মেঘালয় সফরনামাঃ চতুর্থ পর্ব (চেরাপুঞ্জি)

 

মাউকডক ভ্যালী ভিউ পয়েন্ট 

সকাল সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হোটেল থেকে বাইরে চলে এলাম । স্ট্রিট ফুড দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারলাম তিনজন মিলে । লুচি জাতীয় কি যেনো খেয়েছিলাম । বেশ ভালোই লেগেছিলো খেতে । খেয়ে দেয়ে সেখানে থেকে আমাদের ট্যুরিস্ট বাসে গিয়ে উঠলাম । বাস আট টার দিকে মুভ করা শুরু করলো চেরাপুঞ্জি অভিমুখে । গত পর্বে এড করা চেরাপুঞ্জির ম্যাপটা আরেকবার দেখুন । ওই ম্যাপে উল্লেখ করা ৮ থেকে ১৪ নম্বরের স্থানগুলো দেখবো আজকে । 

আমাদের ট্যুরিস্ট বাস


মাউকডক ভ্যালী ভিউ পয়েন্ট (Mawkdok Dympep Valley View Point):
(১৮/০৮/১৮)

বাস চলা শুরু করলো । বাসে নানান বয়সী,পেশার মানুষ ছিলো । আমাদের পাশে একটা নেপালি পরিবার যাচ্ছিলো । পরিবারের কর্তা ব্যক্তিটি ইণ্ডিয়ান পুলিশে জব করার সুবাদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেঘালয়ে স্থায়ী হয়ে গেছেন । ভদ্রলোকের পিচ্চি একটা মেয়ে ছিলো । মেয়েটা এতো মিষ্টি যে খাতির না জমিয়ে পারলাম না । মেয়েটার নাম ছিলো Samvabie. কিছুক্ষণ লেগেছিলো আমার এই নাম উচ্চারণ শিখতেই । অল্পতেই বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো গোটা পরিবারের সাথেই । ট্রিপ শেষে পুলিশ ভদ্রলোক আমাদের নেপালে আমন্ত্রণ জানালেন ।  আমাদের ট্রিপ শুরু হলো ৮ নম্বরে উল্লিখিত মাউকডক ভ্যালী ভিউ পয়েন্ট দিয়েই । এখানে এসে আমাদের বাস অল্প কিছুক্ষণ দাঁড়ালো । জায়গাটা ভালোই । চারিদিকে পাহাড় আর মাঝখানে সবুজের গালিচা । 

মাউকডল ভ্যালী ভিউ পয়েন্ট 

Samvabie এর সাথে আমি 
এখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি শেষে বাস আমাদের নিয়ে যায় রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে । আমি এই স্থানটার নাম আলাদা করে উল্লেখ করলাম না । স্পিরিচুয়াল ফিলিংস ছাড়া এখানে ঘুরতে যাওয়াটা আমার কাছে সময় নষ্ট বলে মনে হয়েছে । এই আশ্রমে কিছুই নেই দেখার মতো । 


নোহকালিকাই ফলস (Nohkalikai Falls,Meghalaya):

এই নামটাও এমন যে ইংরেজি বানান দেখে অনেক বাংলাদেশী শুরুতে ভাবে এটা বুঝি নোয়াখালী ফলস । হা হা হা... আসলেই তা না । যাহোক আমাদের পরবর্তী গন্তব্য নোহকালিকাই ফলসের কাছে যখন এসে পৌঁছাই তখন পৌনে বারোটা বাজে । জনপ্রতি ২০ রুপী হারে টিকিট কাটতে হলো । এসে দেখি এই ঝর্ণা পুরোটা মেঘে ঢাকা । ঝর্ণার কিছুই দেখা যাচ্ছে না । মনটাই খারাপ হয়ে গেলো । এতো নাম শুনেছি... দেখতে না পারলে আফসোস রয়ে যাবে । মেঘের সরে যাবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । একটু পরেই মেঘ সরে গেলে পরিষ্কার ঝর্ণার দেখা মিললো । পরবর্তীতে জানতে পেরেছি বর্ষায় ওখানে গিয়ে সাথে সাথেই এই ঝর্ণার দেখা পায় এমন ভাগ্যবানের সংখ্যা নিতান্তই কম । সারাক্ষণ মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলায় ব্যস্ত এই ঝর্ণা । এই ঝর্ণার উচ্চতা প্রায় ১১২০ ফুট যা ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ plunge জলপ্রপাত । এরমানে হলো ১১২০ ফিট উচ্চতা থেকে পানি কোথাও বাড়ি না খেয়ে সরাসরি নীচে আছড়ে পড়ে । 

