মেঘালয় সফরনামাঃ পঞ্চম পর্ব (চেরাপুঞ্জি এবং শিলং)
শিলং হলো নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়ার একটি হিলস্টেশন এবং মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী । আচ্ছা আপনারা হিলস্টেশন শব্দটার অর্থ জানেন ? হিলস্টেশন বলা হয় মূলত সেইসব শহরকে যেগুলো নরমাল ভ্যালী বা সমতল ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত । বাংলাদেশের সিলেট এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অল্প কয়েকটি হিলস্টেশন থাকলেও পার্শ্ববর্তী ভারতে অসংখ্য হিলস্টেশন রয়েছে । শিলং তারমধ্যে একটি । শিলং-এ আসলে দেখার মতো অনেক কিছু থাকলেও আমার মতে সবগুলো দর্শনীয় স্থান ঠিক অতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয় । শিলং সিটি ট্রিপটা বেকার মনে হয়েছে আমার কাছে । আপনারা চাইলে স্কিপ করতে পারেন সিটি ট্রিপ টা । শিলং এর কাছাকাছি যতগুলো স্পট রয়েছে আমি তার একটা তালিকা দিলাম। এখানে থেকে নিজের মতো করে বাছাই করে নিতে পারেন । আর সেই সাথে আমার সাজেশন তো থাকবেই ।
১। শিলং পিক (Shillong View Point, Laitkor Peak)
২। লেডি হায়দারি পার্ক (Lady Hydari Park)
৩।গলফ কোর্স (Golf Course)
৪। ওয়ার্ডস লেক (Ward's Lake)
৫। বিশপ ফলস (Bishop's Falls)
৬। ডন বস্কো মিউজিয়াম (Don Bosco Museum)
৭। ক্যাথিড্রাল চার্চ (Cathedral of Mary Help of Christians)
৮। উমিয়াম লেক/ বারাপানি লেক (Umiam Lake / Barapani)
৯। এলিফ্যান্ট ফলস (Elephant Falls)
১০। নেহু (North Eastern Hill University)
১১। লাইটলুম ক্যানিয়ন (Laitlum Canyon)
গুগল ম্যাপে শিলং এর দর্শনীয় স্থানসমূহ |
২০১৭ সালের পরে থেকে শিলং পিকে বিদেশীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় । এখানে প্রবেশের জন্য ভারতীয়দের আইডি কার্ড শো করতে হয় । এটা মেঘালয়ের সর্বোচ্চ উচ্চতার একটা স্থান যেখানে থেকে গোটা শিলং শহরটা দেখা যায় । তবে বিদেশীদের প্রবেশাধিকার আদৌ সীমাবদ্ধ কিনা, এটা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছে । সংশয় এড়াতে আমরা আর ওইদিকে যাইনি । তবে শুনেছি অনেক সুন্দর নাকি জায়গাটা । ট্রিপের পূর্বে আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখবেন বিষয়টা । আর উক্ত তালিকায় ২-৫ নম্বরে উল্লেখ্য স্থানসমূহ একদম শিলং শহরের আশেপাশেই অবস্থিত । এগুলোতে আমরা যাইনি আর যাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করিনি । নেহু এবং ডন বস্কো সম্পর্কে অলরেডি জেনেছেন এবং গল্পে গল্পে বাকিগুলোও চলে আসবে । চলুন আজকের গল্পে ফিরে যাই ।
ডান্থলেন ফলস (Dainthlen Falls,Meghalaya):(১৯/০৮/১৮)
