৮৩ কিলোমিটার দূরে, গাড়িতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা । আজকের জার্নিটা ব্যাপক লাগছিলো । রাস্তার পাশে থেকে কিছু চেরি ফল কিনে নিলাম । খেতে খেতেই চোখ বুলাচ্ছিলাম । চারিদিকের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য মনকে প্রশান্ত করে দিচ্ছিলো । এই রোডের স্পেশাল আকর্ষণ ছিলো এর পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী Sind River. অসম্ভব সুন্দর একটি নদী এটি । প্রায় ১০৮ কিলোমিটার লম্বা এই নদীটি হলো ঝিলাম(Jehlum) নদীর উপনদী । জম্মু-কাশ্মীরের একমাত্র নদী যেখানে তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আছে ।

ভয়ংকর স্রোতের পাশে তাল মিলিয়ে গাড়িতে করে ছুটে যেতে যেতে তার সাঁ সাঁ শব্দ একটা মোহ ধরিয়ে দিয়েছিলো । জীবনটাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছিলো । এতো ভালো লাগাগুলোকে কোন মূল্য দিয়েই বিচার করা যায় না । একটা সময় খেয়াল  করলাম আমাদের গাড়ি গন্তব্যে চলে এসেছে ।

প্রায় সোয়া বারোটা বাজে তখন । গাড়ি থেকে নেমেই দেখলাম আরো অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে । বুঝলাম এটাই সেই পয়েন্ট যেখানে গাড়ি থেকে নেমে ঘোড়া নিতে হয় । কাশ্মীরের সবগুলো ট্যুরিস্ট স্পটই এই সিস্টেমের । গাড়ি একটা নির্দিষ্ট পয়েন্টের পরে আর যাবে না, মানে আর গাড়ি চলার রাস্তা নেই। সেখানে থেকে ঘোড়ায় চড়ে যেতে হবে কাঙ্খিত গন্তব্যে । সেই ঘোড়ায় চড়াকেই কাশ্মীরি ভাষায় বলে পনির রাইড । শালার খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি টাইপের অবস্থা আর কি । গাড়ি ভাড়া লাগে ৫০০ টাকা তো ঘোড়া ভাড়া লাগে ৭০০ টাকা । এটা হলো কিছু !

আমি এর আগে যতগুলো ভিডিও, ব্লগে বা ফেসবুকে কাশ্মীর রিলেটেড আর্টিকেল পড়েছি, কোথাও এই একটা জিনিস পেয়েছি কিনা মনে পড়ে না যে আপনার যদি বাজেটের সমস্যা থাকে, তাহলে আপনি চাইলে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেও আপনার কাঙ্খিত গন্তব্যে যেতে পারবেন । সবাই দামাদামি করে ঘোড়া ঠিক করা বা সিণ্ডিকেটের বাইরে একটু দূরে গিয়ে কম খরচে ঘোড়া নিয়ে গন্তব্যে যাবার কথা বলেছে । তাতেও অন্তত ৫০০ টাকা লেগেই যায় । আমি তখন এসব আর্টিকেল পড়ে কনফিউশড হয়ে যেতাম, কেনো কেউ হেঁটে যাবার পরামর্শ দেয়না । তাহলে কি হেঁটে যাবার মতো ব্যবস্থা নেই নাকি ? সেরকম হলে ঘোড়া কিভাবে যায় ? ঘোড়ার নিশ্চয়ই পাখা নেই । থাকলেও মন্দ কি ! ৫০০ টাকায় পঙ্খিরাজে চড়তে আমারও আপত্তি ছিলো না । কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখলাম নাহ ঘোড়ারও পাখা নেই, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে পায়ে হাঁটারও সুন্দর রাস্তা রয়েছে ।

সোনমার্গের পথে 

ব্যস, পায়ে পায়ে এগোতে শুরু করলাম আমরা চারজন । পথে অনেক ঘোড়াওয়াল খুব করে অনুরোধ করছিলো তাদের ঘোড়ায় চড়ার জন্য । অনেক রকম ছাড় দেয়ার কথা বলছিলো । কাজ না হওয়ায় শেষে ভয় দেখাচ্ছিলো যে অনেক কষ্ট, আমরা পায়ে হেঁটে যেতে পারবো না হাবিজাবি... কে শোনে কার কথা । সবাই যায় ঘোড়াতে, আমরা চারজন হেঁটে । আমি বলবো - হেঁটে যেতে আমার ভালোই লাগছিলো সত্যি বলতে । সবুজের গালিচা ধরে টিপটিপ পায়ে হেঁটে চলা, মন্দ কি । সৌন্দর্যের শুরু এখানে থেকেই ।