নোহকালিকাই ফলস 

জনশ্রুতি আছে যে, নোহকালিকাই ঝর্নার কাছের একটি গ্রামের এক বাসিন্দা ছিলো যার নাম ছিল লিকাই এবং সে পেশায় ছিলো কুলি(porter)। হঠাৎ একদিন সিলেটে যাবার সময় সে মারা যায়। তার স্ত্রী (যার নাম কালিকাই) ও কন্যা সন্তান তার মৃত্যুতে একা হয়ে পরে এবং জীবিকার খাতিরে তার স্ত্রীকেও কুলির কাজ বেছে নিতে হয়। পরবর্তীতে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে কিন্তু তার কাজের কারণে পরের স্বামীকে খুব বেশি সময় দিতে পারত না। বাসায় যতটা সময় থাকত তার সন্তানকে বেশি সময় দিত। দ্বিতীয় স্বামী এতে হিংসায় ক্ষিপ্ত হয়ে একদিন কালিকাই কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তার মেয়েকে খুন করে এবং মেয়ের মাংস রান্না করে রাখে। কাজ শেষে ঘরে ফেরার পর ক্লান্ত কালিকাই বাসায় কাউকে পায় না । ক্ষুধার্ত কালিকাই ঘরে থাকা সেই রান্না করা মাংস খেয়ে নেয়। খাবার পর পান খাবার অভ্যাস বশত কালিকাই সুপারি কাটার যন্ত্রের পাশে গিয়েই মানুষের কাটা আঙ্গুল দেখতে পায়। নিজের অবর্তমানে সন্তানের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বুঝতে পেরে উন্মাদ হয়ে যায় সে। সুপারি কাটার যন্ত্র নিয়ে চিৎকার করতে করতে দৌঁড়ে গিয়ে এই ঝর্নার উপর থেকে লাফ দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এর থেকেই এই ঝর্নার নাম হয়ে যায় নোহকালিকাই ।(খাসিয়া ভাষায় 'নোহ 'মানে লাফ দেয়া)।
এই গল্পটা ঝর্ণার পাশেই একটা সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ।


মৌসিমাই কেভ (Mawsmai Cave):

বিখ্যাত এই নোয়াখালী ফলস দেখা শেষ করে চলে গেলাম মৌসিমাই গুহায় । গুহা বলতে এর আগে শুধুমাত্র আলুটিলা গুহা দেখেছি । এবার দ্বিতীয় কোন গুহায় যাচ্ছি । এখানেও জনপ্রতি ২০ রুপী করে এন্ট্রি ফি দিতে হলো । ক্যামেরার জন্য আলাদা ফি লাগে সব জায়গায়, মোবাইলের জন্য লাগেনা । আমরা ডিএসএলআর ব্যাগে নিয়ে মোবাইল দিয়েই ফটো তুলেছি । ভারতে বেড়াতে গিয়ে অসংখ্য জায়গায় দেখেছি এরকম যে ক্যামেরার জন্য আলাদা চার্জ করে । বাংলাদেশে এমনটা কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। আর অনেক জায়গাতেই ফরেইনারদের এন্ট্রি ফি ন্যাটিভদের চেয়ে অনেক বেশি । তাই কোথাও এন্ট্রি করার সময় বেশি কথা না বলে নরমাল থেকে খুচরা রুপী দিয়ে কম কথায় টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে যাবেন । 