গতদিন ঠিক করে রাখা ট্যাক্সিটাকে আমাদের হোটেলের এড্রেস দিয়ে রেখেছিলাম । একদম সকালেই দেখি বেচারা হাজির । আমরাও ফ্রেশ হয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসলাম । আমাদের আজকের প্রথম গন্তব্য চেরাপুঞ্জির ডান্থলেন ফলস । পথের যে সৌন্দর্য ছিলো, অনবরত এই পথে আপডাউনের কারণে আমরা এই সৌন্দর্যে অনেকটাই ইউজড টু হয়ে গিয়েছিলাম এতোদিনে । তাই আলাদা করে আর কিছু বলছিনা পথের সৌন্দর্য নিয়ে ।
আমরা ডান্থলেনে যখন পৌঁছাই তখন ঘড়িতে বাজে সকাল সাড়ে সাতটার মতো । ডান্থলেনে গিয়েই একটা ধাক্কার মতো খেলাম । কোন কোন ঝর্ণা দেখবো, মেঘালয়ে আসার আগে প্রতিটি ঝর্ণা ইউটিউবে দেখে এরপরে সিলেক্ট করেছিলাম । সবচেয়ে বেশি মারাত্মক লেগেছিলো এই ডান্থলেন ফলস টা । ইউটিউবে দেখে মনে হচ্ছিলো পুরো চেরাপুঞ্জি ভেঙ্গে ঢল নেমেছে এই ডান্থলেনে । কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখি সেই তুলনায় অনেক শীর্ণ একটা ঝর্ণা এটা । আসলে গত কয়েকদিন তেমন জুতসই বৃষ্টি না হওয়ার কারনে ঝর্ণার এমন দশা ছিলো ।
ডান্থলেন ফলস |
ডান্থলেন ফলস |
ডান্থলেন ফলসের উপরিভাগ |
পিকচারে শুকনো জায়গা যা দেখছেন, ভরা বর্ষায় এর সবটা জুড়েই পানি গড়িয়ে পড়ে । মারাত্মক ঢল নামে পানির । তবে পানির ফ্লো খুব বেশি না থাকলেও ওখানের পরিবেশটা কেমন শান্তি শান্তি টাইপ ছিলো । পিকচার দেখে মনে হয় না জানি কেমন রোদ ছিলো... কিন্তু আসলেই তা না । খুব ভালো লাগছিলো ঝর্ণার পাশে সময় কাটাতে । আমাদের যেতেই ইচ্ছে করছিলো না । কিভাবে কিভাবে দেড় ঘণ্টা পার করে দিলাম সেখানেই । অবশেষে বাধ্য হয়ে মুভ করতে হলো । একজায়গাতেই এতো সময় দেবো, তাহলে বাকিগুলো দেখবো কখন !
ওয়াহ কাবা ফলস (Wah kaba Falls):
ডান্থলেন থেকে সরাসরি চলে গেলাম ওয়াহকাবা ফলসের কাছে । এখানে আবার জনপ্রতি ১০ রুপী হারে এন্ট্রি ফি দিতে হলো । এমন আহামরি কোন ঝর্ণা না । রাস্তার পাশেই ছিলো, দেখে গেলাম এই আর কি । আসলে ঝর্ণা সুন্দরই, কিন্তু এতো সুন্দর সুন্দর ঝর্ণা দেখে এটা আর তেমন চোখে ধরছিলো না । আধাঘণ্টার মতো ছিলাম এখানে ।
![]() |
ওয়াহকাবা ফলস |
ওয়াহকাবা ফলসের সামনে |
এলিফ্যান্ট ফলস (Elephant Falls):
ওয়াহকাবা ফলস থেকে ফের ট্যাক্সিতে গিয়ে বসলাম । যখন এলিফ্যান্ট ফলসের সামনে গেলাম তখন বাজে সকাল ১১ টার মতো । এখানে তিনজনের এন্ট্রি ফি গেলো ৬০ রুপী আর গাড়ির পার্কিং ফি গেলো ৪০ রুপী । উপরের ঝর্ণা দুইটা যখন দেখি তখন দর্শনার্থী হিসেবে ছিলাম শুধুমাত্র আমরাই তিনজন । তাই প্রকৃতিকে নিজেদের মতো করে উপভোগ করতে পেরেছিলাম । কিন্তু এই হাতিমার্কা ঝর্ণার সামনে এসেই দেখি অনেক মানুষের ভীড় । তিন ধাপের ঝর্ণা । দেখতে সুন্দর । কিন্তু এতো মানুষের আনাগোনা পছন্দ হচ্ছিলো না । তাই বেশিক্ষণ এখানে থাকার ইচ্ছে হলো না । কিছুক্ষণ পরেই বের হয়ে এলাম ।