প্রায়  সোয়া একঘণ্টা হাঁটার পরে দেখা মেলে সোনমার্গের পাশে দিয়ে বয়ে চলা এই নদীর । নাম Nallah Sindh, এটিও ঝিলাম নদীর একটি উপনদী । অসম্ভব ঠাণ্ডা এর পানি । নদীর বয়ে চলার ধ্বনি যে কারো ক্লান্তি দূর করিয়ে দিতে পারে । আমি অনেক্ষণ নদীর পাড়ে বসে ছিলাম । 

Nallah Sindh River 

সেখানেই দেখলাম স্থানীয় কিছু দরিদ্র অধিবাসীদের বাড়ি রয়েছে । এরা সবাই ভেড়া পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে । খুবই আন্তরিক মানুষ তারা । কাশ্মীরিরা বাংলাদেশীদের খুবই পছন্দ করে । যে কাউকে বাংলাদেশী পরিচয় দিতে খুব ইজি ফিল করতাম । ওখানে ওদের ঘরবাড়ি দেখে জসীমউদ্দীনের "আসমানী'' কবিতাটি খুব মনে পড়ছিলো ।

স্থানীয়দের ছোট্ট কুঁড়েঘর

"আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও,
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘড় নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে ।"

আমার মনে হচ্ছিলো আমি যেনো ঠিক রসুলপুরে চলে এসেছি । একদম প্রকৃতির মাঝে থাকে বলেই হয়তো তারা এতো নিঃস্বার্থ, এতো ভালো আর নির্লোভ । সবসময় তাদের জন্য দোয়া করি ।

যাহোক, বিকাল তিনটা নাগাদ চলে গেলাম সোনমার্গ জিরো পয়েন্টে । সাড়ে বারোটায় হাঁটা শুরু করে তিনটায় পৌঁছানোর মানে এই না যে অনেক লম্বা পথ, বরং আমরা ধীরে ধীরে দেখতে দেখতে আড্ডা দিতে দিতে গিয়েছি । তাই এতো সময় লেগেছে ।

বরফের পাহাড়ে ঘেরা একটি জায়গা । চারিদিকে শুধুই শুভ্র বরফ । ওখানে গিয়ে সবাই দেখলাম বরফের পাহাড়ে চড়ার প্রস্তুতি হিসেবে গামবুট, ট্রাউজার সহ বিভিন্ন পোশাক ভাড়া নিচ্ছে । আমি এসবের কিছুই নিলাম না । কারণ আমি জানি এসব খুব বেশি ম্যাটার করে না । এই ব্যাপারে একটি জিনিস লক্ষ্য করেছি আমি । গতবছর আমরা চার বন্ধু যখন মানালিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম তখন জনপ্রতি ২৫০রুপী হারে শীতের পোশাক ভাড়া করেছিলাম। পোশাকগুলোও ছিলো দেখার মতো । সোয়েটার এবং প্যান্ট একদম এটাচড, সাথে গামবুট ।
মানালিতে বরফের পাহাড়ে চড়ার পোশাক,
মডেলঃ আমার এক বন্ধু 
একটা বিশাল প্রস্তুতি । অথচ সেই পাহাড়ে আদৌ পর্যাপ্ত বরফ আছে কিনা, সেটা নিয়েই সংশয় ছিলো । সেই হিসেবে কাশ্মীরে সারাবছর বরফ থাকে এবং পাহাড়গুলোও একেকটা মনে হয় পুরোটাই বরফের । কিন্তু কাশ্মীরে এসব শীতের পোশাক নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী বা পর্যটক কারোরই তেমন হেডেক নাই । শুধু বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গামবুট বা ক্ষেত্রবিশেষে সোয়েটার ভাড়া নিচ্ছে লোকজন । সেই হিসেবে মানালিতে এই পোশাক ভাড়া দেয়ার রমরমা ব্যবসা চলে । আমি এতো করে চিন্তা করে মানালি গিয়েছিলাম যে শীতের পোশাক ভাড়া নেবো না, তবুও ওরা কিভাবে যেনো মোটিভেট করে ফেললো ।  তাই এবার কাশ্মীরে গিয়ে ন্যুনতম গামবুট টাও নেইনি । যাদের টাকার সমস্যা থাকে, তাদের এসব কিছুই লাগে না । তবে হ্যাঁ ওসব পরে একটু ভাব নিয়ে পিক তোলা যায় আর কি । ওই পিক ফেসবুকে আপলোড দিলে প্রচুর ওয়াও রিএক্ট আসে । বন্ধু সমাজে আলাদা একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় । এই আর কি !
সোনমার্গ জিরো পয়েন্ট 