মৌসিমাই কেভ

মৌসিমাই কেভ

মৌসিমাই কেভ

মৌসিমাই কেভ দেখতে আগত দর্শনার্থীদের গাড়িবহর

গুহা দেখা শেষে তিন বন্ধু

 আলুটিলাই বেশি ন্যাচারাল লেগেছে আমার কাছে সত্যি বলতে । অনেক আগে সেই ২০১২ সালে যখন প্রথম আলুটিলায় যাই তখন আলুটিলা ক্রস করার একমাত্র মাধ্যম ছিলো মশাল । এখন ১০ জনের গ্রুপে দুইটা মশাল নেয় স্রেফ হাত বদল করে ভাব ধরে ফটো তোলার জন্য । নরমালি মোবাইলের লাইট দিয়েই গুহা পার করে সবাই । মশালে যে ন্যাচারাল ফ্লেভার পাওয়া যায়, মোবাইলের লাইটে তা মেলেনা সত্যি বলতে । আর সেখানে এই মৌসিমাইতে দেখি ভেতরে পুরো এনার্জি লাইট লাগিয়ে দিয়েছে । মশাল তো দূরের কথা, মোবাইলের লাইটও লাগেনা । গুহার ভেতরে যেসব পয়েন্টে মানুষের কষ্ট হতে পারে সেসব জায়গায় সিঁড়ি এবং সাঁকো করে দিয়েছে । শিশু, বৃদ্ধ সবার জন্য উপযোগী করার চেষ্টা করেছে । হয়তো ইজি এক্সেসিবল হয়েছে সত্য, কিন্তু এতে করে ন্যাচারাল ফ্লেভার টা কমে গিয়েছে অনেক । 

সেভেন সিস্টারস ফলস (Seven Sisters Falls):

এর স্থানীয় নাম হলো Nohsngithiang Falls or Mawsmai Falls. এর উচ্চারণ কি হয় জানিনা । আপনারা সিলেবাল ভাগ করে ট্রাই করে দেখতে পারেন । যাহোক মৌসিমাই কেভ থেকে বেড়িয়ে চলে এলাম অনেক বেশি পরিচিত এই সাতবোন ঝর্ণার কাছে । দেখে মনে হলো এটা একটা ওভাররেটেড ঝর্ণা । এতো দূরে থেকে দেখতে হয় বলে এতো ছোট আর ঝাপসা লাগে যে ঝর্ণার সেই মাদকতা ঠিক আসেনা । কোন উন্মত্ততা কাজ করেনা । নোয়াখালী ফলস টাও অনেকটা সেরকমই । এতো দূরে থেকে দেখতে গিয়ে মনে হচ্ছিলো যেনো সবাই এতো নাম বলে তাই দেখা দরকার ছিলো, দেখে গেলাম । দ্যাটস ইট । অথচ এই দুইটা ঝর্ণাই সর্বাধিক পরিচিত বলা চলে । 
আমার কাছে ঝর্ণা দেখা মানে হলো সেখানে গিয়ে গোসল করা । সীমাবদ্ধতা থাকলে অন্তত এতোটা কাছে যেনো যেতে পারি যেখানে থেকে ঝর্ণার পানির ছিটেফোঁটা গায়ে লাগে । অন্ততপক্ষে পানি পতনের অনিন্দ্য সুন্দর আওয়াজটা যেনো কর্ণকুহরে প্রবেশ করে । এসব কিছুই না হলে শুধু অনেক দূরে থেকে ওই দেখা যায় ঝর্ণা ... এটা কিছু হলো নাকি ! আবার মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলার কারণে অনেক সময়ই মেঘের আড়ালে ঢাকা থাকে অথবা ঝাপসা হয়ে থাকে ঝর্ণা । তবে একটা জিনিস বলে রাখি । ট্রেকিং করে এই ঝর্ণাগুলোর একদম কাছে যাওয়া যায় । কেবলমাত্র সেক্ষেত্রেই আমি বলবো এই ঝর্ণা দেখাটা সার্থক হয়েছে । কে জানে হয়তো এটাই আপনার জীবনের সেরা এক্সপেরিয়েন্স হতে পারে ! আপনাদের কারো ট্রেকিং এর আগ্রহ থাকলে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে যাবেন । 
আরেকটা কথা বলে রাখি । এইযে ঝর্ণার আশেপাশের দৃশ্য তথা মেঘ আর ঝর্ণার লুকোচুরি খেলা ... এই দৃশ্যগুলোও কিন্তু দারুণ সুন্দর । কিন্তু আপনার ব্রেন আপনাকে অনবরত মূল ফোকাস হিসেবে শুধুমাত্র ঝর্ণা দেখার দিকে সিগনাল দেয়ার কারণে আপনার কাছে তখন বাকি দৃশ্যগুলো গুরুত্ব হারায় । উপরন্তু সবার হাতেই লিমিটেড টাইম থাকে এসব দেখার জন্য । 