এলিফ্যাণ্ট ফলসের সামনে আমরা তিন বন্ধু
এলিফ্যান্ট ফলস |
লাইটলুম ক্যানিয়ন (Laitlum Canyon):
এলিফ্যাণ্ট ফলস থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলাম লাইটলুম ক্যানিয়নে এবং সেই সাথে দেখে নিলাম আমাদের মেঘালয় ট্রিপের সবচেয়ে সুন্দরতম জায়গাটা । ভয়ংকর সুন্দর একটি জায়গা এই লাইটলুম ক্যানিয়ন । এখানে এসে আমাদের মাথা নষ্ট হয়ে যাবার জোগাড় হয়ে গিয়েছিলো সত্যি বলতে । আবেগে পাহাড় থেকে যে লাফিয়ে পড়িনি সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। পুরো মেঘালয় ট্রিপ জুড়ে চারপাশের দৃশ্যের কত প্রশংসা করলাম, কিন্তু এই লাইটলুম ক্যানিয়ন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে সৌন্দর্যের মাত্রা বিবেচনায় । সৌন্দর্য জিনিস টা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আপেক্ষিক একটা ইস্যু । কিন্তু এই লাইটলুম ইস্যুতে আমরা তিন বন্ধু সহমত ছিলাম । তিনজন মিলে রায় দিলাম গোটা মেঘালয়ের মধ্যে আমাদের দেখা সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান ছিলো এই লাইটলুম ক্যানিয়ন ।
![]() |
লাইটলুম ক্যানিয়ন |
লাইটলুম ক্যানিয়ন |
লাইটলুম ক্যানিয়ন |
লাইটলুম ক্যানিয়ন |
![]() |
লাইটলুম ক্যানিয়ন |
![]() |
লাইটলুম ক্যানিয়ন |
বেশ কিছুক্ষণ বসে ছিলাম এখানে । হঠাত দেখি আকাশ ভেঙ্গে সমস্ত মেঘ যেনো আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে । মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি । একটা সময় সমস্ত মেঘ এসে গোটা ক্যানিয়নকেই ভরিয়ে দিলো । আশেপাশে কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না এমন অবস্থা । এতো ঘন হয়ে মেঘ এসে আমাদের ছুঁয়ে দিচ্ছিলো যে আমরা ভিজে যাচ্ছিলাম । এতো সুন্দর একটা দৃশ্য সত্যিই ভাবা যায় না । সামান্য অংশ ভিডিও করে এনেছিলাম । পরে ভিডিও টা ফেসবুকে আপলোড দিয়েছি । এখানে লিংক দিলাম । আপনারা অবশ্যই দেখে নেবেন ভিডিওটা । ভিডিও দেখেই পাগল হয়ে যাবেন শিওর ।
মেঘের তোড়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারছিলাম না । আবার এদিকে ক্যানিয়নের ঢালে বসে থাকায় একটু ভয় ভয়ও লাগছিলো ... নীচে পড়ে যাই যদি । তাই ব্যাক করতে শুরু করলাম ধীরে ধীরে । মেঘের জন্য সমতল ভূমিতেও ভালোভাবে কিছু দেখা যাচ্ছিলো না । কানার মতো তিন বন্ধু হাতড়ে হাতড়ে পিছাতে লাগলাম । একটা সময় মেঘগুলো বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ধরণীতে পড়তে শুরু করলো । সেই সাথে আশেপাশের দৃশ্যগুলো কিছুটা স্বচ্ছ হয়ে আসছিলো । তিনজনে প্রায় দৌঁড়ে নিজেদের ট্যাক্সিতে গিয়ে বসলাম । ততোক্ষণে অনেকটাই ভিজে গিয়েছি । ট্যাক্সিতে বসা মাত্র ট্যাক্সি ধীরে ধীরে চলা শুরু করলো । কিন্তু আমাদের আর মোহ কাটেনা । এটা কি দেখলাম ! মনপ্রাণ ভরে গেছে একদম । কতক্ষণই বা ছিলাম সেখানে ? বড়জোর আধাঘণ্টা ! এই আধাঘণ্টা সময়কাল জীবনে এমন একটা ঘটনা হয়ে রইলো যা কোনদিন ভুলতে পারবো না । গাড়িতে বসে তিনজনই চুপ ! মনে হয় তিনজনেই ট্রমাটাইজড হয়ে গিয়েছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম... আমরা এটা কি দেখলাম ! বিয়ের পরে বউ নিয়ে একদিন লাইটলুম ঘুরতে আসবো, এই প্ল্যান করতে করতে তিন বন্ধু মিলে রওনা দিলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ক্যাথিড্রাল চার্চ অভিমুখে ।
উল্লেখ্য লাইটলুমে কোন এন্ট্রি ফি লাগেনা । কিন্তু আমাদের ৫০ রুপী দিতে হয়েছিলো । কিজন্য দিয়েছিলাম ভুলে গিয়েছি । হতে পারে কার পার্কিং এর খরচ । আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখি এখানে ট্রেকিং করার ব্যবস্থা রয়েছে । আগ্রহী পর্যটকরা আগে থেকেই বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে যাবেন । হোপফুলি দারুণ একটা ট্রেকিং ডেস্টিনেশন হবে এটা ।
ক্যাথিড্রাল চার্চ (Cathedral of Mary Help of Christians):
এটা নিয়ে কিছু বলার নেই আলাদা করে । আলাদা করে কোন আগ্রহ না থাকলেও শিলং ডে ট্রিপের বাকেট লিস্টে এই স্পট থাকে বলে এবং একইসাথে আমাদের যাত্রাপথে পড়েছিলো বলেই দেখলাম । নাথিং স্পেশাল । তবে হ্যাঁ যারা চার্চ কেমন হয় জানেন না বা এই বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে তারা যেতে পারেন । অল্প কিছুক্ষণ থেকে চলে এলাম ।
ক্যাথিড্রাল চার্চ |
উমিয়াম লেক/ বারাপানি লেক (Umiam Lake / Barapani):
সুফলের এক মামা আছেন । ভদ্রলোক ভারতের প্রায় সবগুলো প্রদেশই ঘুরেছেন । আমাদের জন্য তার তরফ থেকে সাজেশন ছিলো আমরা যেনো অবশ্যই উমিয়াম লেকে যাই । দেখলাম এতো বড় ট্রাভেলার মামার সাজেশন ফেলাই কিভাবে ! তাই বেশ আগ্রহ নিয়েই ক্যাথিড্রাল চার্চ থেকে চলে গেলাম উমিয়াম লেকে । শহর থেকে বেশ অনেকটা দূরে ছিলো এই লেক । লেক পাওয়ার একটু আগে থেকে লেকের পাশে দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গিয়েছে সেটা বেশ সুন্দর ছিলো । মানুষজন দেখি বিকেলের অবসর সময় কাটাচ্ছে আশেপাশে দিয়ে । আমরা সরাসরি লেকের প্রবেশ পথে চলে গেলাম ।
এই ট্রিপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল টিকিট ছিলো উমিয়াম লেকের । টিকিট মূল্য ৫০ রুপী । একটু রাগ লাগছিলো এজন্য । এতো বড় বড় ঝর্ণা থেকে শুরু করে এই বিশাল উন্মুক্ত লেকটা অবধি বেড়া দিয়ে টিকিট সিস্টেম করে ফেলেছে । ১০-২০ রুপী তাও মানা যায়, কিন্তু তাই বলে ৫০ ! মনে মনে ভারতীয়দের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধারের পরিকল্পনা করতেই মনে পড়ে গেলো আমি তো বাংলাদেশী । আমাদের একটা সাজেক আছে, একটা সেন্টমার্টিন, একটা সুন্দরবন আছে । আমরা সেখানে ট্যুরিস্টদের ধরে নিয়ে গিয়ে গলা কাটি । সেখানে ৫০ রুপীর জন্য অন্তত বাংলাদেশী হিসেবে ভিন দেশে গিয়ে প্রতিবাদী আচরণ শোভা পায় না ।