যাহোক, সোনমার্গে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম, বরফে ঘুরে বেড়ালাম । আশেপাশে সবাইকে দেখলাম অনেকরকম বরফের খেলাধুলা করছে । উপরে থেকে কিছু একটাতে চড়ে নিচে পিছলে পড়ছে, স্কিং খেলছে ... আরো কি কি ছিলো বোধহয় । আমি এসব কিছু নেইনি  ।  শুধু শুধু টাকা খরচ করার কোন ইচ্ছে ছিলো না ।

সোনমার্গ

আমরা চারজন 
এতোক্ষণে বেশ ক্ষুধা লেগে গেছে । কিছু খাওয়াদাওয়া করলাম ওখানে । খেয়ে দেয়ে বিকাল পাঁচটা নাগাদ ব্যাক ওয়েতে হাঁটা শুরু করলাম ।এবার হাঁটতে গিয়েও সেই ক্লান্তি বোধটা ছিলো না । পাহাড়ে চড়তে কষ্ট কম হয় না সত্যি বলতে । বাট আহ্লাদের কাছে সেই ক্লান্তি ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারেনি । আবার সেই সবুজের গালিচা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম । একজায়গায় দেখলাম ক্যাম্পিং করার জন্য একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে ।
ক্যাম্পিং এর জন্য নির্ধারিত জায়গা

সোনমার্গ
হাঁটতে হাঁটতে প্রায় সাড়ে ছয়টা নাগাদ আমরা এসে পৌঁছাই আমাদের গাড়ির কাছে । ড্রাইভার ভাই আমাদের জন্যই অপেক্ষায় ছিলো । আমরা গিয়ে পৌঁছানো মাত্রই গাড়ি ছেড়ে গেলো শ্রীনগর অভিমুখে ।আবার সেই মন মাতানো পথ আর পথের পাশের Sind নদী ।

প্রায় সাড়ে নয়টা নাগাদ গিয়ে পৌঁছালাম শ্রীনগরে । ফিরতে এতো রাত হবে বুঝতে পারিনি । এখন হোটেল ঠিক করতে হবে । আগেই বলেছি কাশ্মীরে সাড়ে নয়টা মানে অনেক রাত । চারিদিক নীরব, নিস্তব্ধ । এর মাঝেই বেশ কিছু হোটেল দেখলাম । একটু প্যারা হয়ে গিয়েছিলো হোটেল দেখার ব্যাপার টা সত্যি বলতে । তবুও কি করা যাবে । দেখে শুনে একটাতে উঠে গেলাম ।
হোটেল রুম, ভাড়া ৪০০ রুপী
বিশাল রুম , বিশাল দুইটা খাট । ৬ জন আরামে থাকা যায় । এমন একটা রুমে আমি আর সুফল উঠলাম, আরেকটাতে উঠলো ওরা দুই ভাই । ভাড়া প্রতি রুম ৪০০ রুপী । ভাড়া হিসেবে রুম ভালোই ছিলো । লোকেশন বলতে গেলে বলা যায়, এটা লালচকের এক্কেবারে মাঝেই ছিলো । রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম । এরপরে চারজনে মিলে হোটেলে খেলাম । রুমে ফিরে আগামীকাল গুলমার্গের প্ল্যান করে ঘুমিয়ে গেলাম সবাই ।


আজকের খরচঃ(০১/০৬/১৯)

১। ব্রেকফাস্ট = ১০০ রুপী
২। শ্রীনগর-সোনমার্গ(২জনের ভাড়া) = ১০০০/-
৩। চেরি ফল = ১০০/-
৪। দুপুরের খাওয়া = ১০০/-
৫। রাতের খাওয়া = ২১০/-
৬। হোটেল = ৪০০/-

মোটঃ ১৯১০ রুপী 











মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কম খরচে কাশ্মীর-লাদাখ-মানালি ভ্রমণ

১০৫০ টাকায় ঢাকা থেকে চারদিনের রাজশাহী+নওগাঁ সফর

কম খরচে সিমলা-মানালি ভ্রমণ