সেভেন সিস্টার্স ফলস

সেভেন সিস্টার ফলসের দর্শনার্থীবৃন্দ 

থাংখারাং পার্ক (Thangkharang Park):

সেভেন সিস্টার দেখে কিছুক্ষণ পরে চলে এলাম থাংখারাং পার্কে । সুন্দর প্রাকৃতিক একটা জায়গা । পার্ক থেকে যত দূরে দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর মেঘ । কিছু ফুলগাছও রয়েছে এখানে । সবমিলিয়ে সুন্দর একটা পার্ক । কিন্তু সুন্দরের সমুদ্রে দাঁড়িয়ে এটাকে সিম্পলি অর্ডিনারি বলা ছাড়া আমার কাছে আর কোন শব্দ নেই সত্যি বলতে । এখানে এন্ট্রি ফি ছিলো ১০ রুপী জনপ্রতি । 

থাংখারাং পার্ক 

পার্কের বাইরের দৃশ্য 

থাংখারাং পার্ক


মটরপ (Khoh Ramhah / Motrop / Giant Conical Rock / Pillar Rock):

এটাকে বাংলাদেশ ভিউ পয়েন্টও বলা হয় । এখানে থেকে সিলেট দেখা যায় । একটা বিশাল পাথর রয়েছে এখানে । স্থানীয়রা একে "Evil Spirit" হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে । এর চারিদিকে খুব সুন্দর দৃশ্য ছিলো । থাংখারাং পার্ক থেকে এখানে এসে কিছু সময় ঘোরাঘুরি করি । 
Giant Conical Rock

এর পাশেই রয়েছে এই স্রোতধারা

রকের পাশের দৃশ্য 

ইকো পার্ক (Eco Park): 

মটরপ ঘুরে যখন ইকোপার্কে পৌঁছাই তখন প্রায় আড়াইটার মতো বাজে । এখানে ঢুকতে জনপ্রতি ১০ রুপী করে এন্ট্রি ফি দিতে হলো । এখানেই লাঞ্চ ব্রেক ছিলো । সবাই যার যার মতো করে ঘোরাঘুরি-খাওয়াদাওয়া সেরে নিলো । আমরা তিন বন্ধু নিজেদের মতো করে এদিকে সেদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম । আজকে সত্যি বলতে বেশ গরম পড়েছিলো চারিদিকে । গরমে আর কিছুই ভালো লাগছিলো না । সারাদিন বৃষ্টির দেখা নেই । এখন শুধু ফিরে যাবার জন্য অপেক্ষা । আজকের ট্রিপের শেষ গন্তব্যস্থল ছিলো এই ইকো পার্ক । 

Missing Falls, Eco park

Eco Park

Eco Park

ঘণ্টাখানেক অলস সময় কাটিয়ে বাসে উঠে বসলাম । সাড়ে তিনটার দিকে বাস ছেড়ে গেলো শিলং অভিমুখে । শিলং গিয়ে যখন পৌঁছাই তখন ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটার মতো বাজে । 


North Eastern Hill University(NEHU):

এখনো দিনের অনেকটা সময় বাকি রয়েছে । সময়টা নষ্ট না করে কি করা যায় তিনজনে ভাবছিলাম । যেকোন নতুন জায়গায় বেড়াতে গেলে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘুরে দেখার একটা আগ্রহ কাজ করে আমার । সুতরাং ঠিক করলাম আজকের বিকালটা শিলং-এ অবস্থিত নর্থ-ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটিতে(নেহু) ঘুরে কাটাবো । ব্যস হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ট্যাক্সি ধরে চলে গেলাম নেহুতে । তখনো দিনের আলো পুরোপুরি তিরোহিত হয়নি । 

ভার্সিটির গেটে নেমেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম । কি সুন্দর একটা বিশ্ববিদ্যালয় ! চারিদিকে এতো সব গাছগাছালি আর অদূরেই রয়েছে পাহাড় । সবমিলিয়ে খুবই সুন্দর একটা পরিবেশ চারিদিকে । মনে মনে ভাবছিলাম ইশ এমন একটা ইউনিভার্সিটিতে যদি পড়তে পারতাম । প্রকৃতি দেখেই চারবছর কাটিয়ে দিতাম । আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে এই ক্যাম্পাস টা । যদিও বেশিক্ষণ ঘুরতে পারিনি , কারণ ক্যাম্পাসে ঢোকার আধাঘণ্টার মধ্যেই দিনের আলো নিভে সন্ধ্যার বাতি জ্বলে উঠেছে রাস্তায় রাস্তায় । মানুষের সমাগমও কমে গেছে অনেক । 
ক্যাম্পাসের অপজিটের দৃশ্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ

তিন বন্ধু হাঁটতে হাঁটতে একটা টি-স্টলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম । দেখি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা গ্রুপ আড্ডা দিচ্ছে । তাদের কাছে গিয়ে নিজেদের পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলাম । ব্যস নতুন আড্ডা শুরু হলো । তারা এতোটা আন্তরিক হবে আইডিয়া ছিলো না । সেই সন্ধ্যা বেলাতেই আলো-আঁধারিতে আমাদের তিনজনকে নিয়ে তারা ক্যাম্পাস ঘুরে দেখানো শুরু করলেন । তবে বেশিক্ষণ আড্ডা দিতে পারলাম না । কারণ রাত আট টার পরে শিলং এর ট্যাক্সি পাওয়া কষ্ট হয়ে যায় । জায়গাটাও এমন যে রাত আট টার পরে জন মানুষ চোখে পরে না । চারিদিকে নীরব হয়ে যায় । তাই আজকের মতো চলে যেতে হলো । যাবার পূর্বে সবার ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি আদান-প্রদান হলো । আগামীকাল আবার ক্যাম্পাসে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তবেই আমরা শিলং ফেরার অনুমতি পেলাম । অনেক আন্তরিক ছিলেন তারা সত্যি বলতে । অসম্ভব ভালো লেগেছে । এক ঘণ্টার পরিচয়ে মনে হচ্ছিলো যেনো কতদিনের চেনাজানা ।  

শিলং ফিরে এসে মনে হচ্ছিলো মেঘালয় সফরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হওয়া উচিত ছিলো এই ক্যাম্পাস টা । কিন্তু কেনো যেনো কারো কাছেই এই ক্যাম্পাস নিয়ে খুব একটা শুনিনি । নিজ তাগিদে খুঁজে বের করেছিলাম । আপনারা শিলং বেড়াতে গেলে ডে ট্রিপে ট্রেডিশনাল স্পটগুলো স্কিপ করে পারলে নেহুতে যাবেন । আশা করি ভালো লাগবে । 

আগামীকাল রবিবার । মেঘালয়ের ছুটির দিন । এই দিনে ট্যাক্সি পাওয়া ঝামেলা হয়ে যায় । তাই পুলিশ বাজারে গিয়েই একটা ট্যাক্সি রিজার্ভ করলাম আগে । উদ্দেশ্য চেরাপুঞ্জি এবং শিলং ট্রিপ । এরপরে রাতের খাওয়া শেষ করে হোটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম । 


আজকের খরচঃ(১৮/০৮/১৮)

১। ট্যুরিস্ট বাস = ৩৫০/-
২। নোহকালিকাই ফলস = ২০/-
৩। মোসিমাই কেভ = ২০/-
৪। থাংখারাং পার্ক = ১০/- 
৫। ইকোপার্ক = ১০/- 
৬। নেহু আপডাউন = ১৫০/- 
৭। সারাদিনের খাবার খরচ = ২০০/- 
৮। হোটেল ভাড়া = ২৫০/- 
............................................................
মোটঃ ১০১০ রুপী (জনপ্রতি) 


মন্তব্যসমূহ

  1. Why don't you start a channel? These could be nice contents.Hopefully, you would be more inspired as well as energised to travell more when people views,thumps up and leaves nice comments.

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কম খরচে কাশ্মীর-লাদাখ-মানালি ভ্রমণ

১০৫০ টাকায় ঢাকা থেকে চারদিনের রাজশাহী+নওগাঁ সফর

একাদশ পর্বঃ ১২,৮২৭ টাকায় ১২ দিনে ঢাকা থেকে কাশ্মীর ভ্রমণ (বিশেষ পর্ব)