যাহোক টিকিট হাতে নিয়ে প্রবেশ করলাম সেই বিখ্যাত উমিয়াম লেকে । স্থানীয়রা এই লেকটাকে Dam Sait নামে ডাকে । লেকের আয়তন প্রায় ২২০ বর্গকিলোমিটার । গিয়ে লেকের পাশে দাঁড়ালাম । অনেক মানুষজন এসেছে দেখলাম । অনেকেই দেখি শ্যুটিং করছে । লেকের মাঝে জায়গায় জায়গায় দ্বীপের মতো স্থলভাগ রয়েছে । মোটের উপরে দেখতে খারাপ না । কিন্তু কেনো যেনো আমাদের কাছে ঠিক স্যুট করছিলো না । এরচেয়ে আমাদের দেশের মহামায়া লেকটাই বেশি ভালো লেগেছিলো আমার কাছে । পরবর্তীতে ট্রিপ শেষে দেশে ফিরে এসে যখন লেকের পিকচারগুলো দেখছিলাম বা চোখ বন্ধ করে মনে মনে লেকটাকে মেমোরাইজ করছিলাম, ভালোই লাগছিলো ।বুঝলাম না ঘুরতে যাবার দিন তাহলে তেমন ভালো লাগলো না কেনো !
এর পেছনে আমি কিছু ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি । হয়তো লাইটলুমের মতো এতো সুন্দর একটা জায়গা থেকে ঘুরে এসে সেই ঘোর কাটার আগেই ঢুকে গিয়েছিলাম লেকে । তাই সেভাবে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারিনি । এটাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কারণ বলে মনে হয়েছে আমার কাছে । অথবা লেকের আসল সৌন্দর্য হলো লেকের বুকে কায়াকিং করা । অথবা সারাদিন ক্লান্ত সময় কাটিয়ে অবসন্ন বিকেলে ঘুরতে এলে এই লেকটা পূর্ণতা এনে দিতে পারতো ।
উমিয়াম লেক |
যাহোক, আমাদের কাছে তেমন ভালো লাগেনি দ্যাটস ইট । অমনি ৫০ রুপী উসুল করার নিমিত্তে কিছুক্ষণ কাটিয়ে সুফলের মামাকে শাপান্তর করতে করতে আমরা তিন দরিদ্র পর্যটক ফের গিয়ে বসলাম ট্যাক্সিতে । এবার গন্তব্য আবার সেই নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটি ওরফে নেহু ।
North Eastern Hill University(NEHU):
আজকে ফের নেহুতে আসার পেছনের প্রধান কারণ ছিলো গতদিন সন্ধ্যা হবার কারণে ঠিকমতো ঘুরে দেখতে পারিনি । তাই আজকে গিয়ে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখাটাই ছিলো মেজর উদ্দেশ্য । উপরন্তু ক্যাম্পাসে গতদিন যাদের সাথে দেখা হলো তাদের সাথে আড্ডা দেয়াও হবে । কিন্তু বিধি বাম ! আজকেও যখন ক্যাম্পাসে গেলাম তখন ঘড়িতে ছয়টার মতো বাজে । বড়জোড় আর আধাঘণ্টা সূর্যের অস্তিত্ব আছে । আজকেও ক্যাম্পাসটা ঠিকমতো দেখা হবে না বলে আফসোস লাগছিলো ।
একটা বিষয় এড করি । আমরা আসলে সিম কেনা বাবদ অতিরিক্ত খরচ এড়াতে দেশে থেকেই দুইটা ভারতীয় সিম কার্ড নিয়ে গিয়েছিলাম । তারমধ্যে একটা সিম এক বন্ধু দিয়েছিলো । আপনার কোন ভারতীয় সিম হোল্ডার বন্ধু নেই বলে যেনো কোন এক্সকিউজ দেখাতে না পারেন এজন্য জানাচ্ছি যে... আমরা আর একটা সিম পেয়েছিলাম টব হেল্পলাইনে পোস্ট দিয়ে । এক অপরিচিত বড় ভাই দিয়েছিলেন। ট্যুর শেষে তাকে সেটা যথাযথভাবে ফেরত দিয়েছিলাম । সিমে টাকা রিচার্জ করতে গেলে বলে ১০০ রুপীর নীচে হবে না । সেজন্য রিচার্জও করিনি । সিমে আগে থেকেই যে ৫-১০ রুপী ছিলো, সেটা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিয়েছি । মানে বিষয়টা এটাই যে আপনার যদি বাজেট একদম কম থাকে আর ঘোরার ইচ্ছে একদম সর্বোচ্চ থাকে তাহলে দেখবেন কিভাবে না কিভাবে সব ব্যবস্থা হয়েই গেছে । এটার চেয়ে বড় সত্য আর কিছু হতে পারেনা । এর জলন্ত উদাহরণ আমাদের এই ট্রিপগুলোই ।
গল্পে ফিরে যাই । ক্যাম্পাসে গিয়েই ফোন দিলাম এক আপুকে । আমরা বাংলাদেশী বলে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য তারা আরো নতুন কয়েকজন বাংলা ভাষাভাষী সঙ্গীদের সাথে নিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে যতোটা সম্ভব ঘুরে দেখলাম ক্যাম্পাসটা । এরপরে আপুরাই আমাদের নাস্তা করালেন ।
![]() |
NEHU Bus |
নেহুতে সবার সাথে |
![]() |
নেহুতে সবার সাথে |
সত্যি বলতে অল্প সময়েই সবার সাথে খুব আন্তরিকতা হয়ে গিয়েছিলো । সেই যে তাদের সাথে পরিচয় অদ্যবধি এখনো নিয়মিত কথা হয় ফেসবুকে । ইন্ডিয়াতে সবাই দেখি হোয়াটস এপ বেশি ব্যবহার করে আমাদের তুলনায় । সুতরাং এরা সবাই হোয়াটস এপেই বেশি এক্টিভ থাকে । এদের মধ্যে ২০২০ এর শুরুতে দুই আপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে ঢাকায় এসেছিলেন । তখন ফের আমরা তিন বন্ধু মিলে তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম । অনেকদিন পরে দেখা হওয়ায় খুব ভালো লেগেছিলো সত্যি বলতে । সেই অমলিন হাসিগুলো তেমনি রয়ে গেছে ।
যাহোক, আড্ডা শেষে ট্যাক্সি চেপে ফের চলে গেলাম শিলং শহরে । আমাদের আজকের ট্যাক্সি ভাড়া গেলো সর্বমোট ৩৩০০রুপী । সকাল ছয়টা থেকে রাত ৮ অবধি এই ট্যাক্সি আমাদের সাথে ছিলো । যাহোক, তাকে বিদায় করে দিয়ে খাইদাই করে হোটেলে ফিরে গেলাম । আর তো ভারতে থাকা চলে না । আজকে ১৯ তারিখ গেলো, ওইদিকে ২২ তারিখে ঈদ । যেভাবেই হোক ২১ তারিখে দেশের বাড়ি সিরাজগঞ্জ থাকতে হবে । সুতরাং আগামীকাল আমরা দেশে ফেরার প্ল্যান করে ঘুমিয়ে গেলাম ।
আজকের খরচঃ(১৯/০৮/১৮)
১। ট্যাক্সি ভাড়া = ১১০০/-
২। ওয়াহকাবা এন্ট্রি ফি = ১০/-
৩। এলিফ্যান্ট ফলস = ৩৩/-
৪। লাইটলুম ক্যানিয়ন = ১৭/-
৫। উমিয়াম লেক = ৫০/-
৬। সারাদিনের খাবার খরচ = ১৫৬/-
৭। হোটেল ভাড়া = ২৫০/-
.........................................................
মোটঃ ১৬১৬ রুপী (জনপ্রতি)
মেঘালয় সফরনামা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন